পঞ্চগড়ে নারীসহ ৪ জনকে কান ধরে উঠবস করালেন ইউপি চেয়ারম্যান

৩০ এপ্রিল ২০২২, ১০:৫৪ পিএম

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগে নারীসহ চারজনকে জনসম্মুখে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে। এ নিয়ে ওই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কান ধরে উঠবস করানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মধ্যাম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে দেবীগঞ্জ উপজেলাট সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নে। গত ২৫ এপ্রিল ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান এক নারীসহ চারজনকে জনসম্মুখে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের দোতলার বারান্দায় সবার সামনে তাদের কান ধরে উঠবস করানো হয়।

তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ওই নারী গত ২৪ এপ্রিল রংপুর থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাসে ঘুমিয়ে পড়ায় তাকে ভবানীগঞ্জের বদলে দেবীগঞ্জের সোনাহার বাজারে নামিয়ে দেন বাসচালক। পরে ওই নারী সোনাহার বাজার থেকে নুরু বাজার হয়ে করতোয়া নদী পাড় হয়ে ঝারবাড়ি যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যার পর নুরু বাজারে নেমে ঘাটে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য ওই এলাকার ধনঞ্জয় নামে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলে স্থানীয় কয়েকজন তরুণ তাদের আটক করে মারধর করেন এবং ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান।

এ সময় তাদের সঙ্গে সুরেশ ও রিয়াজুল নামে আরও দুই ব্যক্তিকেও ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। সারারাত তাদের ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রাখা হয়। পরদিন তাদের বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে সালিস বসানো হয়। সালিসে জনসম্মুক্ষে তাদের কান ধরে উঠবস করান চেয়ারম্যান। কোনো অপরাধ না করলেও চেয়ারম্যান তাদের অমানবিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। আমি কোনো অপরাধ না করলেও সবার সমানে আমাকে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেছেন। আমি লজ্জায় এখন বাড়ির বাইরে বের হতে পারছি না।

এ বিষয়ে সুরেশ দাস নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার বন্ধুর ছেলে ধনঞ্জয় আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তাকে ইউনিয়ন পরিষদে আটক করে রাখা হয়েছে। আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে আমাকেও আটক করে মারধর করে তারা। পরে রিয়াজুল নামে আরেকজনকে আটকে রাখা হয়। পরদিন সকালে আমাদের চেয়ারম্যান মারধর করেন এবং কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেন। আমরা এখন মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না।

সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এখানে ব্যস্ত আছি। একটু পরে কল দিচ্ছি। পরে তাকে একাধিক বার ফোন দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমি তৃতীয় পক্ষের কাছে শুনেছি। আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে চেয়ারম্যান কাউকে এভাবে কান ধরে উঠবস করাতে পারেন না। চেয়ারম্যানকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।