করোনাবেষ্টিত ঈদ-নয় তো! রঙিন কাপড়ের আশায় সাদা কাপড়ে বিদায়

হুমায়ুন কবির বেপারী :

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানেই আনন্দ। এটা মুসলিম উম্মার জন্য ধর্মীয় রীতি। এ সময় বৈষম্য ভুলে সবাই মিলিত হয় মানবতার কাতারে। ঈদকে সামনে রেখে মুসলিম অধুষ্যিত দেশগুলো বাণিজ্যকভাবে একধাপ এগিয়ে যায়। এর আনন্দ উপভোগ করে ধনী-গরিব মিলে সবাই। তবে জানি না এবারের করোনাবেষ্টিত ঈদ মানুষের ভাগ্যে কী রেখেছেন।

কিন্তু আফসোসের বাণী বৈশ্বিক করোনা নামের অদৃশ্য শত্রু যখন আঘাত হেনেছে তখন আনন্দ মানেই বিষাদের অতৃপ্তি সাদ। যে আনন্দ না পাওয়া সন্তান এবার বাবাকে কাঁদাবে। সন্তান ও পরিবার কাঁদবে হয়তো অপ্রাপ্তির বেশ ধরে। তবুও কিছু পরিবার হয়তো এ নিয়তি মেনেই শুধু বেঁচে থাকার সামান্য স্বস্তি খু্ঁজছেন।

কেউবা আবার আনন্দকে উৎসবে ঢেলে শপিং কেনাকাটায় উঠেপড়ে লেগেছেন। কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছেন মার্কেটে মার্কেটে দোকানে দোকানে। কেউবা অপ্রয়োজনীয়ভাবে গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরজুড়ে।

নিজেই নিজের অজান্তে গ্রহণ করছেন করোনার বিষাক্ত শ্বাস, ছড়িয়ে দিচ্ছেন করোনার বিষ। এভাবেই যেন ছড়িয়ে পড়ছে করোনার ভয়াবহ বিস্তার।

তাতেই মৃত্যুর অপেক্ষায় পরিবার অথবা সংস্পর্শে কেউ না কেউ এমন কি হয়তো নিজেও। তার ভয়াবহ চিত্র ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে, কেউবা করোনার উপসর্গ নিয়ে, আবার কেউ বা চিকিৎসার অভাবে, কেউ রাস্তায়, কেউ শপিং মার্কেটে নিজ দোকানে মারা যাচ্ছে। (ইন্নালিল্লাহী….. রাজিউন)।

এটা বেহায়াপনা, কিছু পরিবার বা ব্যক্তিদের খামখেয়ালিপনা ছাড়া কিছুই নয়। তারা সামাজিক সচেতনতা বলতে কিছুই মানছেন না। আজ তারা মহামারির পদদলিত হচ্ছেন। আল্লাহ ক্ষমা করবেন। তারাই হয়তো এবারের ঈদে রঙিন কাপড়ের আশায়, সাদা কাপড়ে জড়িয়ে চলে যেতে পারেন।

করোনার এমন ভয়াবহ রূপের বিস্তার ছড়ানো শুধু মানুষের উপর দোষারোপের ভাগ বসিয়ে দিলে হবে না। সরকার লকডাউন দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই লকডাউনের এক দিন পরে রাস্তায় ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। এ

দিকে করোনা ভয়াবহ বিস্তার অন্য দিকে সরকারের লকডাউন শিথিল, গার্মেন্টস খোলা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেবার মাজেজা কি? শপিংমলের উপছে পড়া ভিড় ও করোনা সর্বোচ্চ রেকর্ড হচ্ছে। এর জন্য কি অনিয়ন্ত্রিত লকডাউনই দায়ী, নাকি করোনা নিয়ে দীর্ঘ রাজনীতির কূটচাল চালানো হচ্ছে?

করোনার এমন পরিস্থিতিতে যেখানে কারফিউ জরুরী সেখানে লকডাউন শিথিল করা অশুভ ইঙ্গিতের বহিঃপ্রকাশ। তবে পরিকল্পনা যার যাই থাকুক জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা করা কারও কাম্য নয়।

করোনার নির্দয় আঘাত আজ সমগ্র জাতির একটি জাতীয় সমস্যা। করোনার ক্ষতির ভার কাঁধে নিয়ে নিদারুন যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। অর্থনীতির অবস্থা প্রায় পঙ্গুত্ব বরণ করছে। দেশের আমদানি -রপ্তানির ঘর যখন তালা বন্দি তখন কি করে পূরণ হবে মানব চাহিদার ডেরা।

রাষ্ট্র যখন সঠিক নেতৃত্বে পরিচালিত হয় তখন দুইটি জিনিস তার সাফল্য ফিরে পায়। ১. অর্থনীতির উর্ধ্বমূখী মান দন্ড ২. রিজার্ভ খাদ্য পণ্য। এতেও সসরকারের ব্যর্থতা রয়েছে।এর প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশ নদীমাতৃক ও কৃষি নির্ভর দেশ। এদেশে খাদ্যের ফলন সরকারিভাবে যথেষ্ট মজুদ করা হয় না! সরকার প্রধানদের প্রধান কাজ অন্তত এক বছরের খাদ্য সরকারি কোষাগারে মজুদ রাখা।

কারণ এদেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি অথবা পানির সংকটেও খাদ্যভাব দেখা দেয়। এর ফলে কৃষি জমি গুলোতে ৪/৬ মাসের আগে নতুন ফসল উৎপাদন কর সম্ভব হয়না। সেই সময়কার দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের মজুদ খাদ্য জনগণের চাহিদা পূরণে স্ব-নির্ভরতার বড় সহায়ক। ধরে নিলাম অর্থনীতির চাকা স্বচল রাখতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে এর পরিণাম কথটা ভয়ংকর হতে পারে তা এখনো ভাবার সময় আছে।

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জনগণ বাঁচাতে অবিলম্বে বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও অপ্রয়োজনীয় অফিস বন্ধ করুন। জরুরী কারফিউ দিন। না হয় ঈদের আনন্দ শোকে পরিণত হতে পারে।

লেখক পরিচিতি : হুমায়ুন কবির বেপারী, নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সাদা কাগজ।