‘কারও উপর আমার আক্রোশ নেই, আমি দলিল নিয়ে কথা বলি’

মুফতী ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী, জৈনপুরী

মুফতী ড. এনায়েত্ উল্লাহ আব্বাসী। একজন জনপ্রিয় ইসলামিক আলোচক। মাহফিলে দক্ষতার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইসলামিক আলোচনা করেন। কথা বলেন ইসলামিক নানা বিষয় নিয়ে। সচেতন করেন মানুষকে। সম্প্রতি তার বাস ভবনে তার সঙ্গে কথা বলেন হাসান সাইদুল। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

১্র। করোনাকালীন এ সংকট কালকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। আপনার অভিমত জানতে চাই?
ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী : করোনার মহামারি একটি সংক্রমন বটে কিন্তু এটি মানুষের হাতে না। তবে হাদীসে আছে যে কোনো মহামারি মুমিনের জন্য রহমত আর অবিশ্বাসীদের জন্য আজাব বা তাদের কর্মের পৃথিবীতে আংশিক খেসারত। এটির একটি প্রমাণ লক্ষ্য করা যাবে, করোনা বাংলাদেশে যখন চিহ্নিত হয় তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ছয়-সাত লক্ষ মানুষ মারা যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে নজর দিলে যে চিত্র দেখা যায় তাতে হাদিসের কথা নিশ্চই প্রমাণ পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে তা তো শুভকর নয়।

২। অন্যদের কথা বাদ দিলাম। আপনারা যারা ইসলামের প্রচারক তারা সবাই এক কাতারে আসতে দেখা যাচ্ছে না।
ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী : এক কাতারে আসতে দেখা যাচ্ছে না বললে ভুল হবে। সবাই আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালো বাসেন এবং আল্লাহ রাসূলের বানী মানুষের কাছে পৌছানোর কাজ করছেন। যে যার অবস্থান থেকে খেদমত করছেন। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা থাকতেই পারে। ৩। গান বাজনার কনসার্ট আমরা দেখি। সেটি একটি বিনোদন বলা হয়।

৩। মাহফিলও ধর্মীয় একটি বিষয়, এখানে দেখা যায় গান বাজনার বিষয় তুলে ধরা হয়। শিল্পীদের গানও গাওয়া হয় এটি কেনো?
ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী : আসলে সবাই এটি করেন তা বলা যাবে না। তবে যারা করেন তার একটি কারন বলা চলে, সবার একটু আকষর্ণ কাড়ার জন্য। যুবকদের আগ্রহ একটু বৃদ্ধির আনার জন্য। তবে এটি যে করতে হবে তা কিন্তু নয়। অন্য দিকে যেটি বলতে চাই সেটি হচ্ছে এসব না করাই ভালো।

৪। আমরা প্রায়ই দেখি মাহফিলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপব্যাখ্যা দেওয়া হয়। যা নাস্তিক ধরনের মানুষ আমলে নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেন এর ব্যাখ্যা কী?
ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী : দেখুন আমাদের নবী কারিম (সা:) কোনো সিদ্ধান্তেততক্ষন যেতেন না যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কোনো ওহি না আসত। পরিস্কার ভাবে আল্লাহ বলেছেন, “আমার নবী কিছু বলেন না, কিছু করেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত তার কাছে কোনো ওহি না যায়।” সুতরাং যারা ওয়াজ মাহফিল করেন, মানুষের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত দেন তাদের অবশ্যই দলিল (আল কুরআন,হাদীস) থেকে কথা বলতে হবে। অন্যথায় আপনি ঠিক বলেছেন যে, নাস্তিকরা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তবে এটিও বুঝতে হবে। কেউ অপব্যাখ্যা দিলে সেটির দায় যিনি অপব্যাখ্যা দিলেন তার উপর বর্তাবে, কিšদ ইসলামের দায় নয়। আর একটি বিষয় ওয়ায়েজিনদের মনে রাখতে হবে কুরআনের দলিল, হাদীসের দলিল দিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে। কোনো দার্শনিক কিংবা মনীষির প্রবাদ দিয়ে নয়।

৫। আপনার একটি উক্তি ব্যাপক ভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। ’তরবারির জোরে ইসলাম আসেনি তবে ইসলাম কায়েমে তরবারি ব্যবহৃত হয়েছে’ এর ব্যাখ্যা কী?
ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী : ইসলাম রক্তপাত পছন্দ করে না। রক্তপাত করতেও নির্দেশ করে না। নাস্তিকের দল মনে করেন এবং বলেও থাকেন যে ইসলাম অস্থিরতা ছড়ায়, রক্তপাত করে। আপনারা অবশ্যই হুদাবিয়ার যুদ্ধের ইতিহাস জানেন। যেখানে আমার নবী কারীম (সা:) সন্ধি করেছেন। সন্ধি না করলে রক্তপাত হতো যেটি ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। ঠিক এটিই বোঝাতে চেয়েছি। ইসলাম তরবারি কিংবা রক্তপাতে বিশ্বাসী নয় এর জোরও খাটায় না তবে ইসলাম কায়েমে তরবারি ব্যবহার হয়েছে। ধরুন অমুসলিম মুসলমানদের সঙ্গে কোনো কারনে সমঝোতায় না এসে যদি সশস্ত্র অবস্থানে যায় সেক্ষেত্রে মুসলমানদেরকেও অস্ত্রের ব্যবহার করতে হবে।

৬। আপনার একটি আলোচিত বিষয়, বিগত অনেকগুলো মাহফিলে আপনি বেশ কিছু বক্তাদের কাফির বলেছেন। অনেককে সংশোধন হওয়ার কথা বলেছেন। যাদের মধ্যে বেশির ভাগে দু:খ প্রকাশ করেছেন ক্ষমা চেয়েছেন। অনেকেই আপনাকে ভুল বুঝলেও এখন সবাই আকর্ষিত
ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী : আসলে আমি যে ফতোয়া দিয়েছি। সেটি তো আমার মুখের কথা নয়। কারও উপর আমার আক্রোশ নেই। আমি দলিল নিয়ে কথা বলি। কুরআন হাদিস নিয়ে কথা বলি। যারা কুরআন হাদীস অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি। যারা ভুল করেন একটা সময় পর সংশোধিত হতেই হয়। পূর্বে এমনটিই ঘটেছে। আগামীতে কেউ ভুল করলে সংশোধন করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ ।

৭। ভাস্কার্য নিয়ে একটি অসঙ্গতি তৈরি হয়েছিল। অনেকের প্রশ্ন মক্কার পাথর কি ভাস্কার্য নয়?
ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী : হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে যারা মূর্তি বা ভাস্কার্য বলে থাকেন তাদের অনেক বুদ্ধিজীবিকে আমি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বলি। মূর্তি বা ভাস্কার্য কী? ইংরেজীতে ডল, আইডল বা স্ট্রেচু বলা হয় আর পাথরকে বলা হয় স্টন। মূর্তি বা ভাস্কার্যকে আরবিতে বলা হয় আউসান বা আসনাম। কিšদ মক্কায় যে পাথরের কথা বলা হয়েছে সেটি তো কালো পাথর। নামটি শুনলেও বোঝা যায় এটি কী? আমরা যে হজ্ব করতে যাই তা শুধু কালো পাথরকে চুমু দিতে নয়। হজ্ব হচ্ছে ফরজ আর কালো পাথরে চুমু দেয়া হচ্ছে সুন্নাত। সার্বিক ভাবে একটি কথাই বলতে চাই, মক্কার পাথরের সাথে মূর্তি বা ভাস্কার্যের কোনো স¤পর্ক থাক দূরের কথা কোনো ধারনাও নেই।