ভাসমান বেডে সবজি চাষে কৃষকদের সফলতা

সম্পাদকীয়…

যে পরিমাণ মানুষ বাড়ছে সেই অনুযায়ী চাষাবাদের জমি বাড়ছে না। অথচ মানুষের খাদ্যের যোগান দিতে হলে চাষাবাদের প্রতি অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারবো যে, ধীরে ধীরে আমাদের চাষের জমির পরিমাণ কমেই যাচ্ছে। আজ যেখানে সুবজ শস্য শোভা পাচ্ছে, হয়তো ঠিক কয়েক মাস পরেই সেখানে বসতভিটা তৈরি হচ্ছে।

কেননা বসতভিটা তৈরি না করলেও কোনো উপায় নেই মানুষকে। কেননা থাকার জন্যে বসতভিটা তৈরি করতেই হবে। কিন্তু বসতভিটার জন্যে চাষাবাদের জমিই মানুষকে বাধ্য হয়ে বেছে নিতে হয়। এতে চাষাবাদের জমি ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় মানুষের খাদ্যের দিক থেকেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। সেদিকটি চিন্তা করলে আমাদের খাদ্যের জন্যে আগামী দিনগুলোতে খুবই কষ্ট পেতে হবে। অতএব, মানুষের খাদ্যের যোগান দিতে হলে, কোনো জায়গাই চাষাবাদ ছাড়া বাকি রাখা উচিত নয়। মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি, খাদ্যের চাহিদাও মানুষকে পূরণ করতে হলে বসতভিটাতেও সবজি চাষ করতেই হবে।

এটি একটি নতুন চিন্তাধারা যে, ভাসমান বেড তৈরি করে সেখানে চাষাবাদ করা। এতে করে মানুষের মাছ চাষের পাশাপাশি সবজিও ভালো চাষাবাদ করা সম্ভব। প্রিয় সময়ে ‘ফরিদগঞ্জে ভাসমান বেডে কৃষকরা শীত-বর্ষায় সবজি চাষে সফল’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি সেখানকার বেশ কিছু কৃষক এভাবে চাষাবাদ করে সফল হয়েছে। এতে আমরা বুঝতে পারি যে, আশাতীত সফলতা অর্জন হয়েছে কৃষকদের। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ভাসমান বেডে শীত- বর্ষায় সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে কৃষকরা ব্যাপক সুফল পেতে শুরু করছে। এই পদ্ধতিটাও অতি চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন। আর সেই সব সফল কৃষকদের কার্যক্রম অনুকরণযোগ্য। কৃষক ও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় ভাসমান বেডে কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি ও চারা উৎপাদণের মাধ্যমে কৃষকরা বেশ লাভবান হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

অবশ্য যেসব জায়গায় বর্ষা মৌসুমে নিচু জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায় সেখানে জমি চাষাবাদ করে ফসল ফলানো কষ্টকর। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে জমিকে পরিত্যক্ত না রেখে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারলে সফলতা অর্জন করা যায়। অপরদিকে চারিদিকে পানি থাকায় তখন কৃষদের তেমন কাজ থাকে না। বর্ষার ভরা মৌসুমে যখন শাক সবজির আকাল থাকে, তখন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষক পরিবার নিজেদের কর্মসৃজন ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে বাজারে অধিক লাভে সবজি ও চারা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।

যা’ আমরা বাস্তবে জানতে পেরেছি ফরিদগঞ্জের কৃষকদের কার্যক্রমের মাধ্যমে। অবশ্য আমাদের দেশের যেসব এলাকায় বর্ষাকালে বছরের বড় একটা সময় পানিতে তলিয়ে থাকে চাষাবাদের জমিগুলো। তখন ভাসমান পদ্ধতিতে কচুরিপানার সাহায্যে ভাসমান বেড তৈরি করা যায়। আর এতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না হওয়ায় বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষকরা ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া এতে অধিক লাভেরও সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, ‘বর্তমানে ফরিদগঞ্জের সেকদি এলাকা ও বাঘপুর এলাকায় ১৫/২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ২‘শতাধিক ভাসমান বেড তৈরি করে বেডে সবজি চাষ চলছে। এ বেডগুলোতে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, কলমী শাক, লাল শাক, শসা, ডাটা শাক ও ধনিয়া পাতা আবাদ করা হয়েছে। পাশাপশি বেডগুলোতে এ সকল সবজির চারা উৎপাদন করে বাজারগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে। ভাসমান পদ্ধতিতে আগের তুলনায় এখন বেশি লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।

আমরা মনে করি, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আরো অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারলে এলাকার কৃষকরা এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে সাহস পাবে। তবে অবশ্য এ বিষয়ে তাদেরকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য দিকে সহযোগিতা করা যেতে পারে। কেননা ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ করতে পারলে এর চাহিদাও বেশি থাকে। ভাসমান বেডে সবজি চাষ করলে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভাসমান্য পদ্ধতি পরিশেব বান্ধব একটি চাষ পদ্ধতিও বটে।

আমরা সাধুবাদ জানাই, ফরিদগঞ্জের কৃষকদের। তারা নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এলাকার তথা দেশের চাহিদা পূরণেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে কৃষকদের সাহায্যের জন্যে পরিকল্পনা করা উচিত বলে মনে করছি। তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে ও দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে বিশেষ রাখতে পারবে কৃষকরা।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

২৪ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. ০৮ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, শনিবার