নোংরামীর সীমা ছাড়িয়ে গেছে!

সম্পাদকীয় …

মানুষের লজ্জা হলো মনুষ্যত্বের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। মনুষ্যত্বের গুণগুলোর মধ্যে লজ্জা অন্যতম। কেননা লজ্জা মনুষ্যত্বের নিয়ন্ত্রক। লজ্জা হারিয়ে গেলে মনুষ্যত্বের গুণগুলোর অধপতন হতে শুরু করে। লজ্জা না থাকলে মানবতারও স্খলন ঘটে।

তখন নির্লজ্জের মতো যে কোনো কাজই করতে পারে, যা সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, ধর্মীয়ভাবেও অগ্রহণযোগ্য। কিছু নোংরা স্বভাবের মানুষ এমন কিছু করে যেটার জন্যে নিজের কোনো লজ্জা না থাকলেও অন্যেরা জানার পর লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। চারিদিকে ছি ছি রব ছড়িয়ে পড়ে।

অথচ যে লজ্জাহীনতার কাজ করে সে দিব্যি নির্লজ্জের মতো মুখ দেখিয়ে ঘুরতে পারে। তার বিবেকে একটু বাধে না। নীতি এটা বলে যে, এধরনের মানুষ হলো ক্ষমার অযোগ্য। তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হলেও কোনো সংশোধন হবে বলে মনে হয় না। উপরন্তু তারা কাছের মানুষেরও প্রাণনাশের কারণ হয়ে যেতে পারে। প্রিয় সময়ে ‘ছেলের স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় নিজের স্ত্রীকে হত্যা!’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি অবশ্যই লজ্জাজনক একটি ঘটনা।

সেই সাথে নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে না পেরে নিজেরই জীবনসঙ্গী স্ত্রীকে হত্যা করাটাতো মহাঅপরাধের মধ্যে পরে। এই ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে, আমরা কোন বিশ্রী ও জঘন্য সময়ে অবস্থান করছি।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, ‘-রংপুরের পীরগঞ্জে ছেলের স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্ত্রী পোশাগী বেগমকে (৫৫) হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।’ এ ঘটনাকে আমরা ছি ছি ছি বলতেই পারি। এসব ঘটনা জেনে আমাদের নতুন প্রজন্ম কী শিক্ষা গ্রহণ করছে সেটাই সবচেয়ে দুঃখজনক। এসব জঘনা থেকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আমরা রক্ষা করতে পারছি না। তারা এসব দেখে তাদের মনের মধ্যে গেঁথে রাখছে এবং পরবর্তীতে তারাও এমন দুঃসাহসিক কাজ যেন না করতে পারে সেজন্যে তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাহলে তারা নৈতিক শিক্ষা লাভ করবে।

নিজের ছেলের সন্তানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। সামাজিকভাবেও গ্রহণ করা যায় না। এটি লজ্জাজনক। সেই সাথে নৈতিকতার দিক থেকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে নিজের স্ত্রী বাধা হয়ে এসেছে। অথচ তাকেই শেষ পর্যন্ত জীবন দিতে হলো। আর নিজের স্ত্রীকে হত্যা করাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই দুষ্টু ও নষ্ট লোকটিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রত্যাশা সকলেরই। কেননা সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, ছেলে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকার সুযোগে শ্বশুর কফিল উদ্দিন তার পুত্রবধূ মনিরার সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এমন জঘন্য বিষয়ে একজন বয়স্ক ব্যক্তি কেনো জড়িত হলো?

তাছাড়া পুত্রবধুই বা কেনো একে বাধা দিলো না?-সেটাও একটা প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় কথা হলো এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিশে ঘটনার সত্যতা স্বীকারও করেন। তাছাড়া এ ব্যাপারে ছেলে রুহুলকে তার মা পোশাগী বেগমসহ প্রতিবেশীরা অবগত করলেও তিনি তার বাবার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এটাও একটা রহস্য থেকে যায় বলে মনে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দুর্বলতাই বা কোথায়! তা আমরা জানি না। এমন লজ্জাজনক ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলতে দেয়া হলো কেনো? কেননা সমাজের লোকজনক বেশ কয়েকবার শালিস বিচারও করেছে, সুতরাং এর সাথে জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনা যেতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো এই ঘটনার জন্যে একজন ব্যক্তিরও মৃত্যু হয়েছে। তার স্ত্রী অনেকটা বাধ্য হয়েই এই পরকীয়ায় বাধা দিয়েছেন। কেননা গত ২৭ মে গভীর রাতে কফিল তার পুত্রবধূর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এটা স্পষ্ট যে, নোংরামীর সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আর তখনই শাশুড়ি পোশাগী বেগম তাদের দু’জনকে হাতে নাতে ধরে ফেলেন। বাধা দেয়ার কারণে কফিল তার স্ত্রী পোশাগীকে এলোপাথাড়ি মারধর করলে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতেই বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পোশাগী বেগম মারা যান। এ ঘটনায় পোশাগীর বড় ভাই মীর মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে তার ভগ্নীপতি কফিল, ভাগনে বউ মনিরা ও ভাগনে রুহুলকে আসামি করে পীরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এখন আইন তাদের কীভাবে শাস্তি দেবে সেটাই দেখার বিষয়।

তবে কথা হলো, আমাদের সমাজে নৈতিক শিক্ষার দারুণ অভাব দেখা যাচ্ছে। যদি ঐ পরিবারটি ভালো শিক্ষা পেতো তাহলে এভাবে নির্লজ্জের মতো কাÐ করতো না। ধর্মীয় বিরোধী ও সমাজ বিরোধী এমন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত হতো না। প্রকৃতপক্ষে নৈতিক শিক্ষাই পারে একটি পরিবারকে শান্তিতে বেঁচে থাকার সুযোগ দিতে পারে। আমরা এমন কোনো পরিাবারকে আশা করি না, যেভাবে এমন জঘন্য কাজ হবে।