সাম্প্রতিক সময়ের সান্ডা খাওয়ার বিধান!

মুফতি ওসমান গনি সালেহী : 
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত মরুর দেশের প্রাণী সান্ডা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেশগুলোতে বসবাসকারী বেশ কিছু বাঙালি তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দিচ্ছেন। সেখানে দেখা যায় তারা তাদের কফিলের জন্য সান্ডা ধরছে। এ সময় কেউ কেউ শেয়ার করছেন বিভিন্ন ছবি। যা নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে এখানেই শেষ নয়, বানানো হচ্ছে নানা মিম।

এদিকে সান্ডা খাওয়া নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রায়ই জিজ্ঞাসা দেখা যায় – এটি কি ইসলামে হারাম নাকি হালাল? কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনার ভিত্তিতে আলেমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেহেতু কুরআন মাজিদে সরাসরি সান্ডা খাওয়ার ব্যাপারে কোনো উল্লেখ নেই, তাই এর বিধান নির্ধারণে হাদিস ও ফিকহি নীতি অনুসরণ করা হয়।

সান্ডা কি?
আরবি ভাষায় এটিকে ‘দাব্ব’ (ضبّ) বলা হয়। এদের আদি নিবাস আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য । এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মোটা ও শক্তিশালী লেজ, যা কাঁটার মতো খাঁজযুক্ত এবং আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে অনেক দেশে সান্ডাকে ওষুধ বা শক্তিবর্ধক খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
وذكر ابن خالويه أن الضب يعيش سبعمائة سنة ، وأنه لا يشرب الماء ويبول في كل أربعين يوما قطرة ولا يسقط له سن ، ويقال بل أسنانه قطعة واحدة
এটি ৭০০ বছর বেঁচে থাকে। সে কখনো পানি পান করে না। ৪০ দিনে একফোঁটা প্রসাব করে। তার দাঁত কখনো পড়ে না।
সান্ডা খাওয়া নিয়ে নবী করিম (সা.) এর হাদীস?

নবী করিম (সা.)-এর সামনে একবার তার সাহাবীরা সান্ডা পরিবেশন করে। তখন তিনি সেটি খাননি। সে সময় তার সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি এটি খেতে অপছন্দ করেন, এটি হারাম?’

এই প্রশ্নের উত্তরে নবী করিম (সা.) বললেন- ‘এটি আমার কওমের খাদ্য নয়, তাই আমি খাই না।’
(সহীহ বুখারী: ৫৫৩৭, সহীহ মুসলিম: ১৯৪৪)

অর্থাৎ, এটি তিনি নিজে না খেলেও সাহাবীদের খেতে মানা করেননি। এমনকি সাহাবীরা তার সামনে এটি খেয়েছেন।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) যাকে ‘সাইফুল্লাহ্’ বলা হতো তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মাইমূনাহ (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করলেন। মাইমূনাহ (তার ও ইবনু ‘আব্বাসের খালা ছিলেন। তিনি তার কাছে একটি ভুনা দাব্ব দেখতে পেলেন, যা নজদ থেকে তার (মাইমূনাহর) বোন হুফাইদা বিন্ত হারিস নিয়ে এসেছিলেন। মাইমূনাহ (রাঃ) দাব্বটি রাসূলুল্লাহ স.-এর সামনে হাজির করলেন। রাসুলের অভ্যাস ছিল, কোনো খাদ্যের নাম ও তার বর্ণনা বলে না দেয়া পর্যন্ত তিনি খুব কমই তার প্রতি হাত বাড়াতেন।

তিনি দাব্বের দিকে হাত বাড়ালে উপস্থিত মহিলাদের মধ্যে একজন বললেন, তোমরা রাসূলুল্লাহ স.-এর সামনে যা পেশ করছ সে সম্বন্ধে তাকে অবহিত কর। বলা হল- হে আল্লাহর রাসূল! ওটা দাব্ব। এ কথা শুনে রাসূল স. তার হাত উঠিয়ে নিলেন। খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! দাব্ব খাওয়া কি হারাম? তিনি বললেন, না। কিন্তু যেহেতু এটি আমাদের এলাকায় নেই। তাই এটি খাওয়া আমি পছন্দ করি না। খালিদ (রাঃ) বলেন, আমি সেটি টেনে নিয়ে খেতে থাকলাম। আর রাসূল স. আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। [৫৪০০, ৫৫৩৭; মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৫, ১৭৪৬, আহমাদ ১৬৮১৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৮৬)
এই হাদিস থেকে বুঝা যায়, নবী সা. নিজে দাব্ব খাননি।
ফিকহবিদদের মতামত:

ফিকহবিদগণ এই সকল হাদীসগুলো বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ধর্মে সান্ডা খাওয়ার হুকুম নির্ধারণ করেছেন।

হানাফি মাজহাব:
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন- সান্ডা খাওয়া হারাম। কারণ এটা অরুচিকর একটি প্রাণী যা মানুষ সাধারণত খেতে চায় না।
দলীল:
وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ﴾ [الأعراف: 157].

وقال ابن عابدين في حاشيته “رد المحتار”: [والدليل عليه أنه صلى الله عليه وآله وسلم “نهى عن أكل كل ذي ناب من السِّبَاع، وكل ذي مخلب من الطير” رواه مسلم وأبو داود وجماعة، والسر فيه أن طبيعة هذه الأشياء مذمومةٌ شرعًا، فيُخشى أن يتولَّد من لحمها شيءٌ من طباعها، فيحرم إكرامًا لبني آدم، كما أنه يحل ما أحل إكرامًا له، وفي “الكفاية”:

শাফেয়ি, মালিকি ও হাম্বলি মাজহাব:

এই সব মাজহাবের আলেমদের মতে, সান্ডা খাওয়া পুরোপুরি হালাল।

যদিও হাদিস অনুযায়ী, নবী (সা.) এটিকে নিষেধ করেননি, তাই এটা নিষিদ্ধ নয়।

সান্ডা খাওয়ার চিকিৎসাগত দিক:

বিশ্বের বহু দেশে সান্ডার তেলের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে এর তেল ব্যবহার করা হয়। যদিও বর্তমান আধুনিক চিকিৎসায় এটির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

-প্রধান মুফতি, দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা, ঢাকা।

শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫ খ্রি.

সোরিয়াসিস হলে কী করবেন?

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শেয়ার করুন

You might like