সিএনজি চালকের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া সেই ‘মহা ক্ষমতাধর’ এসআই রূপন ক্লোজড

‘এসআই রুপন নাথ বলছি, ডিআইজি নয়, আমি আইজিপিকেও পরোয়া করি না’

নিউজ ডেস্ক :
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় গত শুক্রবারে অবৈধভাবে আটক করা সিএনজি গাড়ীটি (নোয়াখালী-থ-১১-৯৩০৮) এবং ঘুষ নেয়া ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন অভিযুক্ত এসআই রূপন নাথ। এর আগে সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার খবর আসে কোম্পানীগঞ্জ থানায়। কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্রে এসআই রূপন নাথের ক্লোজ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রোববার (৫ জুলাই) ভুক্তভোগী সিএনজি অটো রিক্সা চালক মিলন (৩৪) নোয়াখালী পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। একই দিন রাত ১০টায় এসআই রূপন নাথের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের তদন্তে আসেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিম। তদন্তের সময় অভিযোগকারী সিএনজি চালক মিলন তার গাড়ীর মালিক পিন্টু ভৌমিক এবং মিলনের বাবা গ্রাম পুলিশ ছায়েদল হকের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। তদন্ত সম্পন্ন হলে তদন্তকারী ওই পুলিশ কর্মকর্তা রাতেই কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে জেলা হেড কোয়াটারে চলে যান। দুপুর শেষে বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির নির্দেশে অভিযুক্ত এসআই রূপন নাথ সিএনজি চালক মিলন ও গাড়ীর মালিক পিন্টু ভৌমিকের কাছে আটক সিএনজি ও ঘুষের নেয়া ৫ হাজার টাকা ফেরত দেন। আটকৃত এ গাড়ী ও টাকা লেনদেনের সময় বিষয়টি ভিডিও করে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরা। যা তাৎক্ষণিকভাবে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরিফুর রহমান জানান, সোমবার বিকেলে সিএনজি অটোরিক্সাটি মালিককে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত এসআই রূপন নাথের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত চলছে।

‘এসআই রুপন নাথ বলছি, ডিআইজি নয়, আমি আইজিপিকেও পরোয়া করি না’

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মিলন (৩২) নামে সিএনজি অটোরিক্সা চালককে ডেকে নিয়ে থানায় আটক করে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসআই রুপন নাথের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন ওই সিএনজি চালক। দারোগা রুপনের দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকার জন্য সিএনজি অটোরিক্সাটি (নোয়াখালী-থ-১১-৯৩০৮) এখনও আটকে রাখা হয়েছে থানায়।

কোম্পানীগঞ্জ থানায় কর্মরত অনেক অপকর্মের নায়ক এসআই রুপন নাথ (বিপি নং-৮৫০৪০৬৪৮২৬) এ ঘটনা ঘটিয়েছেন শুক্রবার (৩ জুলাই) রাতে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগি সিএনজি অটোরিক্সা চালক মিলন রোববার (৫ জুলাই) নোয়াখালী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে স্ব-শরীরে গিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেলকে) তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে রোববার বিকেলে পাঠানো হয়েছে ।

ভুক্তভোগী সিএনজি চালক মিলন অভিযোগে জানান, তাকে আটক করার পর তার বাবা চরকাঁকড়া ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ডে বেছু মাঝির বাড়ীর গ্রাম পুলিশ ছায়েদল হক সংবাদ পেয়ে মিলনের ভাড়ায় চালিত সিএনজি অটোরিক্সার মালিক পিন্টু ভৌমিককে নিয়ে শুক্রবার রাতেই থানায় আসেন। মিলনকে আটককারী এসআই রুপন নাথ ভিকটিম মিলনের বাবাকে জানায়, সে মাদক ব্যবসায় জড়িত। ৫০ হাজার টাকা না দিলে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হবে।

দেনদরবার শেষে ১০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেয়া হবে বলার পর পিন্টু ভৌমিকের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে ছায়েদল হক এনে দেন এসআই রুপন নাথকে। শুক্রবার গভীর রাত ২টার সময় সিএনজি চালক মিলনকে তার বাবা গ্রাম পুলিশ ও সিএনজি অটোরিক্সার মালিক পিন্টু ভৌমিকের কাছে থানার লকআপ খুলে হস্তান্তর করে। অবশিষ্ট ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসলে সিএনজি অটোরিক্সাটি ফেরত দেয়া হবে বলে জানায় রুপন নাথ।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিএনজি চালক মিলন রুপন নাথের দাবী করা অবশিষ্ট ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। বেআইনিভাবে থানায় পুলিশের আটক অবস্থা থেকে সিএনজি গাড়ীটিও উদ্ধার করে নিতে পারেনি অটোরিক্সা চালক মিলন।

আটক সিএনজি অটোরিক্সাটির মালিক পিন্টু ভৌমিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সিএনজি অটোরিক্সা ড্রাইভার মিলন এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তাই তাকে গাড়ীটির চালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করি। কিন্তু এসআই রুপন নাথ অহেতুক অসৎ উদ্দেশ্যে মিলনকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ফন্দি এঁটে তাকে প্রতারণা করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ৫০ হাজার টাকা দাবীর স্থলে ১০ হাজার টাকায় আমরা তাকে ও গাড়ী ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হই।

রাতে ৫ হাজার টাকা দিয়ে চালক মিলনকে ছাড়িয়ে নিই। বাকী ৫ হাজার টাকার জন্য গাড়ীটি এখনও বেআইনিভাবে থানায় আটক করে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে এসআই রুপন নাথ তার মুঠো ফোন নাম্বার থেকে আমার মুঠোফোন নাম্বারে অসংখ্য বার ফোন দিয়ে জানতে চান অবশিষ্ট ৫ হাজার টাকা দিয়ে কেনো সিএনজি গাড়ীটি ছাড়িয়ে নিচ্ছি না। পরে ৫ লাখ টাকা খরচ করেও গাড়ীটি উদ্ধার করতে পারবোনা বলে আমাকে হুমকি দেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এসআই রুপন নাথের বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের অভিযোগ আসছে। গত ৩০ জুন বসুরহাট বাজারের হক মার্কেট এলাকা থেকে ইলিয়াছ (২২), আলমগীর (৩৮) ও বেলাল (৩৮) নামের তিনজনকে একটি চাল কলের মাঠে জুয়ার আসর থেকে আটক করে এসআই রুপন নাথ। পরে ঘুষের বিনিময়ে এদের ছেড়ে দেন বলে তারা অভিযোগে জানান।

গত ২৬ জুন রাত ৮টায় করোনা যোদ্ধা পারভেজসহ কয়েকজনকে চরহাজারী ইউনিয়নের নদীর পাড়ে ৭টি মোটর সাইকেলসহ আটক করে প্রতিজন থেকে এসআই রুপন নাথ অনৈতিক পন্থায় টাকা আদায় করে মোটর সাইকেলগুলো ছেড়ে দেয়।

করোনা যোদ্ধা পারভেজের বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ সেলিমের হস্তক্ষেপের পর পারভেজকে তার মোটর সাইকেলসহ ছেড়ে দেয়। পারভেজ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথোলজি বিভাগের করোনা বিষয়ে আগত রোগীদের নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছে।

ইতোমধ্যে এসআই রুপন নাথের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যাক্তিকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে অনৈতিক পন্থায় টাকা আদায় করে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই রুপন নাথের সাথে স্থানীয় সাংবাদিকরা মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ ঘটনায় কারো কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আপনি পারলে বড় বড় করে পত্রিকায় লিখে দেন। আমি কোম্পানীগঞ্জের মানুষকে মেরে মামলায় আসামী করে তারপর আমি কোম্পানীগঞ্জ ছাড়বো। আমি এসআই রুপন নাথ বলছি। ডিআইজি নয়, আমি আইজিপি’কেও পরোয়া করি না। পারলে আপনাদের মন্ত্রীকে (ওবায়দুল কাদের) দিয়ে আমাকে বদলী করিয়ে দেন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান জানান, এ বিষয়টি সম্পূর্ণ আমার জানার বাইরে। কাউকে বিনা কারণে আটক করে টাকা আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি। যে কোন গাড়ীও বিনা কারণে আটক রাখা বেআইনি। তদন্ত করে আমি দোষীব্যাক্তি বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।