লক্ষ্মীপুরে পান বিক্রি বন্ধে চাষীদের দুর্ভোগ চরমে

ইমরান হোসেন সজিব :

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে লক্ষ্মীপুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকলেও জনসমাগম নিষিদ্ধ।

এতে জেলার রায়পুর উপজেলার চাষিদের পান বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে পান উঠালেই পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয় চাষিদের।

পান চাষ ও বিক্রির টাকা দিয়েই অন্তত ১০ হাজার পরিবারের বছর পার হয়। পান বিক্রি বন্ধে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

এ দিকে গাছ থেকে পান সংগ্রহের পর বিক্রি করতে না পারায় খালে কিংবা ডোবায় ফেলে দিতে হচ্ছে।

সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়ায় গাছেই পচন ধরছে পান পাতায়। সবমিলিয়ে ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিদের কপালে চিন্তা ভাঁজ দেখা গেছে।

তবে সপ্তাহে অন্তত একদিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রশাসনের কাছে পান বিক্রির অনুমতি চাচ্ছেন চাষিরা। একই অভিমত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদেরও।

জানা গেছে, এই প্রান্তিক অঞ্চলের পান চাষিদের অনেকের ছেলে মেয়ে জেলা ও জেলার বাইরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। তাদের পড়ালেখার খরচ পান বিক্রির টাকা থেকেই দিতে হয়।

অনেকে চাষাবাদ করতে গিয়ে ঋণ নিয়েছেন। এখন পান বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পান চাষের সঙ্গে অন্তত হাজার মালিক ও শ্রমিকের পরিবার জড়িত রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়। এর মধ্যে উত্তর চরআবাবিল, দক্ষিণ চরআবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী পান চাষ হয়।

এসব পান স্থানীয় হায়দরগঞ্জ বাজার, ক্যাম্পেরহাট বাজার, রায়পুরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। একসময় ক্যাম্পেরহাট পানের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হত। এখন সে স্থান দখল করেছে হায়দরগঞ্জ বাজার। বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পান উৎপাদন হয় এই উপজেলায়।

বৃহস্পতিবার পান বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তাকভীর হাসান নামে একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসে অসহায়ত্বের কথা ফুটে উঠেছে। জানতে চাইলে তাকভীর হাসান বলেন, এখন পান বিক্রির মৌসুম।

এই পান চাষের সঙ্গে জড়িত ১০ হাজার মালিক-শ্রমিক। এই জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের তদারকিতে ঝুঁকিমুক্ত কোন খোলা মাঠে পানের বাজার বসানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

পান চাষি হরিপদ মহাজন, বল্লব অধিকারী ও নান্টু কর্মকার জানান, তারা পান চাষ ছাড়া অন্য কোন কাজ করেন না। পান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই তাদের সংসার চলে। করোনায় তাদের পান বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে।

 

হাটে পান উঠালেই পুলিশসহ প্রশাসনের লোক লাঠি হাতে তেড়ে আসে। এতে তাদের পানগুলো অপচয় হচ্ছে। পান বিক্রি করতে না দিলে তাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

রায়পুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দী বলেন, করোনার কারণে বাজার বসতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে তাদের প্রচুর ক্ষতি হবে। প্রতি সপ্তাহে একদিন হাটে পান বিক্রির অনুমতি দেওয়া উচিত। বিষয়টি ইউএনওকে জানাব।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীন চৌধুরী বলেন, পান চাষিদের দুর্ভোগের কথা শুনেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পান বিক্রির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।