এ সময়ে শিক্ষার্থীদের দিনকাল!

২৫ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ : শনিবার

সম্পাদকীয়…

এখন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় ঘটনা তো বটেই। আতঙ্ক ছড়িয়ে দাপটের সাথে নিয়ে যাচ্ছে একের পর এক প্রাণ। করোনা ভাইরাস যাকে একবার আঘাত করছে তাকে পরাজিত করেই ছাড়ছে। আর সেই আতঙ্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণে একসাথে থাকা যাবে না এই ভাইরাসের কারণে। কারণ, এই রোগ একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। স্কুলে কারো একবার এই রোগ হলে তার থেকে অন্যদেরও এই রোগ ছড়িয়ে যাবে অনায়াসে। তাই মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠানগুলোও হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চলমান শিক্ষার মন্দা নেমে এসেছে। শিশু শিক্ষার্থীদের হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ওরা খেলতে পারবে না একসাথে। করোনা ভাইরাস ওদের বিদায় দিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্যে।

এসময়ে শিক্ষার্থীদের দিনকাল মোটেও ভালো কাটছে না। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না যেতে পেরে শিক্ষার ধারাবাহিকতায় ধস নেমেছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা যথাযথভাবে পাচ্ছে না। যদিও বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে, দেয়া হচ্ছে সাজেসন্স। তবুও তারা স্কুলে গিয়ে যে শিক্ষাটা পেতো সেই শিক্ষা তারা পাচ্ছে না। তাছাড়া দীর্ঘদিন সহপাঠীদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ না করতে পেরে ও ওদের সাথে সময় কাটাতে না পেরে অস্থিরতার মধ্যে তাদের দিনগুলো কাটছে।

গত ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশে সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। তখন থেকেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারছে না। তারা খুব একটা সহযোগিতা পাচ্ছে না। বলা চলে, শিক্ষা ক্ষেত্রে ক্রান্তিকাল চলছে বলা যায়। তবে করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর থেকে রক্ষার জন্যে এই ক্রান্তিকাল তেমন কিছুই নয়।

এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রে চলমান পথ হারিয়ে ফেলেছে। এমন অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের আশা ছিলো না। স্কুল কলেজে যাওয়া আসায় অভ্যস্ত শিক্ষার্থীদের দিনগুলো খুবই কষ্টের মধ্য দিয়ে কাটছে। যদিও পরিস্থিতির কারণে মেনে নিতে হচ্ছে, তবুও এ অনিয়ম এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সাথে খাপ খাচ্ছে না।

শিক্ষা অর্জনের জন্যে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেই হবে। তাই অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনভিত্তিক ক্লাস করেও শিক্ষা অর্জনে সহযোগিতা গ্রহণ করছে। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত এলাকায় অর্থাৎ গ্রামে বসবাস করছে সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পেতে অসুবিধা হয়। এজন্যে তারা সেই সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। আর এ সময়ে তাদের জন্যে বিকল্প হিসেবে কোনো কিছু করার সম্ভব হচ্ছে না। টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পৃথিবীতে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই সাথে মৃত্যুর হারও কম নয়। সে কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার ক্ষতি বাধ্য হয়ে মেনে নিচ্ছে, কারণ, আগে বেঁচে থাকা! করোনা মহাকালে সবকিছুতেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও যে বিরাট প্রভাব ফেলবে সেটা ছাত্র-ছাত্রীরা মোটেও প্রত্যাশা করেনি। যেসমস্ত শিক্ষার্থীরা আঁটঘাট বেঁধে পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছিলো, তাদের আশা পূরণ হলো না। কিন্তু জীবনের ঊর্ধ্বে পড়াশোনা হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের এ সময় সুস্থ থাকতে হবে, করোনা থেকে নিজেদের রক্ষার জন্যে নিয়ম কানুন পালন করতে হবে। তারপর সুস্থ থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে পরিবারের বড় ভাই বা মা-বাবার সাহায্যে।

আমরা আশা করবো, এই ক্রান্তিলগ্নেও যেন ছাত্র-ছাত্রীরা হতাশ না নয়। যেন তারা অস্থিরতার মধ্যে দিন না কাটায়। সেজন্যে এসময় সবচেয়ে বেশি দরকার মা-বাবাকে তথা পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিদের। তারা যেন এ সময় তাদের পড়াশোনার বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে।