চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত

সম্পাদকীয় …

আমাদের সারাদেশের কথা চিন্তা করলে আমরা দেখতে পাই যে, ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বিভিন্ন ফসল চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে দেশের কৃষকরা। এদিকটি চিন্তা করলে আমরা দেখি যে, মধ্যস্বত্বভোগী, বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও স্টক মালের ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে ফসল সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রি করে তারাই লাভবান হচ্ছে। আর এদিকে শ্রমের মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মাঠের কৃষকরা। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা চাষাবাদের আগ্রহ হারাবে। মুখ ফিরিয়েনেবে কৃষকরা। এর ফলে বাজারে খাদ্যের অভাব দেখা দেবে। তখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে, ফলে খাদ্যের অভাবে মানুষের জীবন অচল হয়ে যেতে পারে।

আমাদের বেঁচে থাকার জন্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাষীরাই অবদান রেখে চলেছেন। কেননা, তারা যদি কাজ না করেন তাহলে আমরা খাদ্য পেতে পারি না। সুতরাং সেদিকটি চিন্তা করলে আমাদের বেঁচে থাকা চাষীদের উপরই নির্ভর করছে। আর তাই তাদের কথা আমাদের সকলেরই চিন্তা করা উচিত। একটু দৃষ্টি দিলে আমরা বুঝতে পারবো যে, তারা আমাদের জন্যে সারাদিন প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম করছেন। কিন্তু সেহিসেবে তারা তাদের পরিশ্রমের মূল্যটা যথাযথভাবে পাচ্ছেন না। তাই চাষীদের স্বার্থের দিকেও আমাদের তাকাতে হবে। সর্বোচ্চ জোর দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

বাস্তবতায় এটা পরিস্কার যে, অনেক সময় ফসল বিক্রি করে খরচ অনুপাতে ভালো দাম কৃষকরা পায় না। যেমন-সোনালী আঁশ পাটের চাষেও কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বাজারে পাটের দ্বারা উৎপাদিত জিনিসপত্র বিক্রি কমে যাচ্ছে। জিনিসপত্র সংগ্রহের বস্তাগুলো সবই পলিথিনের হয়ে গেছে। বাজারে পাটের ব্যাগের বদলে পলিথিনের ব্যাগই বেশি ব্যবহার হয়। তাছাড়া পাট চাষে শ্রমিকের মজুরি, জমি চাষ, বীজ কেনা, সেচ দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, পাট কাটা ও জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানো, শুকিয়ে বাজারজাত করা সবকিছুতেই অনেক খরচ হয়। ধান চাষেও একই রকম অবস্থা। কোনো কোনো মৌসুমে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একারণে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষে ঝুঁকে যাওয়ায় বাজারে কোনো কোনো সময় হঠাৎ করেই নির্দিষ্ট একটা ফসল তেমন দেখা যায়। এ কারণে সেই ফসলের মূল্য সে বছর খুবই বেড়ে যায়।

কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় একেক মৌসুমে একক ফসলের চাষাবাদ কমতে থাকে। কেননা চাষাবাদে যে পরিমাণ খরচ হয়, লেবার খরচ হয় ও পরিশ্রম হয় সে অনুযায়ী তারা তাদের খরচের টাকাও তুলতে পারে না ফসল বিক্রি করে। তাছাড়া চাষাবাদের খরচ বৃদ্ধি, শ্রমিক সঙ্কট, পানির অপ্রতুলতা এবং ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফসল চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন চাষীরা। তাদেরকে হতাশার মধ্যে দিন পারতে হয়। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা হারিয়ে ফেললে খাদ্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের আরো তৎপরতা জোরদার করা হলে কৃষকরা আনন্দের সাথে কাজ করতে পারে।

অতএব, আমরা মনে করি বিভিন্ন কারণে চাষীদের স্বার্থ রক্ষা কোনোভাবেই হচ্ছে না। তাই চাষীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করলে তারা চাষাবাদের প্রতি মনোযোগী হবে। এজন্যে আমদানী ও রপ্তানির দিকে বিশেষ নজরদারি বাড়াতে হবে। আমাদের দেশের চাষীদের স্বার্থের কথা করতে হবে। যেন আমাদের দেশের চাষীরা বাঁচতে পারে। আর চাষীরা ভালোভাবে বাঁচতে পারলে আমরাও বেঁচে থাকতে পারবো।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

আপডেট সময় : ১০:৩১ এএম

২২ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ০৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪২ হিজরি, রোববার