গাছ কেটে শত্রুতা উদ্ধার!

সম্পাদকীয়

গাছ কার উপকার করে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলবো, সবার উপকার। অর্থাৎ গাছ কার সাথে কার শত্রুতা আছে সেটা বোঝে না। গাছটি যে লাগিয়েছে বা যে তার যতœ নিয়েছে শুধুমাত্র তারই উপকার করে এমন নয়, গাছটি সকলেরই উপকার করে। গাছ আমাদের সকলকেই অক্সিজেন দেয়, ফল দেয়, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সুতরাং সেদিকটি চিন্তা করলে গাছের ক্ষতি করা কারোরই উচিত নয়। মানুষের সাথে মানুষের শত্রুতা থাকলে গোপনে গাছ কেটে ফেলা বোকা ছাড়া আর কিছুই নয়, বড়ই হাস্যকর ও নির্বুদ্ধিতারই পরিচয়! কিন্তু আমরা মানুষ এতোই বোকা যে, গাছের ক্ষতি করে আমার মনের যন্ত্রণা দূর করতে চাই।

প্রিয় সময়ে ‘মতলব দক্ষিণে বিধবার প্রায় ৩০টি গাছ কেটে শত্রুতা উদ্ধার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মানুষের বোকামির বহি:প্রকাশ! বড়ই কষ্টকর ঘটনাটি। হয়তো বিধবার গাছগুলো বেঁচে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক উপকৃত হতে পারতেন। কিন্তু ঐ গাছের জন্যে আমাদের পরিবেশের অনেক উপকারই হতো। গাছ সকলকে ছায়া দিতো, যদি ফল দিতো, তাহলে মানুষের ফলের চাহিদা পূরণ হতো, সকলকে বেঁচে থাকার জন্যে অক্সিজেন বিলিয়ে দিতো, সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতো প্রতিটি মানুষের মনে। কিন্তু সেটি হয়ে উঠলো না। বিধবার দেশীয় ফলজ ও বনজ প্রজাতির প্রায় ৩০টি গাছ কেটে ফেলা বড়ই দুঃখজনক। এর মাধ্যমে গায়ের জালা মেটানো এবং শত্রুতাবশত মনে শান্তি অনুভব করা কতোটাই না লজ্জাজনক বিষয়। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় ৯৯৯ ফোন করে বিধবা ও তার মেয়েকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, শত্রুতার আক্রোশ ভয়াবহ ছিলো। প্রায় ১৫/২০ জন ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে সেই বিধবার ফলজ ও বনজ প্রজাতির প্রায় ৩০টি গাছ জোরপূর্বক কেটে ফেলে। বিধবার গাছের প্রতি মায়া ছিলো। তাই বাধা দিতে ছুটে আসে সেই বিধবা। এতে শত্রুরা আরো বেশি ক্ষিতপ্ত হয়ে উঠে। তখন তাকে ও তার মেয়েকে মারধর করে। বুদ্ধিপূর্বক সেই বিধবার মেয়ে কলেজ ছাত্রী রুবি আক্তার ৯৯৯ তে ফোন করলে মতলব দক্ষিণ থানার পুলিশ তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

সেই বিধবা তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। আর আমাদের দাবি হলো, গাছ যেই লাগিয়ে থাকুক না কেনো, শত্রুতা করে গাছ কাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়, এটা বড়ই বোকামী। এটা অনৈতিক কর্মকা- বটে। আমাদের এই শিক্ষা দরকার যে, কারো সাথে শত্রুতা হলেও গাছের সাথে যেন আমরা শত্রুতা না করি। গাছকে আমরা বেড়ে উঠতে দেবো এবং গাছের যতœ নেবো। হয়তো গাছ কেটে ফেলাতে তেমন শাস্তি কারো হবে না; কিন্তু গাছের ক্ষতি হওয়াতে পরিবেশের যে ক্ষতি হলো, এতো আমরা সকলেই শাস্তি ভোগ করবো প্রকৃতির নিয়মেই।

১০ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ২৫ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, মঙ্গলবার

আপডেট সময় : ১১:১৭ এএম