ছাত্র-অভিভাবকের মধ্যে কী প্রভাব পড়বে?

সম্পাদকীয় …

আমরা সবাই জানি, শিক্ষক সমাজ মানুষ গড়ার কারিগর। তারা ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবেন, তাদের জ্ঞান প্রদান করবেন, সুশিক্ষা প্রদান করবেন, দেশের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেন-এটাই আমরা সকলে জেনে আসছি। অতএব, সেদিকটি হিসেব করলে একজন শিক্ষক হবেন আদর্শবান। যেন তাকে দেখে অন্যরা উৎসাহিত হয় ও তার কাছ থেকে শিখতে পারে। তাই শিক্ষকদের সকলেই সম্মান করে ও মর্যাদা দেয়। সমাজের মানুষ শিক্ষকদের ভালো চোখে দেখে। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা সকলেই তাকে সম্মান প্রদান করে। এটা আমাদের সামাজিক স্বাভাবিক চিত্র।

কিন্তু সেই মানুষ গড়ার কারিগর যদি চরিত্রহীন হয়ে যায় তখন সেখানে প্রশ্ন দাঁড়ায়। সম্মানের জায়গাটি নষ্ট হয়ে যায়। প্রিয় সময়ে ‘প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকর্মীর অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি নিয়ে শিক্ষক সমাজসহ সর্বত্র প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে এই শিক্ষক-শিক্ষিকার কর্মকা-ের জন্যে সমাজে কী প্রভাব পড়বে। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে কেমন প্রভাব পড়বে?

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, এই ঘটনার কারণে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। চারিদিকে হৈচৈ ও সমালোচনার ঝড় উঠে গেছে। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা অনেকে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছে না। কেননা এ ধরনের ঘটনা কোমল শিশুদের মধ্যে দারুণভাবে রেখাপাত করে। অন্যরকম গুঞ্জনে চারিদিকে হাসাহাসির মতো পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে গেছে; সেই সাথে লজ্জার জায়গাটাও বাড়িয়ে তুলেছে কোমলমতি শিশুদের হৃদয়ে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, ‘বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে নারী সহকর্মীর অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল হয়েছে’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এই ছবি চারিদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় সকলের যেখানেসেখানে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। আর এ নিয়ে সুষ্ঠু বিচারের জন্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, চাকরি দেয়ার নামে ঘুষ, শিক্ষক বদলি বাণিজ্যসহ ১৭টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অন্তরঙ্গ ছবিটি স্ট্যাটাস দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে এবং এলাকায় নানা গুঞ্জনসহ আলোচনার ঝড় উঠে গেছে। দুই সন্তানের জননী ওই শিক্ষিকার সাথে বিভিন্ন সময় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সমাজের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে।

ওই শিক্ষিকা বর্তমানে উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমর্রত রয়েছেন। আর শিক্ষক মোক্তার হোসেন বিভিন্ন সময় প্রধান শিক্ষিকাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন কাজের বাহানায় সময় কাটাতেন। এভাবেই তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠে। উল্লেখিত প্রধান শিক্ষক তার প্রথম স্ত্রীকে গত ২৭ সেপ্টেন্বর নোটারির মাধ্যমে তালাক দেয় এবং ২৯ সেপ্টেন্বর নোটারির মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকার কাবিনে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠা প্রেমিকাকে বিয়েও করেন।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আরো জেনেছি যে, ‘–বিয়ের পরও মোক্তার হোসেন প্রথম স্ত্রীর কাছে থাকায় দ্বিতীয় স্ত্রী স্বামীর অধিকার পেতে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলালের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় শিক্ষক মোক্তার হোসেন। পরে বিয়ের আগে ওই শিক্ষাকাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তোলা অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।’ আর এভাবেই সমাজের সকল স্তরের মানুষ প্রকাশ্যেই তাদের এই অপকর্মের কথা জেনে যায়।

সত্যি, এসব ঘটনা আমাদের সকলের জন্যেই লজ্জাজনক। ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকরা লজ্জার মধ্যে পড়েছে। সেই সাথে শিক্ষক সমাজও লজ্জায় মাথায় হেট হয়ে গেছে। অন্তত শিক্ষকদের কাছে এ ধরনের ঘটনা মোটেও আশা করা যায় না। ঐ শিক্ষকদের দ্বয়ের জন্যে একটি কঠিন বাক্য যে, ‘–তারাই বাবুগঞ্জে শ্রেষ্ঠ প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক করেছেন।’ সুতরাং কতোটা লজ্জার মধ্যে পড়লে এমন বাক্য সৃষ্টি হতে পারে।

অতএব, আমরা আশা করি, অন্তত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। যেন সমাজের মানুষের কাছে শিক্ষক সমাজের সম্মানটুকু অটুট থাকুক। সেই সাথে আমাদের বক্তব্য হলো, দু’একজন শিক্ষকের কারণে শিক্ষক সমাজ নষ্ট হতে পারে না। অথবা, অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনার কারণে সকলকে খারাপ বলার বা ভাবারও কোনো যৌক্তিকতা নেই।

আমরা খবরের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, সঠিক সংবাদ পরিবেশনই আমাদের বৈশিষ্ট্য

আপডেট সময় : ০৪:১১ পিএম

২৩ নভেম্বর ২০২০ খ্রি. ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪২ হিজরি, সোমবার