অপারেশন : মৃত্যু ও স্বাধীনতা

যুবক অনার্য :

ব্যাধিবিধ্বস্ত মানুষগুলির দিকে তাকাও- নক্ষত্র খসে পড়বার মতো তাহারাও খসে পড়ে পৃথিবীর ছুরিপতিদের কাছে।

রূপম, আজ তোমকে আমি বোলতে পারি বন্যা দুর্গতদের কথা- কীভাবে বেঁচে আছে তারা, জলের পেয়ালায় চরের ভিতর আটকে পড়া জাহাজের মতো। আমি বোলতে পারি যুদ্ধবিধ্বস্ত হিরোসিমার কথা এবং এ বিশ্বের অন্যান্য বিধ্বস্ত এলাকার কথাও।বোল্লে তোমার ভিতর সৃষ্টি হবে চৈতন্য এক যা ছিলো না ইতিপুর্বে মনের মাঝারে তোমার সেরকমভাবে। তুমি হয়তো হয়ে উঠতে চাইবে বিপ্লবী পুরোদস্তুর বিদ্রোহী একজন!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে সেন্ট্রাল পয়েন্ট বোলে কিছু নেই যাকে ইয়েটস বলেছিলেন : and a terrible beauty is born।

তুমি বিদ্রোহী হবে তবে কার বিরুদ্ধে- নির্দিষ্ট কেউ আছে কি?নেই।তুমি হয়ে উঠবে ভাববাদী আদর্শবাদীটাদি কিন্তু আখেরে ফলাফল পৌঁছুবে গিয়ে শূন্যের কোটায়। তাই আমি আজ তোমাকে ওসব বলতে চাই না কিন্তু এটাও সত্য যে তোমাকে কিছু একটা বোলতে আমি চাই। একদিন অচিরেই আমি থাকবো না।আমি কখোনই চাই নি আলু পটল পেঁয়াজের কারবারি হয়ে বেঁচে থাকি।
তাই,তোমার ক্ষেত্রেও আমার চাওয়াটা ঠিক একই রকম কিন্তু প্রশ্ন হলো তোমার প্রথম টার্গেটটা কী হবে।তুমি কি কাজ করবে সমগ্র বিশ্ব নিয়ে নাকি ভয়ে জবুথবু হয়ে কুঁকড়ে থাকা তোমার এই দেশটাকে নিয়ে নাকি নিদেন পক্ষে তোমার উপজেলা নিয়ে আর কাজটই বা কী! রূপম, আজ এই চল্লিশোর্ধ আমি হারিয়ে ফেলেছি খেই।

বুঝতে পারছি না একজন রূপম বা একজন মান্তু আসলে কী করবে -যে-রূপম-মান্তুরা জন্ম নেয়নি, নিতে পারে না কখনোই শুধু নিজেদের ভালোমন্দের দিকে তাকিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিতে একটা জীবন। রূপম আর মান্তুদের আমি দিতে চেয়েছি একটি অবয়ব যে -অবয়ব ছিলো নেলসন ম্যান্ডেলার ফিদেল ক্যাস্ত্রোর চে গুয়েভারার মাষ্টারদা সুর্যসেন খুদিরাম প্রমুখের। যুদ্ধবাজ এই পৃথিবী আজ দারুন ভাবে নষ্ট নষ্ট আর নষ্ট হয়ে গেছে।আমি একবার সেই প্রথম যৌবনে লিখেছিলাম – নির্বিঘ্ন এই পৃথিবী কখোনই বেঁচে ছিলো সহজ সরলতা নিয়ে? আসলে এই প্রশ্নটির উত্তর আমারও জানা নেই।তুমি দেখেছো — রাতের পর রাত আমি ঘুমাই নি, পারছি না ঘুমিয়ে যেতে।

ঘুমিয়ে যাবার পূর্বে আমাকে অন্তত একবার জেগে উঠেতই হবে। জাগিয়ে তুলতে হবে তোমাকে জাগিয়ে তুলতে হবে মান্তুকে। সেই মান্তু যে কোনোদিন তার নিজের সুখের কথা একটিবারও ভেবে দেখেনি -এবং এটা আমি জানি অনেক আগে থেকেই। মুশকিল হলো আমাদের সামনে তো একটা টার্গেট থাকা চাই -কী হবে সেই টার্গেট – মানবতাবাদ? হ্যাঁ তাতো বটেই কিন্তু এই মানবতাবাদ সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা কোনো সহজ কম্ম নয়।তবে আমি মনে করি তা অসম্ভবও নয়, কারণ নিজেই যদি অসম্ভব ভেবে বসি তাহলে আর এগুনো যাবে না এমনকি আধা হাত রাস্তাও।তবে ঘুরে ফিরে সেই প্রশ্নটি দাঁড়িয়েই যায়- আমাদের টার্গেট এবং কর্ম পদ্ধতি সেইসংগে এলাকা ক্ষেত্র বা অঞ্চল।

মনে পড়ে গেলো সেই কথাটি- cherity begins at home- বাক্যটি বলতে চাইছে -প্রথমে শুরু করতে হবে ভয়ে কুঁকড়ে পড়া এই বাংলার মাটি থেকেই।তোমাদের বীজমন্ত্র থাকবে একটাই- আমরা আজ মরতে এসেছি মৃত্যুর মধ্য দিয়েই আমরা বেঁচে থাকতে চাই, বিখ্যাত সেই বাক্যটির মত- ” মোরা বিধাতার মত নির্ভয় মোরা প্রকৃতির মতো সুন্দর “। রূপম, তুমি কি বুঝতে পারছো- আমি কী বোঝাতে চাইছি!

তবে সহজ করে বলি- স্বাধীনতা-উত্তর সবুজ শ্যামল এই দেশটির আজকে সবচে বড় সমস্যা হলো: কেউ কিছু বোলবার সাহস পাচ্ছে না, ভয়ে দুমড়ে মুচড়ে একেবারে কুঁকড়ে গেছে যেনো!

তোমাদের প্রথম টার্গেট হবে সেই ভয়টাকে ভেঙে ফেলা আর ভেঙে ফেলতে হলে যা লাগবে সেটা হলো মৃত্যকে ভালোবেসে আলিংগন করা।

এসো রুপম এসো মান্তু আমরা শপথ করে বলি:হে দেশবাসি, স্বাধীন বাংলাদেশকে আমরা পুনরায় স্বাধীন করতে এসেছি।হায়দার ভাইয়ের গানটি মনে পড়ে যায়- ” পঁচিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাকে খুঁজছি।”মেঘে মেঘে অনেক বেলা হল।

এসো এবার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হই, মেরে ফেলবার জন্য প্রস্তুত হই,এসো আগুন জ্বালিয়ে দেই তবে তার আগে প্রস্তুত থাকতে হবে মানুষকে ভালোবাসার জন্য, ভালোবেসে বারাবার প্রত্যাখ্যাত হবার জন্যেও কেননা এটাই বিপ্লব, বিপ্লব হলো তাই যা মানুষকে সহনশীল হতে শেখায়, বিপ্লব মানেই কিন্তু মেরে ফেলা নয় মরে যাওয়াও নয়। বিপ্লব মানে হল সকলকে নিয়ে একসংগে বেঁচে থাকবার উদ্দেশে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা যেরকম অনিবার্য মৃত্যুকে জেনে ফেলবার পরেও হরিণ প্রস্তুত থাকে ডিঙিয়ে যেতে চিতার অবিসংবাদিত ক্ষিপ্রতা !