অবাস্তব কোনো নিয়মনীতি মঙ্গল বয়ে আনে না

মিজানুর রহমান রানা :
যেখানেই প্রলোভন সেখানেই আমরা। যেখানে লোভের হাতছানি সেখানেই আমরা। পদে পদে তাই ঠকছি। আমাদের দেশের সহজ-সরল মানুষকে ঠকাচ্ছে। কেন? আমরা কেন হুঁশিয়ার হই না এরপরেও। আমাদের বিবেক-জ্ঞান কি লোপ পেয়েছে?

রিং আইডি, ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, সিরাজগঞ্জ ডট কমসহ হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নানাপ্রকার অনলাইন ব্যবসায়ী ডটকমগুলো মানুষকে প্রলোভিত করতে এমনসব অবিশ^াস্য অফার দেয়, যা মূল কোম্পানিও ওই দামে পণ্য তৈরিই করতে পারে না। যেমন একটি সাড়ে চার লাখ টাকার মোটর সাইকেল তারা অফার দেয় তিনলাখ টাকায়। মূলত মূল কোম্পানি তিন লাখে ওই মোটর সাইকেলটি উৎপাদনই করতে পারে না। তাহলে এসব হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কীভাবে আপনাকে ওই পণ্যটি ওই দামে তুলে দেবে। এটা আপনাকে ভাবতে হবে এবং বিবেক কাজে লাগাতে হবে।

সব ভালো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্যের একটা সিস্টেম বা নিয়মনীতি থাকে। ওই নিয়মনীতিটা বাস্তবসম্মত হতে হয়। অবাস্তব কোনো নিয়মনীতি মঙ্গল বয়ে আনে না। হিত সাধন করতে পারে না।

শুরুতেই বলেছি, আমরা ‘হুজুগে বাঙালি’। আমরা বাতাসে যা শুনি, তাই বিশ^াস করে ফেলি। মূলত তা তলিয়ে দেখি না, চিন্তাভাবনা করে দেখি না। সবাই দৌড়াচ্ছে, আমিও দৌড়াচ্ছি। কেন দৌড়াচ্ছি, তা নিশ্চিত হই না।

এ প্রসঙ্গ একটি বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছি। আট-নয় বছর আগের কথা। চাঁদপুর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি ট্রেনের অপেক্ষায়। কমপক্ষে ওই প্লাটফর্মে এক হাজারেরও বেশি মানুষ আছে। হঠাৎ করেই একজন চিৎকার করে উঠল, ‘আগুন’ আগুন। একথা শুনে যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে। দিকবিদিক হয়ে প্রাণভয়ে সবাই দৌড়াচ্ছে। আমিও দৌড়াচ্ছি।

কিন্তু হঠাৎ মনে হলো কেন দৌড়াচ্ছি! দৌড়রত একজন জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই কী হয়েছে?
তিনি বললেন, ভাই জানি না। একজন বললো, আগুন, আগুন। তাই দৌড়াচ্ছি।

আমি থামলাম। নাহ। কারণ না জেনে দৌড়াবো না। পেছন ফিরে এলাম। দেখলাম, প্লাটফর্মের মাঝে কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে একটি সিলিন্ডারে সামান্য আওয়াজ করে একটু গ্যাস লিক হচ্ছিল, এ সময় কে যেনো আগুন আগুন বলে চিৎকার করতেই প্লাটফর্মশূন্য হয়ে গেল ভয়ে।

এটা একটা বাস্তব উদাহরণ। এমনই হয়। একজন যখন হুজুগে পড়ে, সবাই দৌড়ায়। কেন দৌড়ায় তা জানে না। এভাবে মানুষ তার সঞ্চিত সম্পদ ওইসব প্রতিষ্ঠানের কথায় হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।

জেনে রাখুন, যারা সম্পূর্ণ টাকা অগ্রিম নেয়। এরা প্রতারক। প্রকৃত পক্ষে সাধু কোনও কোম্পানি পণ্যের টাকা সম্পূর্ণ অগ্রিম নেয় না। ক্যাশ অন ডেলিভারী দেয়। আর যারা দু’দিনে ব্যবসা করে মানুষের মূলধন নিয়ে ভেগে পড়তে চায়, তারাই টর্নোর্ডো গতিতে অবিশ^াস্য অফার দিয়ে আপনার টাকাটা তাদের কাছে হস্তগত করে কেটে পড়ে।

সুতরাং সাবধান। আপনার কষ্টার্জিত টাকা কাউকে দেওয়ার পূর্বে যাচাই করুন। বিবেক কাজে লাগান। না হলে পস্তাতে হবে। কেউ দায়িত্ব নিবে না। আপনার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।

পরিশেষে আশার কথা হচ্ছে, একজন বিচারপতি, একজন সচিব, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও একজন আইনজীবী দিয়ে ইভ্যালির জন্য বোর্ড গঠন করে দেবেন হাইকোর্ট। আগামীকাল বুধবার আদেশ হবে। লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, বেস্ট ই-কমার্স।