জ্বালানী তৈল বিক্রির অনুমোদন ও লাইসেন্স থাকা দরকার

সম্পাদকীয় …

অনুমোদন ছাড়া জ্বালানী তৈল বিক্রি আইন অমান্য করা। আর যারা আইন অমান্য করে বিপদের তাদেরই আসে। কোনো বিষয়ে আইন হওয়া মানেই সরকারি নির্দেশনা। সেই সাথে জনগণের স্বার্থেই সেই আইন হয়ে থাকে। সুতরাং সেই স্বার্থকে রক্ষা সকলেরই দায়িত্ব। কিন্তু আইন অমান্য করে যারা জ্বালানী তৈল বিক্রি করছে তাদের আইনের অবাধ্যতার জন্যে শাস্তি হওয়া উচিত।

প্রিয় সময়ে ‘চাঁদপুরে যত্রতত্র অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে জ্বালানী তৈল : বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের আমরা জানতে পেরেছি যত্রতত্র আইনের অমান্য করে জ্বালানী তৈল বিক্রি করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো, দেখার মতো সত্যিই কেউ নেই। যদি দেখার মতো কেউ না থাকে তাহলে তো এমন অন্যায় হতেই থাকবে। আর বিপদ আসার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছি।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে মনে হচ্ছে, প্রকাশ্যে জ্বালানী তৈল বিক্রি করে তারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিরা আইনের তোয়াক্কা করছে না মোটেও, অথবা জ্বালানী তৈল বিক্রির জন্যে যে আইন রয়েছে সেটাও হয়তো তারা জানেই না। কেননা সেভাবে কেউ মনিটরিংও করে তাদের সতর্কও করেনি হয়তো। যদি আইনবিরুদ্ধ কাজ হয়ে থাকে তাহলে তো তারা আইন অমান্যের কারণে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। সুতরাং দেখার মতো কেউ নেই হয়তো-সেটা সকলে বলতেই পারে!

আমরা জানতে পারলাম, চাঁদপুর জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে জ্বালানী তৈল। জ্বালানী তৈল বিক্রির জন্যে অনুমোদন লাগে। কিন্তু অনুমোদন না নিয়েই অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে জ্বালানী তৈল। আমরা জানি, পেট্রোল, অকটেন, ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানী তেল খুবই বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ। যে কোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে। এক্ষুণি কোনো ব্যবস্থা না নিলে অফুরন্ত ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে; যে ক্ষতিপূরণ আমরা করতে পারবো না কোনোদিন।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, ‘চাঁদপুর জেলা শহরের ওয়্যারলেস রেলগেইট, পুরান বাজার, গাছ তলা, বাগাদী চৌরাস্তা, বাগড়া বাজার, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর, বালিয়া, ফরাক্কাবাদ, রঘুনাথপুর, ঢালীরঘাট, সফরমালী, কল্যান্দীসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার ও রাস্তার দু’পাশে গড়ে উঠেছে শত শত জ্বালানী তৈল পেট্রোল ও অকটেনের দোকান।’

ভাবতেই অবাক লাগে যে, দেখার মতো কেউ নেই! কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা খোলা বাজারে জ¦ালানী তৈল বিক্রি করে দু:সাহসের পরিচয় দিয়ে চলেছেন। আমরা জানি অনেক সতর্কতার সাথে এসব দাহ্য জিনিস বিক্রি করতে হয়। অথচ এসব জ্বালানী তৈল কাপড় দোকান, চা, মুদি, রড, সিমেন্টের দোকানগুলোতেও ব্যবসার জন্যে জায়গা করে নিয়েছে।

একটু বাড়তি পয়সা রোজগারের আশায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ড্রামে করে তৈল এনে বিপজ্জনকভাবে বিক্রি করছেন দিনের পর দিন। তাতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। চাঁদপুরবাসী ভুলে যায়নি ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা। চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে তেলবাহী লরি ও তেলের গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছিলো।

সেই ঘটনায় মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান (৫০), বাদশা (৪৫), মাসুদ (২৮), রায়হান (২৩), নুর মোহাম্মদ (২১), ফায়ার সার্ভিস কর্মী মজুমদার খোকন (৪০) সহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এতবড় ভয়াবহ ঘটনার পরেও কি আমরা সতর্ক হতে পারি না! আমাদের চেতনা কি জেগে উঠবে না? নাকি আমরা আবারো কোনো ঘটনার জন্যে অপেক্ষা করছি?

আমরা জানি, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ করে যেখানে বাড়িঘর রয়েছে সেখানে জ্বালানী তেল বিক্রি নিষিদ্ধ। অথবা সেই নিষেধাজ্ঞা মানছে না বিক্রেতারা। একমাত্র আইনই পারে এভাবে জ¦ালানী তৈল বিক্রি বন্ধ করতে।

আমরা জানি, জ্বালানী তৈলের ব্যবসা করতে অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। যেহেতু বছরের পর বছর অবৈধভাবে জ্বালানী তৈল বিক্রি হয়েছে, সেহেতু এসব অবৈধ ব্যবসা বন্ধে প্রশাসন এবং নিদিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না। সুতরাং যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ১২ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৯ সফর ১৪৪২ হিজরি, রোববার