স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারের পরিকল্পনায় ভুল ছিলো?

৩০ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
১৫ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
০৮ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি
বৃহস্পতিবার

সম্পাদকীয়…

প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘চাঁদপুরে স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার অবশেষে নদীগর্ভে’ শিরোনামের সংবাদটি সচেতন মহলের চোখে পড়েছে। উঠে এসেছে অনেক প্রশ্ন। বিশেষ করে পরিকল্পনা বিষয়ে। কারণ, একটি ব্যায়বহুল বিল্ডিং তৈরিতে আগ পিছ ভেবে, ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করেই নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এই স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারটির বেলায় ভিন্ন চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা সচেতন মহল কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

একটি বিল্ডিং সরকারি সম্পদ, তো আমাদের সকলেরই সম্পদ। আমাদের সম্পদ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা কষ্ট পাই। আর সরকারের সম্পদ নষ্ট হলে অনেক সময় কারো কোনো মাথা ব্যাথা থাকে না। কিন্তু আদতে সেটা হওয়া উচিত নয়। সম্পদ নষ্ট হওয়া মানেই সকলেরই ক্ষতি হওয়া। কেননা এই স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার থাকলে বিপদের সময় অনেকেই ব্যবহার করতে পারতো। এখন তার মৃত্যু হয়েছে। সুতরাং পুনরায় অনুরূপ আরেকটি তৈরি করতে হলে অর্থের প্রয়োজন হবে। আর সেই অর্থ যে কোনোভাবেই হোক, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ থেকেই আসতো। অতএব, যেটাতে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ জড়িত, সেটা কেনো জনগণের সম্পদ হবে না?

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, ‘দৃষ্টিনন্দন চাঁদপুর রাজরাজেশ্বর ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার ত্রিতল বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণে সরকারের ব্যায় হয় ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।’ সত্যিই অনেক টাকার প্রশ্ন! এমন একটি সুন্দর ভবন নষ্ট হয়ে যাওয়া বড় দুঃখের বিষয়। যা’ আমরা কোনোভাবেই আশা করতে পারিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি যখন তৈরি হচ্ছিলো, তখন আরো বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিলো। বিশেষ এর স্থায়ীত্ব নিয়ে আরো চিন্তাভাবনা করা দরকার ছিলো বৈকি। ভবনটি যখন তৈরি হয় তখন নিশ্চয় পদ্মা-মেঘনার কথা ভাবা উচিত ছিলো। ভবিষ্যতে এই ভবনের কোনো ক্ষতি হবে কিনা সেটাও ভাবা দরকার ছিলো। নদীর ¯্রােত, গতিবিধি, নদীর ভাঙ্গন সবকিছুই মাথায় রাখা দরকার ছিলো। নদীর কাছাকাছি থাকলে ভবিষ্যতে এই ভবন টিকে থাকবে কিনা সেটাও চিন্তা করা দরকার ছিলো। হতে পারে এসব বিষয়ে খুব একটা জোরালোভাবে তেমন ভাবা হয়নি।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, খুব বেশিদিন ভবনটি বাঁচতে পারেনি। তার জীবনকাল খুবই সামান্য। উজান থেকে নেমে আসা বানের পানিতে পদ্ম-মেঘনার প্রবল স্রোতে গত ২৩জুলাই ভোরে দৃষ্টিনন্দন ভবনটি দেবে গিয়েছিলো ও হেলে পড়েছিলো। মাত্র এক সপ্তাহ ভবনটি নিজে নিজে প্রবল স্রোতের সাথে টিকে থাকার জন্যে যুদ্ধ করেছিলো। তখনও স্থাপনাটি দাঁড়িয়ে থেকে জানান দিয়েছিলো এই তো আমি এখনো বেঁচে আছি। যদিও কিছুদিন পর আমি নদীগর্ভে তলিয়ে যাবো। হায় হায়! ভবনের নিচের মাটি সরে গিয়ে দেবে গিয়েছে।

এখন কথা হলো, যে স্থাপনার অস্থিত্ব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি সেটির কাজের মান নিয়ে কি প্রশ্ন তোলা যায় কিনা? সাইট সিলেকশন কতোটা সঠিক ও যুক্তিযুক্ত ছিলো? কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বা ব্যর্থতা বলা যাবে কিনা? অথবা অহেতুক সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা কি পানিতে ভেসে যায়নি? উত্তরগুলো পাঠকের অবশ্যই জানা রয়েছে।

যদি সব দিক বিবেচনা করে স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারটি নির্মাণ করা হতো তাহলে সরকার তথা জনগণের কোটি টাকার লোকসান হতো না। যদি এই ভবনটি পরিকল্পনা করে নদী থেকে আরো দূরে নির্মাণ করা হতো তাহলে স্কুলটি আজো বেঁচে থাকতো। একসাথে অনেকগুলো ছেলেমেয়ের শিক্ষার ক্ষতি হতো না। এখন হয়তো অন্যত্র স্কুলের কার্যক্রম চলবে, কিন্তু এতে স্কুলের ছেলেমেয়েদেরও অনেক কষ্ট করে দূর থেকে স্কুলে আসতে হবে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্যে সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনার। অপরদিকে সাইক্লোন শেল্টার নাম দেয়া হয়েছে তার তো কোনো অস্তিত্ব রইলো না। যে কিনা বিপদগ্রস্তদের আশ্রয় দেবে সে নিজেই বিপদের মধ্যে জন্ম নিয়ে নিজেই সেই বিপদের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে নি:শেষ হয়ে গেলো। আমরা নিশ্চিত যে, এই ভবনটি নির্মাণে পরিকল্পনায় ভুল ছিলো। সত্যিই কি পরিকল্পনায় ভুল ছিলো?