দেশের নবীন লেখকদেরকে সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ প্রদানে প্রিয় বাংলাকে অভিনন্দন

সম্পাদকীয়
পরিশ্রমের গতি, মেধার গতি, চর্চার গতি আরো বেড়ে যায় উৎসাহ পেলে। এটা সকলেই স্বীকার করবেন। সুতরাং উৎসাহ প্রদানে কর্মক্ষমতা বাড়ে শতগুণ। প্রতিটি ভালো কাজের প্রশংসা মানুষকে আরো ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। কেউ ভালো কাজ করলে তাকে উৎসাহিত করা সবচেয়ে ভালো আরেকটি কাজ।

ভালোকে উৎসাহিত করতে পারলে অন্যরাও উৎসাহ পাবে। তারাও ভালো হতে চাইবে এবং ভালো কাজ করতে চাইবে। আমরা সকলেই জানি যে, প্রেরণা ও উৎসাহ কর্মস্পৃহার উৎসমূল। এর মাধ্যমে পরিশ্রমীকে তার পূর্ণশক্তিকে বিকশিত করা সম্ভব। আমরা দেখি, সমাজ বা রাষ্ট্র ভাল কাজকে উৎসাহিত করতে পদক বা সম্মাননা প্রদান করেন। নিঃসন্দেহে এটা ভালো উদ্যোগ।

একজন লেখক বা কবির জন্যে এটা অনেক বড় পাওয়া। তাছাড়া পদক বা সম্মাননা একজন কবি লেখকের কাজের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানকে আরো ভাল কাজ করতে সহায়তা করে। আমি মনে করি, একজন মানুষকে যদি সমর্থন জানাতে হয়, স্বীকৃতি দিতে হয়- তাহলে তাঁর জীবদ্দশায় তা’ দেয়া উচিত।

প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘দশ লেখক পেলেন প্রিয় চয়েস পুরস্কার’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদে জানতে পারলাম, যা’ আমাদের সকলকে আনন্দিত ও উৎসাহিত করেছে। আমাদের সমাজে একটি গোষ্ঠী রয়েছেন, যারা নীরবে সমাজকে সৃজনশীল করতে সদা কাজ করে চলেছেন। তারা হলেন আমাদের লেখক বা কবি সম্প্রদায়! আমরা জানি, অনুপ্রেরণা ছাড়া কেউ অন্তর্নিহিত সক্ষমতা পূর্ণতা পায় না।

আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, প্রিয় বাংলা প্রকাশনের পক্ষ থেকে বিজয়ী দশ লেখককের সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী বিজয়ী দশজন লেখক হচ্ছেন- হাসান রাউফুন, নাহিদ ফেরদৌসী, আবুল কালাম আজাদ, ড. আবদুল আলীম তালুকদার, সত্যজিৎ বিশ্বাস, আহমাদ স্বাধীন, মিজানুর রহমান রানা, রেজওয়ান ইসলাম, আজহার মাহমুদ এবং জাহাঙ্গির শাহরিয়ার।

আটটি বিষয়ে মোট দশজন লেখককে মনোনীত করেছে প্রিয় বাংলা। মনোনীত পাণ্ডুলিপিগুলো আগামী বইমেলায় বই আকারে প্রকাশ পাবে প্রিয় বাংলা প্রকাশন থেকে। লেখকরা পাবেন আনুষ্ঠানিক সম্মাননা এবং বিক্রয়োত্তর রয়্যালিটি।

‘প্রিয় চয়েস’ প্রিয় বাংলা প্রকাশনের নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্যাকেজের মাধ্যমে সারাদেশের লেখকদের কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করা হয়েছিল।

জমাকৃত পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে বাছাইকৃত দশটি পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশের ঘোষণা ছিল প্রিয় বাংলার। সেই ঘোষণা অনুয়ায়ী বাছাইকৃত দশ পাণ্ডুলিপির নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

এগুলো হচ্ছে- হাসান রাউফুন-এর চর্যাপদের সহজপাঠ (গবেষণা), নাহিদ ফেরদৌসীর প্রবীন সমীকরণ (প্রবন্ধ), আবুল কালাম আজাদ-এর ঘুমই সফলতার চাবিকাঠি (রম্য), ড. আবদুল আলীম তালুকদার-এর হিমালয়কন্যার আঁচল আঙিনায় (ভ্রমণ), সত্যজিৎ বিশ্বাস-এর বৃহস্পতি যখন তুঙ্গে (রম্য), আহমাদ স্বাধীন-এর বিজ্ঞানের ইতিহাস ও রহস্য (বিজ্ঞান), মিজানুর রহমান রানা-র রক্তে রঞ্জিত ধূসর পদচিহ্ন (উপন্যাস), রেজওয়ান ইসলাম-এর ভিনদেশি গল্প (অনুবাদ), আজহার মাহমুদ-এর স্বদেশ ভ্রমণের ইতিকথা (ভ্রমণ) এবং জাহাঙ্গির শাহরিয়ার-এর চোখের জলে আগুন জ্বলে (গল্প)।

তাছাড়া প্রিয় চয়েস ছাড়াও প্রিয় বাংলার আকেটি প্ল্যাটফর্ম “প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার”। সেই প্যাকেজেও এ বছর ৫জন লেখককে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। প্রিয় চয়েস এবং পাণ্ডুলিপি পুরস্কার- এই দুই প্যাকেজ মিলে শুধু পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতাতেই এ বছর মোট ১৫ জন লেখকের বই প্রকাশ করছে প্রিয় বাংলা।

উল্লেখ্য, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ঢাকা থেকে ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি. শুক্রবার প্রিয় বাংলা প্রকাশনীর আয়োজিত প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার গ্রহণ করলেন মিজানুর রহমান রানা।

মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘রক্তে রঞ্জিত ধূসর পদচিহ্ন’র জন্যে তিনি এ পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। এ সময় মিজানুর রহমান রানা সহ মোট দশজনকে পুরস্কার ও সম্মানা প্রদান করা হয়।

আমরা জানি, কবি-সাহিত্যিক-লেখকেরা তাদের সমস্ত জ্ঞান বইয়ের পাতায় ঢেলে দেন। বই পড়ে সেই জ্ঞানের আলো সংগ্রহ করা যায়। বই পড়া মানুষের কাছেই দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে। যারা বড় হতে চায়, তাদের প্রয়োজন বেশি বেশি করে বই পড়া। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত বেশি বই পড়ব, তত বড় হব। যারা সমাজে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে, তারা বই পড়া থেকে দূরে রয়েছে। বই পড়া থেকে দূরে সরে গিয়েই বিভ্রান্তির পথে চলে যায় মানুষ। আমাদের জানতে হবে, বই শুধু মানুষের মেধা বা জ্ঞান বৃদ্ধি করে না, বরং বই পড়লে মানুষ হয়ে ওঠে কর্মোদ্যম, সহনশীল ও সহমর্মী। মানুষ বই পড়েই নিজেকে জানতে পারে এবং নিজের জীবনকে আলোকিত করে তুলতে পারে। একটি ভালো বই যে কোনো সময় যে কোনো মানুষকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিতে পারে।

সুতরাং সেই হিসেবে যারা এসব বইগুলো লেখেন তাদেরকে কতোই না পরিশ্রম দিতে হয় দিন-রাত ধরে। আর তাদের কষ্টের প্রতিদান হিসেবে আমাদের উচিত বইপড়া। কেননা বইপড়ার চেয়ে বই লেখা আরো বেশি কষ্টের। আমরা অভিনন্দন জানাই, আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানকে যারা এই লেখকদের সম্মাননার উদ্যোগ নিয়েছেন। -ক্ষুদীরাম দাস