পঞ্চগড়ের বোদায় নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৯, নিখোঁজ ৩

এন এ রবিউল হাসান লিটন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় চতুর্থ দিনে আরও হিমালয় চন্দ্র (২২) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯ জনে। এসব মরদেহ পঞ্চগড়ের ও দিনাজপুর বিভিন্ন নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য মতে, ৬৯ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩ জন।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায়। তিনি বলেন, এখন পযর্ন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিখোঁজ ৩ জনের উদ্ধারে কাজ চলছে।

গতকাল বুধবার বিকেলে ৪.৩০ মিনিটে হিমালয় চন্দ্র (২২) এর মরদেহ উদ্ধার করে তার আত্মীয় স্বজন ও দমকল বাহিনীর কর্মীরা। হিমেল উপজেলার ময়দানদিঘী খালপাড়া গ্রামের বীরেন্দ্রনাথের পুত্র। হিমেল দেড় মাস আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আড়াইটার ঘাটে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় নৌকাডুবির ঘটনায় হিমালয় তার নববধূ বন্যা, মামাতো দুই বোন কবিতা রানী (৯) ও পুতুল রাণীর (১৫) কে নিয়ে নৌকায় উঠে। বন্যা সে দিনেই বেঁচে গেলেও হিমালয়সহ তার দুই মামাতো বোন নিখোঁজ ছিলো। গত মঙ্গলবার দুপুরে নিখোঁজ দুই বোন কবিতা রানী (৯) ও পুতুল রাণীর (১৫) মরদেহে উদ্ধার হয়। এবং বুধবার বিকেলে হিমালয়ের মরদেহ উদ্ধার করে হয়।

হিমেল চন্দ্র উপজেলার ময়দানদিঘী খালপাড়া গ্রামের বীরেন্দ্রনাথ-সারদা রানী দম্পতির ছেলে। হিমালয় চন্দ্রের সাথে বন্যার দেড় মাস আগে বিয়ে হয়। মেহেদীর রং না মুছতে বিধবা হলেন বন্যা।

এর আগে গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আড়াইটার ঘাটে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ধারন ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী ওঠায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে এলাকাবাসী জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে নৌকায় বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রায় শতাধিক মানুষ।

মৃতদের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৬ জন, দেবীগঞ্জের ১৭ জন, আটোয়ারীর ৩ জন ও ঠাকুরগাঁওয়ের ২ জন পঞ্চগড় সদর ১ জন রয়েছেন। ৬৭ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন এবং পুরুষ ১৮ জন। বাকি ২১টি শিশু রয়েছে।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ দিনের শোক দিবস ঘোষনা করা হয়েছে।

এদিকে নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্তে কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, ইতোমধ্যে উদ্ধারকৃত মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের সৎকারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাথাপিছু ২০ হাজার এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে তদন্ত কমিটির সময় ৩ দিন বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম।


তিনি বলেন, মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটির সবাই উদ্ধার অভিযানের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় তাদের তদন্তের কাজ ব্যহত হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের দিক বিবেচনায় তাদের আরও ৩ দিনের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।