অটোগাড়ি নিয়ে ধাক্কাধাক্কি

সম্পাদকীয়…

গ্রাম অথবা শহরে সর্বত্র অটোগাড়ির পরিমাণ বেড়েই গেছে। এসব গাড়ির লাইসেন্স কিম্বা গাড়ি চালকদের লাইসেন্স নেই। সেই সাথে এই গাড়িগুলোর দিনের পর দিন যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে, সেই সাথে দুর্ঘটনাও বেড়ে চলেছে। কেননা এসব গাড়ির চালকরা কোনোভাবেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়।

সুতরাং যে কেউ ইচ্ছা করলেই রাস্তায় অটোগাড়ি বের করতে পারে। কোনো নিয়ম কানুন এসব চালকরা মানে না। ফলে দুর্ঘটনায় প্রায়ই মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এসব গাড়ি।

প্রিয় সময়ে ‘দোহারের লটাখোলায় অটোগাড়ির ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি মর্মান্তিক ঘটনার কথা। শুধু তাই নয়, প্রায় সময়ই এই হাল্কাযানে চড়ে পথচারীরা দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। তাছাড়া অনেক সময় এসব গাড়ির চালক ও গাড়িতে থাকা যাত্রীরাও প্রাণ হারায়। এমন খবর আমরা প্রায়ই শুনে থাকি।

আমরা প্রায়ই অভিযোগ শুনতে পাই যে, এসব গাড়ির চালকরা খুবই দ্রুত গতিতে অটোগাড়ি চালিয়ে থাকে। ফলে অন্য কোনো গাড়ির সাথে সামান্য আঘাত লাগলেও অটোগাড়ি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে ও দুর্ঘটনা শিকার হয়। যে পরিমাণ গতিতে চললে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেই অনুযায়ী চালকরা চালায় না।

অনেক সময় দ্রুতগতিতে চালানোর ফলে তিন চাকার যানটি নিজে নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, এমন খবরও আমরা অতীতে পেয়েছি। আর গাড়িতে যদি যাত্রী থাকে তখন যদি দ্রুত গতিতে চালানো হয় তাহলে সামান্য আঘাত লাগলেই খুব সহজে অটোগাড়ি উল্টে যায়।

চালক কোনোভাবেই অটোগাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। অটোগাড়ির দুর্ঘটনায় মাথায় ও কোমড়ে গুরুতর আহত হওয়া, স্কুলগামী শিশু ও রাস্তার পাশে চলাফেরারত শিশুদের মৃত্যুসহ নানা দুর্ঘটনার খবর আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। শুধু তাই নয়, বড়রাও এর হাত থেকে রক্ষা পায় না।

খেটে খাওয়া মানুষকে কাজ করতেই হবে। তাদেরকে বেঁচে থাকার জন্যে জীবিকা গ্রহণ করতেই হবে। হয়তো নিজের জমানো টাকায়, কিস্তিতে কিম্বা লোন করে উপার্জনের জন্যে মানুষ অটোগাড়ি কিনে থাকে ও রাস্তায় নামিয়ে থাকে। চালকের অদক্ষতা, গাড়ি হাল্কা, দুর্বল-এসব আলোচনা ও তর্কে কোনো সমাধান আসবে না। অথবা অটোগাড়ি রাস্তা থেকে তুলে দেয়াটাও বড় কোনো সমাধান হতে পারে না বলে আমরা মনে করি। অতীতে অটোগাড়ি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, হয়েছে নিয়মও। তবে দুর্ঘটনা যেভাবে হচ্ছে তাতে ভালো কোনো সমাধান হয়েছে বলে মনে করি না।

তবুও অটোগাড়ি নিয়ে ধাক্কাধাক্কি এখনো কম হচ্ছে না। কিন্তু আমরা মনে করি, এসব অটো চালকের বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকা দরকার। রাস্তায় চলাচলের জন্যে ধরাবাঁধা নিয়ম করে দেয়া উচিত। তাহলে হয়তো এসব অটোগাড়ির দুর্ঘটনার কারণে মানুষের প্রাণহানির পরিমাণ কমে যাবে।

অটোগাড়ির কারণে প্রাণ হারিয়েছে এমন পরিসংখ্যান আমাদের জানা না থাকলেও এর পরিমাণ কিন্তু কোনো অংশেই কম নয়। দুর্ঘটনা এড়াতে অটোগাড়ি ও চালকের রাস্তায় চলাচলের জন্যে সরকারি নিয়মনীতি বেধে দিলে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবে পথচারী ও যাত্রীরা। সেই বৃদ্ধের মতো অটোগাড়ির ধাক্কায় আর কেউ প্রাণ হারাবে না। বিষয়টি ভেবে দেখার জন্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।