দোহারে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত

মাকসুমুল মুকিম : ঢাকার দোহারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে।

১৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সকালে উপজেলার বঙ্গবন্ধু মুর‍্যালে ফুল দিয়ে শ্বদ্ধা নিবেদন করেন দোহার উপজেলা প্রশাসন, দোহার থানা প্রশাসন, অফিসার্স ক্লাব, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

আজকের এ দিনে (১৭ মার্চ) তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান, আর মা সায়েরা খাতুন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। পরবর্তীতে ‘খোকা’ নামের এই শিশুটিই হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারি।

শেখ মুজিবুর রহমান গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। গ্রামের হিন্দু-মুসলমানদের সম্মিলিত সম্প্রীতির সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িক চেতনার। কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে, তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর থেকে শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা।

বঙ্গবন্ধু সারাজীবন এদেশের মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪ বছর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থেকেছেন। দুইবার ফাঁসির মঞ্চে হয়েছেন মৃত্যুর মুখোমুখি। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকারের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি।

দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪- এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২- এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬- এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও আপোষহীন নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। যেখানে তিনি ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু।এরপর নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। বাংলা-বাঙালি-বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা।

বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ১৯৭৫ সালে এ জাতির ভাগ্যে নেমে আসে আরেকটি কালরাত্রিতে। ওই বছরের ১৫ আগস্ট বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারার মূল্যবোধের বিস্তার ঘটানোর পাঁয়তারা চালায়। ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে শুরু করে নানা ষড়যন্ত্র। কিন্তু তার সংগ্রাম ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য তা মুছে ফেলতে পারেনি। বাংলা ও বাঙালি যতদিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু একইভাবে প্রজ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে, মুক্তিকামী ও শান্তিকামীর হৃদয়ে।

তাইতো কবি লিখেছেন-‘যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা গৌরী, যমুনা বহমানততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’
এর পর দুপুরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাচ্যুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ১ নং সাংসদ দোহার নবাবগন্জ সালমান এফ রহমান।
দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাশ্বের আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দোহার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর হোসেন।


দোহার উপজেলা নির্বাচন কমর্কর্তা মো. রেজাউল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, দোহার থানা অফিসার ইনচার্জ মো. মোস্তফা কামাল , উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবুল, সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন শিকদার, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা মো. বেল্লাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. রজ্জব আলী মোল্লা, সাবেক কমান্ডার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এইচ এম মহিউদ্দিন, কেন্দ্রীয় উপকমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সদস্য আলম সুরুজ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন, নয়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়বুর রহমান তরুন, কুসুমহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মন্ডল, নারিশা ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, মুকসুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান,সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদ মিয়া,কুসুমহাটি ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরহাদ হোসেন মিয়া,মাহমুদ পুর ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি মোঃ ফারুক উজ্জামান, রাইপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, সুতপার ইউনিয়নের মোঃ নাসিরুদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ উদয় হোসেন প্রমুখ।

দুপুরে পর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেষনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৭ ই মার্চের কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়।এছাড়া ও বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে।