মনুষ্যত্ববোধ কোথায়?

২৪ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ : শুক্রবার

সম্পাদকীয় …

আমরা তো মানুষ! রক্তমাংসে গড়া মানুষ! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। কিন্তু চারিদিকে যেভাবে মনুষ্যত্ব বর্জিত ঘটনাগুলো ঘটছে, তাতে আমাদের মনে প্রশ্ন জেগে উঠে, ‘মনুষ্যত্ববোধ কোথায়?’ কেন ঘটে এ ধরনের ঘটনা? কাদের মন চায় এমন ঘটনা ঘটাতে? কবি কি তাহলে অতি কষ্টে বলেছেন, ‘পশুপাখি অতি সহজে পশুপাখি, আর মানুষ অতিকষ্টে মানুষ!’ বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে অবশ্যই কবির কথাগুলো মোটেও আমরা অস্বীকার করতে পারবো না।

গত সোমবার ২০ জুলাই যে ঘটনা কুমিল্লায় ঘটেছে, ‘অজ্ঞাত দেহের পর এবার মাথা উদ্ধার’ শিরোনামে সংবাদটি আমাদের হৃদয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যখন আমাদের হৃদয়ে ও মনুষ্যত্বে প্রশ্নগুলো বিদ্ধ করে তখন আমাদের লজ্জার জায়গাটিও শূন্য হয়ে যায়। ‘অবশেষে দশ দিন পর খণ্ডিত দেহের মস্তকটি খুঁজে পাওয়া গেছে।’ এসব বাক্য কখন কলমের আগায় চলে আসে? চাইলেই এসব বাক্য লেখা যায় না। যখন এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে তখনই এ ধরনের বাক্য কলমের আগায় চলে আসে। আর মানুষের মুখে মুখে সেসব কাঁপা কাঁপা গলায় আলোচনা করতে শোনা যায়।

মিজান ডাকাতের গল্প আমরা ছোট বেলায় অনেক শুনেছি। মিজান ডাকাতের লোমহর্ষক ঘটনাগুলো শুনলে শরীর আমাদের ভয়ে কেঁপে উঠতো। কিন্তু এখন সেই মিজান ডাকাতের চেয়েও বড় ডাকাত অহরহ রয়েছে। এখনকার ঘাতকরা যেন এক একজন মিজান ডাকাতের ওস্তাদ!

কতোটা খারাপ ও দু:সাহস থাকলে একজন মানুষের মাস্তক কেটে পুকুরে ফেলে দিতে পারে। তা আমরা কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার টাটেরা গ্রামের ঘটনায় দেখতে পাই। আর সেই মস্তক একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ! এসব ঘটনায় মানুষ যেমন আতঙ্কগ্রস্ত হয়; তেমনি ধীরে ধীরে মানুষের আতঙ্কও কেটে যায়। তাই হয়তো মিজান ডাকাতের গল্প এখন আর কেউ নতুন করে শুনতে চায় না। সরাসরি দেখে, ওরা এক একজন মিজান ডাকাতের চেয়েও কতোটা ভয়ঙ্কর!

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি যে, গত ১০ জুলাই একই পুকুরের পাড়ে মস্তকবিহীন অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছিল ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশ। তার ঠিক দশদিন পর সেই খন্ডিত মস্তক উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ একজনকে উদ্ধার করেছে বলে আমরা জেনেছি। আমাদের বিশ্বাস মূল হত্যাকারী অবশ্যই চিহ্নিত হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।

আমরা শান্তি চাই। আমরা সুখে থাকতে চাই। আমরা ভালোবাসা বিলাতে চাই। ভালোবাসা পেতেও চাই। আমরা ভয়ঙ্কর কিছু চাই না মোটেও। আমরা নিরাপদে থাকতে চাই, অন্যকেও নিরাপদে রাখতে চাই। আমরা নিজেরা সহনশীল হবো, অন্যকেও সহনশীল হওয়ার শিক্ষা প্রদান করবো। আমরা কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা কেউ মিজান ডাকাতের মতো হতে চাই না। যেন কিনা খারাপ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে মানুষের অন্তরে। আমাদের মনে যে ‘মনুষ্যত্ববোধ কোথায়?’ এমন প্রশ্ন জেগে উঠেছে তা থেকে আমরা মুক্তি চাই। এমন ঘটনা আমরা আর শুনতে চাই না।