বঙ্গবন্ধুর জন্ম বাংলাদেশের জন্যে অপরিহার্য ছিলো

মিজানুর রহমান রানা :

বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্থপতি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলার এক আলোকোজ্জ্বল, ছায়াসুনিবিড় শ্যামল প্রকৃতির অপরূপ সুধামেশানো জেলা গোপালগঞ্জের অন্তর্গত টুঙ্গীপাড়া গ্রামে সুবিখ্যাত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর মমতাময়ী স্বর্ণগর্ভা মায়ের নাম সাহেরা খাতুন, বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন ইরাকের অন্তর্গত বাগদাদের সুবিখ্যাত মানুষ।

চৌদ্দশ’ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ) বাংলাদেশে এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্যে। তার শিষ্যগণের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৮ম পূর্বপুরুষ শেখ আউয়ালও ছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে সোনারগাঁও আসার পর তিনি সেখানে বিয়ে করে সংসার করতে থাকেন। তার ছেলে শেখ জহিরুদ্দিন সোনারগাঁও হতে গোয়ালনন্দের কুরসী গ্রামে কর্মের প্রয়োজনে চলে যান। পরে তিনি পাশের গ্রামের খন্দকার বাড়িতে বিয়ে করেন। শেখ জহিরুদ্দিনের সন্তান শেখ জান মাহমুদ। তার সন্তান শেখ বোরহান উদ্দিন। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজকর্মে সংশ্লিষ্ট থাকাবস্থায় টঙ্গীপাড়ার সম্ভ্রান্ত কাজী বাড়িতে শাদী করেন। উক্ত বোরহান উদ্দিনের সন্তান শেখ আবদুল হামিদই ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতামহ। বঙ্গবন্ধুর জননী সাহেরা খাতুনও ছিলেন বিখ্যাত শেখ পরিবারেরই মেয়ে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ৬ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি মা-বাবার ৩য় সন্তান ও ভাইদের মধ্যে ছিলেন বড়। বাল্যকালে তাঁকে তাঁর পিতামাতা খোকা বলে ডাকতেন। বাবামায়ের আদরের এই খোকা ছোটকাল থেকেই বাংলা মায়ের অনাবিল নির্মল সুবাতাস, সবুজে ভরা মাঠ-ঘাট, প্রকৃতির আহ্বান, নদী-নালার প্রতি ছিলেন অফুন্ত ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয়ের অধিকারী। সেজন্যে তিনি বাল্যকাল থেকেই এদেশের প্রকৃতিকে যেমন ভালোবাসতে শিখেছিলেন, তেমনি এদেশের মানুষদেরকেও ভালোবাসাতেন হৃদয়ের মণিকোঠায় সঞ্চারিত অনুপম আবেগ দিয়ে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবেই কাজ শুরু করেছিলেন এদেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার টানে। ফলশ্র“তিতে কর্মী হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন সর্বদা, সর্বক্ষণ। প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র নেতা হবার বাসনা কোনোদিন তাঁর ছিলো না। অথচ তাঁর জীবনের বর্ণিত কর্মযজ্ঞ, কর্মদক্ষতা, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং সর্বোপরি দেশপ্রেম ও নৈতিক মহামূল্যবান আদর্শ-চিন্তাধারা ও কর্মগুণ তাঁকে তার প্রকৃত যোগ্যতা ও গণমানুষের ভালোবাসার সর্বোচ্চ চূড়ায় বসিয়েছিলো।

বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য ছিলো শোষিত, বঞ্চিত মানুষের গণতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধের আদর্শে ভরপুর একটি সুস্থ, স্বাভাবিক ন্যায়-নিষ্ঠায় পরিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। তিনি মনে-প্রাণে, ধ্যানে, চিন্তায়, আদর্শে, নৈতিকতায় সর্বদা বাংলার সর্বশ্রেণীর জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষা, ভালোবাসা, বেদনা-বিক্ষোভ সর্বোপরি আবহমান বাংলার সর্বময় বৈশিষ্ট্যকে তিনি তার হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন।

ইংরেজরা প্রায় দু’শ বছর এদেশ শাসন করার পর বাংলার মানুষের সংগ্রাম-আন্দোলনে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট শেষ পর্যন্ত তল্পিতল্পা গুটিয়ে নেয়। যাবার সময় কূটচাল দিয়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশকে এমনভাবে দু’টি ডোমেনিয়নের ভিত্তিতে ভাগ করে দিয়ে যায়, যার মধ্যে লুক্কায়িত ছিলো বিভেদের বিষবাষ্প। পাকিস্তানীরা পদে পদে বাঙালিদেরকে অবহেলা, নির্যাতন, নিষ্পেষণ, শোষণ করে পশ্চিম পাকিস্তানে এদেশের ধন-সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলতো শিল্প-কারখানা। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষরা হতো বঞ্চিত। ফলে বিভেদের দেয়াল ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে। এদেশের জনগণ তখন স্রষ্টার কাছে কামনা করতো এমন একজন মানুষ; যিনি এদেশের নির্যাতিত মানুষদের দেবেন সঠিক পথের সন্ধান।

ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে শুরু করলেন জাতির মুক্তির সংগ্রাম। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের সার্থক উত্তরণের ক্ষেত্রে তাঁর যুগান্তকারী ভূমিকা স্বদেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নিপীড়িত মানুষের শোষণ মুক্তির সংগ্রামে সহমর্মী এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছিলো। বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে লাগলেন। এর ফলে বাংলার মানুষের মুক্তিদূত ও গণমানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল। অথচ ষড়যন্ত্রের কূটকৌশলে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলো না। চললো সীমাহীন ষড়যন্ত্র।

১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানের এক জনসমুদ্রে ঘোষণা করেন, ‘আজ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন আমরা আমাদের জীবন দিয়া চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা চট্টগ্রাম খুলনা রাজশাহী রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্লি বসবে আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করবো এবং এদেশের ইতিহাসকে আমরা গড়ে তুলবো। এদেশের মানুষ অর্থনীতি রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের করুণ ইতিহাস বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস এই রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষু মানুষের করুণ আর্তনাদÑ এদেশের করুণ ইতিহাস, এদেশের মানুষে রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খাঁ মার্শাল ল’ জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের সময় আমাদের ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আযুব খাঁর পতনের পর ইয়াহিয়া এলেন। ইয়াহিয়া খান বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেনÑ আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে তাকে অনুরোধ করেছিলাম ১৫ ফেব্র“য়ারি তারিখে আমাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। ……আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। দেশের মানুষের অধিকার চাই।….এদেশের মানুষকে খতম করা হচ্ছে, বুঝে-শুনে চলবেন, দরকার হলে সমস্ত চাকা বন্ধ করে দেয়া হবে। আপনারা নির্ধারিত সময়ে বেতন নিয়ে আসবেন। বেতন যদি না দেয়া হয়, যদি একটি গুলিও চলে, তাহলে বাংলার ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলÑ যার যা আছে তাই দিয়ে শত্র“র মোকাবেলা করতে হবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা তাদের ভাতে মারবোÑ পানিতে পানিতে মারবো। আমি যদি হুকুম দেবার জন্য নাও থাকি, যদি আমার সহকর্মীরা না থাকেন, আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।… সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালিরা যখন মরতে শিখেছেÑ তখন কেউ তাদের দাবাতে পারবে না…..। এই বাংলা হিন্দু মুসলমান যারা আছে আমাদের ভাই। বাঙালি অ-বাঙালি তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমদের ওপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়।…….রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

বস্তুতঃ বঙ্গবন্ধুর এ ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই বাঙালি জাতি একটা সত্যিকার অর্থে দিক-নির্দেশনা খুঁজে পায়। বঙ্গবন্ধুর জ্বালাময়ী ভাষণে এমন অনেক কিছুই লুক্কায়িত ছিলো যা বুঝতে একটু সময় লেগেছিলো। তিনি সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই। কারণ তিনি যদি সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন, তাহলে পাক বাহিনী তাৎক্ষণাৎ দেশের অপ্রস্তুত সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণের একটা অজুহাত পেয়ে যেত। বস্তুতঃ তিনি ৭ মার্চেই অন্যভাবে বলে দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঘোষণাটা যদি স্বাধীনাতার জন্যে না-ই হতো তাহলে কেন তিনি বলেছিলেন, ‘এবাবের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’? কেন বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম’?

বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁকে জীবনের প্রায় অধিকাংশ সময়ই কারাবরণ করতে হয়েছিলো। সইতে হয়েছিলো অপরিসীম অত্যাচার লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। রেসকোর্স ময়দানে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা ঘোষণাকালের কিছু পরে রাত ১টা ২০ মিনিটের সময় একদল পাকসেনা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘেরাও করে ফেলল। টিক্কাখানের তত্ত্বাবধানে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। তার তিনদিন পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় করাচিতে। বাঙালি জাতি আর বসে থাকলো না। দেশমাতাকে রক্ষার জন্যে তারা শুরু করলো মুক্তিযুদ্ধ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারাজীবনের সংগ্রাম, আন্দোলন, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও বাংলার আপামর মানুষের মুক্তিসংগ্রামে ১৯৭১ সালে বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হলো স্বাধীনতা। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে এলেন স্বাধীন বাংলাদেশে। ফিরে এসে তিনি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘…আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে। আমার সোনার বাংলা আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার উদ্দেশ্যে আমি সালাম জানাই।…বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে, তারা বীরের জাতি, তারা নিজেদের অধিকার অর্জন করে মানুষের মত বাঁচতে জানে। ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক ভাইয়েরা আমার, আপনারা কত অকথ্য নির্যাতন সহ্য করেছেন, গেরিলা হয়ে শত্র“র মোকাবেলা করেছেন, রক্ত দিয়েছেন দেশমাতার জন্যে। আপনাদের এ রক্তদান বৃথা যাবে না।….৭ মার্চ আমি … বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলুন। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রামÑ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আপনারা সেই স্বাধীনতা এনেছেন। আজ আবার বলছি, আপনারা সবাই একতা বজায় রাখুন। ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। একজন বাঙালির প্রাণ থাকতেও আমরা এই স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না।…এখন যদি কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, তাহলে সে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্যে মুজিব সর্বপ্রথম প্রাণ দেবে।’

আজ কী বাঙালি জাতির কাছে, প্রকৃত তথ্য ও সত্যসন্ধানী নব প্রজন্মের প্রতিভাত হয়নি যে, বঙ্গবন্ধু আসলে কী চেয়েছিলেন? তিনি কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে রাজি ছিলেন না? তিনি বাঙালির জন্যে, বাংলার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে লিখে গিয়েছিলেন, ‘সোনার বাংলা’। নব প্রজন্মের চোখে তাঁর সুমহান ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আদর্শ থাকবে চিরভাস্বর ও প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে। আজকের নব প্রজন্ম তাই সব রহস্যের বেড়াজাল উন্মুক্ত করে সত্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে প্রতীয়মান করেছে যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম কোনোদিন হতো না। তাই নবপ্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকের মধ্যখানে লালন করে সেই আদর্শকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেÑ কথায়, কাজে এবং সবখানে।

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মূল্যায়নের প্রসঙ্গে কবি শামসুর রাহমানের ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু কথা’ প্রবন্ধ থেকে কিঞ্চিত উক্তি তুলে ধরছি, ‘….ধাপে ধাপে তিনি এগিয়ে গেছেন মহত্ব এবং অমরত্বের দিকে। পাকিস্তানী স্বৈরশাসকেরা তাঁকে বারবার কারাবন্দী করেছে, কারণ তিনি বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে ছিলেন আপোষহীন। ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে, আরাম কেদারার হাতছানি তুচ্ছ জ্ঞান করে পথে পথে, মাঠে-প্রান্তরে সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছেন তাদের দুঃখ-দুর্দশা মোচনের তাগিদে। তিনি দেশের জনগণকে ভালোবেসেছেন, অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছেন জনসাধারণের। বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের পথে চলতে চলতে তিনি বঙ্গবন্ধু বলে খ্যাত হলেন, পরিণত হলেন জাতির জনকে। তাঁরই নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হলো ঊনিশ শ’ একাত্তরে, জন্ম হলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।’ তাই বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্ম বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে ছিলো একান্ত অপরিহার্য।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তাই আহ্বান থাকবে, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর নব প্রজন্মসহ আপামর জনগণ যদি বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ, কর্ম, আদর্শ, লক্ষ্য ও চিন্তাধারা বুকের গহীনে লালন করে সে অনুযায়ী দেশের জন্যে অর্থপূর্ণ কাজ করে তাহলে আমাদের দেশটা হয়ে ওঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সত্যিকার সোনার বাংলা। আর আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে একদিন সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো। যা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে সমাজ বিপ্লব ও দর্শন সম্পর্কে গভীর আস্থা ও লক্ষ্য নিয়ে দৃঢ়চিত্তে অগ্রসর হতে চেয়েছিলেন।

লেখক পরিচিতি ঃ মিজানুর রহমান রানা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, চাঁদপুর জেলা শাখা।