সাংবাদিক সোহেল কিরণের উপর হামলা এবং কিছু কথা

সম্পাদকীয়

আজকাল সাংবাদিকরাও নিরাপদ নয় বলে মনে হচ্ছে। আর এর সীমা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সৃজনশীল সাংবাদিকতার মতো পবিত্র কাজ করতে হয়তো কেউ কেউ ভয় পাচ্ছে। এর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কেউ কেউ। জীবনের মায়া হয়তো কারো কারো রয়েছে। কেননা সেও তো একজন মানুষ। সেও কারো না কারো স্বামী, ভাই, সন্তান বা আত্মীয়স্বজন। সুতরাং সাংবাদিকতার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে কেউ কেউ পিছিয়ে যাচ্ছে বা এদিকে পা বাড়াচ্ছে না স্বেচ্ছায়। তবে যারা এমন কাজের সাথে জড়িত তারা বুকে বল নিয়েই এমন পবিত্র কাজ করেই যাচ্ছেন। আর তারাই বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন হঠাৎ করেই।

সাংবাদিকতা হলো পেশা। আর পেশাগত কাজ করতে গিয়ে প্রায় সন্ত্রাসীদের মারধরের শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকরা। সাংবাদিক সুরক্ষায় দেশে বিশেষ কোনো আইন নেই বলেই মনে হচ্ছে। প্রিয় সংবাদে প্রকাশিত ‘ সাংবাদিক সোহেল কিরণের উপর হামলা’ শিরোনামে সংবাদটি আমরা অনেকেই পড়েছি। খুবই লজ্জাজনক ঘটনা এটি। কোথাও যদি অবৈধ পলিথিন ব্যাগ তৈরি হচ্ছে এমন সংবাদ প্রকাশ করে তাহলেই হামলার শিকার হবেই হবে সেই অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে।

কোথাও অন্যায়ভাবে দুর্বলের উপর সবল মারধর করছে তার ছবি তুলতে গেলেই সাংবাদিকের উপর হামলা করা হয়। এর মানে হলো, সাংবাদিকরা যেন সবসময় চুপ থাকে। কিন্তু এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সাংবাদিকরা এটা মেনে নিতে পারেই না। সত্যিকারে যারা অবৈধভাবে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে যখন সংবাদ প্রকাশ করা হয়, তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সংবাদ প্রকাশের পর তারা সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়। তারপর মারধর ও হত্যা পর্যন্ত সংঘটিত হয়ে থাকে।

এটা সত্যিই যে, এখন সাংবাদিকতা দিন দিন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সাংবাদিকতা কমানোর জন্য সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এবং সাংবাদিকের যে সংগঠনগুলো আছে তাদের সাংবাদিকদের অধিকার আদায় জন্য ও সাংবাদিক রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে বলে আমরা মনে করি। আর যারা ঘটনা ঘটায় তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নেয়া উচিত দৃষ্টান্তমূলকভাবে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, অধিকাংশ সময়ই এসব হামলার সাথে প্রভাবশালীরাই জড়িত থাকে বেশি। যার ফলে এসব ঘটনার বিচার হয় না বললেই চলে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনাকে উস্কে দিচ্ছে দিনের পর দিন।

অবশ্য প্রত্যেকটি ঘটনার যথাযথ বিচার হলে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে সবচেয়ে বড় কাজটি হবে সমাজ মানসিকতায় পরিবর্তন আনা। কারণ সাংবাদিকের উপর সহিংস হয়ে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করা যায় না। গণমাধ্যম সমাজের আয়না স্বরুপ, এর কর্মীদের উপর হামলা না করে প্রভাবশালীরা নিজেদের সংশোধন করলেই বৃহত্তর সমাজ উপকৃত হবে বলে আমরা মনে করছি।

আমরা জানি, সমাজে কেউ ভালো কাজ করলে গণমাধ্যমে তা ইতিবাচকভাবেই আসে। কেননা গণমাধ্যম হলো দর্পন স্বরূপ। আর খারাপ কাজ করে ইতিবাচক কাভারেজ প্রত্যাশা করা যায় না। আর সেটিকে পেশিশক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা বর্বরতার শামিলই বটে।

সাংবাদিকেরা নিরাপদে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার হওয়া চাই। সঠিক ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে প্রশ্রয় আরো বেড়ে যায়। যেহেতু বাংলাদেশের গণমাধ্যম কতটুকু স্বাধীন ও নিরপেক্ষ, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এ কথা বোধ হয় কেউই অস্বীকার করবেন না যে, এই সীমিত স্বাধীনতা ও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গণমাধ্যমই দেশকে টিকিয়ে রেখেছে। কারণ চারপাশে এত বেশি খারাপ লোকের আধিপত্য যে, তারা কেবল ক্যামেরাগুলোকেই ভয় পায়। না হলে বহু আগেই সবকিছু পেটের ভেতরে নিয়ে যেত। যেহেতু সবকিছু পেটের ভেতরে নিয়ে হজম করার পথে প্রধান অন্তরায় গণমাধ্যম। সুতরাং রাক্ষস পুরীরর রাক্ষসরা খুবই সাবধান!