প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা!

সম্পাদকীয়

উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা একেবারে নতুন নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। অবশ্য প্রেমের সম্পর্কে শহরে সবচেয়ে বেশি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে গ্রামের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যেও কোনো অংশে কম হচ্ছে না। তবে শহরে যতটা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা হয়, গ্রামের পরিবেশে কিন্তু উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রেমের সম্পর্কে মোটেও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা হয় না। এ নিয়ে অনেক শালিস দরবার হয়, মারামারি হয়, এমনকি খুনও পর্যন্ত হচ্ছে। আর এ ধরনের ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে ঘাঁটাঘাঁটি হয় সম্ভবত গ্রামেই! এর কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ না থাকলেও আমরা বলতে পারি যে, গ্রামের সামাজিক ব্যবস্থা এ ধরনের ঘটনাকে মেনে নিতে পারে না।

প্রিয় সময়ে ‘টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে একই রশিতে ঝুলছিল প্রেমিক-প্রেমিকার লাশ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মর্মান্তিক একটি ঘটনার কথা। প্রেমিক যুগল একই রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমরা পরকীয়া প্রেম কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না; মেনে নেয়ার যৌক্তিকতাও নেই। তবে একদিকে তাদের যুক্তিতে তাদের প্রেম সঠিক বলে মনে করা; অন্যদিকে সমাজ ব্যবস্থায় অন্যায় বা দোষ বলাটাই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই দুই দ্বন্দ্বের মাঝে দু’টি মনের প্রেম টিকে থাকতে পারে না। ফলে তারা দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যা করেছে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, সেই দুই প্রেমিক-প্রেমিকা একই রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতীর উপজেলার রাজাফৈর পল্পনপাড়া এলাকায়। তাদের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার পুলিশ করেছে।নিহতরা হলেন- উপজেলা রাজাফৈর পল্পনপাড়া এলাকার আলেয়া (৩৯) এবং শাহ্জাহান (৩৫)। দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বলে আমরা জানতে পেরেছি; এমনকি তারা বিয়েও করেছিলেন। অভিমান করে তারা একই রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

আমরা জানতে পেরেছি যে, অভিমান করেই তারা দু’জন আত্মহত্যা করেছে। তবে সেই অভিমানের কারণ আমরা জানতে পারিনি। কিন্তু আমরা সকলেই জানি যে, আত্মহত্যা মহাপাপ। এটা সকল ধর্মেরই কথা। তাছাড়া এই দু’টি প্রাণের আত্মহত্যার কারণে যেমন এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, তেমনি ঐ দু’টি পরিবারের মধ্যেও চলছে শোকের মাতম। যদি দু’টি প্রাণের সন্তানাদি থেকে থাকে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে! অবশ্য এসব বিষয় তারা মোটেও ভাবে না। ফলে ভবিষ্যতে মা অথবা বাবার প্রতি সন্তানদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সন্তানদের মনে যে কষ্টের জন্ম দেয়, সে কষ্ট সন্তানরা কোনোদিনও ভুলতে পারে না। মা-বাবার প্রতি তাদের মনে ঘৃণা জন্মায়। এভাবেই আমাদের সমাজ দিনে দিনে কলুষিত হচ্ছে। সুতরাং আমরা মনে করি, আত্মহত্যা মোটেও কোনো সমাধান হতে পারে না। হয়তো আত্মহত্যার মাধ্যমে নিজেকে শেষ করে দেয়া যায় ঠিকই, কিন্তু মা বাবা ও আত্মীয়স্বজনের মনে যে কষ্ট দেয়া হয় সেই কষ্ট থেকে কোনোদিন তারা সেই কষ্ট ভুলতে পারে না।