সড়কে আর কতো মৃত্যুর পর আমাদের হুঁশ ফিরবে!

মো. সোহেল কিরণ :

যাচ্ছে দিন সড়কে বাড়ছে লাশের মিছিল। এখানে বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর কেউ নিরাপদ নন। কিন্তু কেন? সময়ের পরিবর্তনে সারাদেশেই যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতর হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্পও নেই।

কিন্তু এসব উন্নয়ন তো মানুষের জন্যই ! আর যাতের জন্য এতো সব উন্নয়নের আয়োজন সড়কে তাদেরই পিষে মারছে ঘাতক যানবাহন। তবে এ যেনো বাতির নিচেই অন্ধকার। চুখের সামনে পিষে মারা হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন। নিহতের পরিবাররা হারাচ্ছে তাদের রঙ্গিন স্বপ্ন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।

বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। আর এ ভাবে কতো শত মৃত্যুর পর সুদৃষ্টি হবে সংশ্লিষ্টদের। সড়ক পরিবহনে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না মালিক-শ্রমীক-কর্মচারীদের কেউ। অসতর্কতা বা বেখেয়ালীপনার শিকার হয়ে প্রতিনিয়তই পৃষ্ট হচ্ছে মানুষজন। চোখ মেলেও ও যেনো বন্ধ করে রখেছেে তাদরে সব কার্যক্রম। প্রতিবার এক একটি মৃত্যুর পর হুস ফিরে সাধারণ মানুষের। চলে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচীসহ নানা কার্যক্রম।

কিন্তু নিমিষেই যেনো তা আধারে হারিয়ে যায। আবারও নিহতের ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত মুখ বন্ধ থাকে সবার। আজ নয় কাল এভাবেই দিন গড়িয়ে মাস, তারপর বছর, এরপর যুগ। দাবি রয়েই যায়। অপর দিকে ঘাতক যানবাহনে পৃষ্ট হয়ে প্রতিদিনই এক একটি নতুন স্বপ্নের মৃত্যু হয়।

বেসরকারী সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর হিসাবে গত বছর ৪৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে মারা গেছে ৫২২৭ জন। এর আগের বছর ৩১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪৩৯ জন মারা যায়। এক বছরে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৫৫৯টি এবং প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে ৭৮৮জন। প্রাণহানি বৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ১৮জনের বেশি মারা গেছে।

গত ৭ আগস্ট শুক্রবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনার শিকারে মুত্যু হয় পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নার । ফলে নিরাপদ সড়ক ও সাইকেল লেনের দাবি করে নারায়ণগঞ্জ শহরে সাইকেল র‌্যালি ও সড়কে এক দল তরুনী শহরের মূল সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাল রং দিয়ে লিখে যাচ্ছে, ‘সাইকেল লেন চাই’, ‘নারায়ণগঞ্জে সাইকেল লেন চাই’। যাদের প্রত্যেকের সাথে রয়েছে একটি করে সাইকেল, মাথায় রয়েছে হেলমেট, সাইকেল ও পিঠে রয়েছে শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। এগুলোতেও লেখা রয়েছে, ‘সাইকেলের জন্য পৃথক লেন চাই’, ‘গাড়ির চাপায় পৃষ্ট হয়েছে রেশমা, তারপর কে ?’ ‘সড়ক দূর্ঘটনা, নাকি সড়কে হত্যাকান্ড ?’

আজ সকাল ৭ টায় বঙ্গবন্ধু সড়কে এ চিত্র দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জের নারী সাইকেল আরোহীদের দল ‘নভেরা’র সদস্যরা এদিন একটি পৃথক সাইকেল লেনের দাবিতে শহরে সাইকেল র‌্যালি করে। এ সময় তারা শহীদ মিনার, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে, আলী আহমেদ চুনকা নগর মিলনায়তন ও পাঠাগারের সামনে এবং নগর ভবনের সামনে লাল রং দিয়ে বড় বড় অক্ষরে নিজেদের দাবি সড়কে লিখে দেয়।

যাতে তাদের এ শ্লোগান লেখার সময় জনগনের কোনো ভাবে সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় তাই তারা সকাল সাড়ে ৬ টায় নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে। এবং শ্লোগান লেখার জন্যও তারা বেশি সময় রাস্তা আটকে রাখে নি।

জানা যায়, ‘নভেরা’র উদ্যোক্তা ফারজানা মৌসুমী বলেন, ‘আমরা জানি কিছুদিন আগে পর্বতারোহী রেশমা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ব্যস্ত সড়ক, মহাসড়কে যদি পৃথক সাইকেল লেন করে দেয়া হয়, তবে এই ধরনের দূর্ঘটনাগুলো কমে যায়। প্রতিভাবান পর্বতারোহী রেশমার মতো আর কোনো সম্ভাবনাময় মানুষকে আমরা সড়ক দূর্ঘটনায় হারাতে চাই না। তাই এ পৃথক সাইকেল লেনের দাবি নিয়ে আমরা আজ রাস্তায় দাড়িয়েছি।’

‘নভেরা’র সদস্য ফারহানা মানিক মুনা বলেন, ‘পর্বতারোহী রেশমার ঘটনাটি সড়ক দূর্ঘটনা নাকি সড়ক হত্যাকান্ড সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। সাইকেল যেখানে একটি পরিবেশ বান্ধব বাহন সেখানে সড়কে এ সাইকেলের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা তো নেই, বরং অনিরাপদ। একজন নিয়োমিত সাইক্লিস্ট হিসেবে এই অনিরাপত্তা আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি।’

এ ভাবে আর কোনও সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী করুণ মৃত্যুর আগেই যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপর্ক্ষ এমন প্রত্যাশা সবার।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।