জীবনে অনেক দুর্ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি থেকেই ঘটে!

সম্পাদকীয়

যে কোনো ঘটনায় সূচনালগ্নে খুবই নগণ্য থাকে। আমাদের নিজেদের কিছু গোঁয়ারতুমীর কারণে অথবা অসতর্কতা অথবা ভুল বোঝাবুঝির কারণেই ক্ষুদ্র বিষয়টি বৃহৎ আকার ধারণ করে। আর তখন ঘটনার ফলাফলে নির্মমতার পরিণতি দেখা দেয়; যা আমরা কোনোভাবেই কামনা করি না; কেউ কামনা করে না। অথচ একটু সতর্কতা ও ধৈর্য্যই আমাদের অনেক বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। সত্যিই আমাদের সহনশীলতার বড়ই অভাব। ধৈর্য্য গুণ আমাদের নেই বললেই চলে।

আমাদের রক্ত গরম। মেনে নেয়ার গুণটি আমাদের নেই। কারো ভুলটা শোধরে দেয়ার সময় আমাদের হয় না। মানুষের মনমেজাজ সবসময় এক থাকে না। তাই কারো সামান্য উচ্চ বাচ্য আমরা তাৎক্ষণিক সইতে পারি না। যেমন ব্যবহার আমরা পাই, ঠিক তেমন ব্যবহারই আমরা করি। আর তাতে রণক্ষেত্র ছাড়া আর কিছুই মিলে না।

প্রিয় সময়ে ‘ফরিদপুরে ভুল বোঝাবুঝি থেকে রণক্ষেত্র সালথা, পুলিশসহ আহত ৩০’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম সালথার নির্মমতার কথা। সত্যিই এ ঘটনায় আমরা হতবাক হয়েছি। এমন নির্মম পরিণতি আমরা মোটেও আশা করি না, কেউ আশা করে না। আমরা সকলেই শান্তিতে থাকতে চাই। তবুও হঠাৎ আমরা নিজেরাই শান্তিকে তাড়িয়ে দিয়ে অশান্তিতে ডুবে যাই। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ‘লকডাউনের মধ্যে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিয়ে বাকবিতÐা থেকে সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ফরিদপুরের সালথা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় থানা, উপজেলা পরিষদ এবং এসিল্যান্ডের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে জনতার সঙ্গে কর্মকর্তাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়। এতে উভয় পক্ষ তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা পরিষদ, থানা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট, ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।’ কিন্তু কেন এমন হবে? একটু হিসাব করে আমরা দেখি যে, এ ঘটনায় আমরা কী কী ক্ষতি হয়েছে। গুরুতর আহত হওয়াসহ সম্পদের কম ক্ষতি হয়নি। অপরদিকে মানুষের সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আতঙ্কের মধ্যে থেকে মানসিকভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে। আবার ব্যবসায়ীদেরও বেচাকেনা বন্ধ রাখতে হয়েছে, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে।

এই লকডাউন মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যে-এটা সকলকে মাথায় রাখতে হবে। মানুষজন জটলা বেধে থাকবে, এতে তাদেরই রক্ষার জন্যে ও করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্যে নির্দেশনা দেয়া মোটেও মন্দ নয় বা বিরক্তিকর কোনো বিষয় নয়। এতে উত্তেজিত হবার কিছু নেই। কিন্তু কিছু মানুষের খামখেয়ালিপনার জন্যে কখনো কখনো জরিমানাও করতে বাধ্য হতে হয়। যেন আরো সতর্ক হতে হয়। তাই বলে উত্তেজিত ও বাকবিতÐায় জড়ানো মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। কেউ আপনাকে সতর্ক হতে বললে, তার উপর হামলা করা, বিক্ষোভ করা ও অফিস, গাড়ি ভাংচুর বা পোড়ানো ঠিক নয়। ঘটনার বিবরণে মনে হচ্ছে, হামলাকারীরা কোনো সাধারণ জনতা হয়তো ছিলো না। এদের পেছনে দুষ্টচক্রের ইন্ধন থাকতে পারে- যে কারণে সরকারি গাড়ি, অফিস-আদালতে হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছে ৩০ জন। আহতদের নগরকান্দা ও ফরিদপুর মেডিকেলে ভতি করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।

সর্বোপরি, একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেলো। এ ঘটনায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, যা হবার কথা ছিলো না। তবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন যথার্থ। প্রকৃতপক্ষে যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সেই সাথে লকডাউন সার্থক করতে ও করোনা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে আরো কঠোরতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি। তবে এই দুঃখজনক ঘটনা আমাদের জানিয়ে দিয়ে গেলো যে, জীবনে অনেক দুর্ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি থেকেই ঘটে!