লাখ টাকা উৎকোচ না পেয়ে নির্যাতিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী

মিজানুর রহমান রানা :
সারাটিজীবন কর্মময় জীবন পার করেছেন তিনি। এরপর কর্মময় জীবন শেষে অবসরে গেলেন সিরাজ উদ্দীন। অবসর জীবনটা মানুষের কাটে খুব মানসিক যাতনায়। এ সময় কাজ থাকে না বলে সমাজ ও সংসারে তাকে অবহেলিত হতে হয়। সেই অবহেলা কিছুটা পুনরুদ্ধার করে পেনশনের টাকা।

পেনশনের টাকা উত্তোলনের জন্যে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সিরাজ উদ্দীন তার পেনশনের কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্যে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানের দ্বারস্থ হান। কিন্তু ওই কর্মকর্তা সেই টাকা না দিয়ে লাখ টাকা ঘুষ চান। আর ঘুষ দিতে অপারগতা জানালে অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারী সিরাজ উদ্দীনকে নির্মমভাবে মারধর করলেন ওই কর্মকর্তা।

নির্যাতিত সিরাজ উদ্দীনকে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অফিস সহকারী সিরাজ উদ্দীন ১১ মাস আগে অবসরে যান। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সিরাজ উদ্দিন জানান, অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের কাগজপত্র স্বাক্ষরের জন্য জমা দিলেও দীর্ঘদিন ঘোরাতে থাকেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। বুধবার দুপুর ১টার দিকে ফাইলটি স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে গেলে মনিরুজ্জামান এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। অফিস সহকারী সিরাজ উদ্দিন সেই দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সিরাজ উদ্দিনকে কিল, ঘুষি, লাথি মারলে তিনি অফিসের ভেতর পড়ে যান। এ সময় অফিসের ভেতর থেকে পা ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এলে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

তবে অভিযুক্ত মো. মনিরুজ্জামান ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সিরাজ হিসাব-নিকাশ না দিয়ে তার ফাইলপত্রে স্বাক্ষর করাতে আসে। না করায় আমার ওপর চড়াও হলে উভয়ের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে।

বর্তমানে আমাদের সমাজে ঘুষ নামক এই হীন কাজটি চরমভাবে শিকড় গেঁড়েছে। মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ ও ¯্রষ্টার প্রতি ভয় কমে গেছে। বেশিরভাগ মানুষ এখন স্বীয় স্বার্থছাড়া তার কর্ম পালন করতে চায় না।

সরকারি যে কোনো অফিসে গেলেই এই ধরনের উৎকোচ দিতে হয়। সরকার পরিপূর্ণ বেতন দেয় কিন্তু তারপরও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মন ভরে না। কোনো কাজ করতে হলেই তাকে ঘুষ দিতে হবে। ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়বে না, এই হচ্ছে তাদের মন-মানসিকতা।

তবে, সময় গড়ায়। ওই কর্মকর্তা আবার যখন অবসরে যাবেন, তার কাছ থেকেও এভাবে ঘুষ নেওয়া হবে। তিনিও নির্যাতিত হবেন, কারণ এই পথটি তো তারই দেখানো পথ। যে পথে তিনি অন্যকে ডাইভার্ট করেছেন, সে পথে তাকেও একদিন যেতে হবে। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

০৫ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ২০ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি, বৃহস্পতিবার