জিনের বাদশার প্রলোভনে!

সম্পাদকীয় ….

সাবধান! আরো সাবধান হতে হবে সকলকেই! কেননা জিনের বাদশারা যেমন মোবাইলের মাধ্যমে প্রলোভন দেখায়, তেমনি স্বশরীরেও প্রলোভন দেখায় সাধারণ মানুষকে। আর তাদের প্রলোভনে মানুষ হাজার হাজার টাকা হারায়। তবুও কেনো জানি এসব জিনের বাদশার প্রলোভনে মানুষজন পা পাড়ায়। অর্থাৎ তাদের মোটিভেশন ক্ষমতা এতো বেশি যে, মানুষকে খুব সহজেই কব্জা করে ফেলতে পারে। সাধারণ মানুষের মনকে একেবারে গলিয়ে ফেলতে পারে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। আর মন গলে যাওয়া ঐ সব মানুষের সর্বস্ব হাতিয়ে নেয় জিনের বাদশারা।

প্রিয় সময়ে ‘কোটি কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিল ‘জিনের বাদশা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি জিনের বাদশার কেরামতি সম্পর্কে। বড়ই হাস্যকর জিনের বাদশার কেরামতি। কিন্তু ধরা পরার পর সবকিছু ফাঁস হয়ে গেছে জিনের বাদশার। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, জিনের বাদশা পরিচয়ে যে কোনো অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার ক্ষমতা দেখিয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলে।

তাছাড়া সাদা কাগজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা তৈরি করে দেয়ার প্রলোভন দেখানোটা অন্য একটি কৌশল। যদিও আমরা জানি এটি কঠিন কাজ, কিন্তু মানুষকে লোভ দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করাটা আশ্চর্যের বিষয়ই বটে। আর সেই বিশ^াসের দুর্বলতার সুযোগে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। ঐ সুচতুর জিনের বাদশাদের চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। না জানি এবার জিনের বাদশাদের কী অবস্থা! গ্রেফতার হওয়া জিনের বাদশারা হলেন- মো. তারিকুল ইসলাম (৪০) (জিনের বাদশা), মো. আব্দুল্লাহ বিশ্বাস (৩৩), মো. আল মাসুম (২৮) ও মো. সাইদুল ইসলাম রাজু (৩০)।

ঘটনার বিবরণে আমরা জানতে পেরেছি, ‘ভুক্তভোগী মো. আব্দুল খালেক খানের স্ত্রী ও সন্তান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যে পরিচয় হয় জিনের বাদশা তারিকুল ইসলামের সঙ্গে। যোগাযোগের একপর্যায়ে জিনের বাদশা খালেককে বলেন, সে চিকিৎসা করতে পারবে। এজন্য জিনের বাদশা পরিচয়ে সে কিছু ওষুধ দেয়। এরপর যে কোনোভাবে খালেকের স্ত্রী-সন্তান কিছুটা সুস্থ হয়। সুস্থ হওয়ার পরে জিনের বাদশার প্রতি খালেকের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়।’ আর এ বিশ^াসকে পুঁজি করে দুষ্ট প্রতারক জিনের বাদশা সেজে মানুষের বিশ^াস নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। জিনের বাদশা জানায়, ‘যতো টাকা দরকার ততো টাকা তৈরি করে দিতে পারবে। প্রমাণ হিসেবে জিনের বাদশা খালেকের সামনেই একটি বালতির মধ্যে রাখা সাদা কাগজে কৌশলে ১০০০ টাকার একটি চকচকে নোট তৈরি করে দেয়। আরও বেশি বিশ্বাসের জন্য খালেক জিনের বাদশাকে বলেন- এটা তো নতুম নোট আপনি কিছু পুরাতন টাকা তৈরি করে দেখান। এরপর সে ওই বালতির মধ্যে কিছু পুরাতন টাকা তৈরি করে দেখায়।

ম্যাজিকের মতো এমন ঘটনা দেখে খালেকের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। খালেকের চাহিদা অনুযায়ী ছয় কোটি টাকা জিনের বাদশা তৈরি করে দেবে। এক্ষেত্রে একটি শর্তজুড়ে দেয় জিনের বাদশা। শর্ত অনুযায়ী পৃথিবীর সব মসজিদে কোরআন শরীফ কিনে দিতে হবে। কোরআন শরীফগুলো কিনতে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা লাগবে। তার কথায় বিশ্বাস করে বাজার থেকে ছয় কার্টন এ ফোর সাইজের সাদা কাগজ কিনে আনেন খালেক। কাগজ কিনে আনার পর জিনের বাদশা বলেন- আপনারা যতদিন কোরআন শরীফ কেনার জন্য এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা দিতে পারবেন না, ততোদিন কার্টনটি খোলা যাবে না।

এ কথায় বিশ্বাস করে আব্দুল খালেক কার্টনটি নিয়ে ঘরের এক কোনায় রেখে দেন। জিনের বাদশার এমন প্রলোভনে আব্দুল খালেক দফায় দফায় এক কোটি ১৩ লাখ টাকা জিনের বাদশাকে দেন। খালেকের পরিচিত একজন আরও ৫৩ লাখ টাকা দেন। এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা হতে আরও দুই লাখ টাকা বাকি থাকে। তাদের বাকি দুই লাখ টাকা দেয়ার জন্য জিনের বাদশা চাপ দিতে থাকেন। ‘একপর্যায়ে খালেকের সন্দেহ হতে থাকে। আসলেও এই কার্টনে এত টাকা আছে কি-না। এমন সন্দেহে খালেক কার্টনটি খুলে দেখে টাকা তো দূরের কথা, তার কেনা সাদা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নেই। এ সময় প্রতারক চক্রটি ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে বাকি দুই লাখ টাকা এসএ পরিবহনের মাধ্যমে পাঠাতে বলে। প্রতারক চক্রের বিষয়ে ভুক্তভোগী সিআইডিতে অভিযোগ দিলে সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম এর একটি টিম ফাঁদ পেতে তাদেরকে গ্রেফতার করে’।

সুতরাং এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা আমাদের সমাজে ঘটেই চলেছে। অতএব, আমাদের আরো সাবধান হতে হবে। অন্যথায় আমরাও এভাবে জিনের বাদশাদের ফাঁদে পেড়ে যেতে পারি। এসব ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়, খুব সহজে জিনের বাদশা পরিচয়ে ব্যক্তিদের বিশ^াস করা উচিত নয়। আমাদের বুঝতে হবে যে, তারা প্রতারক। মানুষকে ঠকানোর ফন্দী করে থাকে। সরল মানুষদের সরল বিশ^াসে মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয়ার জন্যেই তারা এ ধরনের মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে থাকে। জিনের বাদশার প্রলোভনে যেন আমরা না পরি সেজন্যে আমাদের সবসময় এ জাতীয় মানুষের থেকে সাবধান থাকতে হবে।