বাংলাদেশে মৌলিক চাহিদা মেটাতে ঋণ করে ২৬% পরিবার

সম্পাদকীয়

বিষয়টিকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই নিতে পারি। কেননা ঋণের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত বা অভ্যস্ত। জীবনের কোনো না কোনো প্রয়োজনে আমরা ঋণ করিনি এমন মানুষ পাওয়া ভার! আমরা জানি যে, স্বাধারণত আয় উন্নতির জন্যেই মানুষ ঋণ করে থাকে।

বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে। মোটের উপর আরেকটু ভালো থাকা বা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতার জন্যে ঋণ করে। কিন্তু যদি এমন হয় যে, মৌলিক চাহিদা মেটাতে কোনো না কোনোভাবে ঋণ করতেই হয়, তাহলে সেটা কতই না দু:খজনক! আর সেটাই হয়ে থাকে আমাদের সমাজে।

গতকাল জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘মৌলিক চাহিদা মেটাতে ঋণ করে ২৬% পরিবার’ শিরোনামে সংবাদটি সচেতন মহলের কাছে হতবাক করার মতোই বিষয় বটে। আমরা বিস্মিত হয়েছি! কেননা বাংলাদেশ জিটিল অতিক্রম করে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে পিছুটানের মতো বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। আমরা রীতিমতো হতবাক হয়ে যাচ্ছি এমন পরিস্থিতিতে।

আমরা তো নিজেদেরকে … ভাবছি; কিন্তু প্রশ্ন জাগে, সত্যিই আমরা এখন কোথায় আছি! প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম, ‘দেশের এক-চতুর্থাংশ পরিবার খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে ঋণ করে। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষই এ জন্যে বেশি ঋণ করছে। শহর ও গ্রামের মানুষ এ ঋণের বড় অংশই নিচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে চড়া সুদে। বাসাভাড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াতসহ প্রতিটি খাতেই জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে খাদ্যাভ্যাসেও এসেছে পরিবর্তন। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ কমে গেছে। এদিকে দুই বছর ধরে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়তি। তাতে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি তেল, সাবান, শ্যাম্পুর মতো নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দামও বেড়েছে।

এ ছাড়া বাসাভাড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াতসহ প্রতিটি খাতেই জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে খাদ্যাভ্যাসেও এসেছে পরিবর্তন। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ কমে গেছে।’

আমরা এতে বুঝতে পারছি যে, মানুষকে অনেকটা বাধ্য হয়েই ঋণের দিকে যেতে হয়। পারতপক্ষে মানুষ ঋণের দিকে যেতেই চায় না। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি তাদের বাধ্য করে ঋণ করতে। আমরা বাস্তব চিত্র দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের দেশের গ্রামের অধিকাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। তাদের চরম দরিদ্রের মধ্যে টিকে থাকতে না পেরে ঋণ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। ঐ পরিবারের জন্যে এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে?

আমরা জানতে পেরেছি যে, আমাদের দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। বাজারে পণ্যমূল্য যতটা বেড়েছে, সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। এ কারণে জীবনযাত্রার খরচ সামাল দিতে ঋণ করছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এদের মধ্যে গ্রামের পরিবারের সংখ্যায়ই বেশি। আমরা জেনেছি যে, তারা বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের জন্যে আবেদন করে। আর সেটা বেশ চড়া সুদে।

তাছাড়া আত্মীয়স্বজন, ব্যাংক, মহাজন বা অন্যান্য উৎস থেকেও ঋণ করে। পরিবারগুলো ঋণগ্রস্ত হওয়ার ফলে তাদের চাহিদামতো খাদ্য চাহিদা মোটানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষাসহ সামগ্রিকভাবে মানবজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সামনে পড়ছে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য। এটা সত্য যে, মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি নেই। আয় কম, ব্যয় বেশি। পরিবারের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হয়। এর পরে বাড়তি ব্যয় অর্থাৎ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ডে যোগ দিলে নির্দিষ্ট আয় থেকে অর্থব্যয় হয়।

এর ফলে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আত্মীয়, মহাজন অথবা এনজিও থেকে ঋণ করে খাদ্য চাহিদা মেটাতে হয়। তাছাড়া চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। কেবল স্বল্প আয়ের মানুষ নয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনেও প্রভাব পড়েছে। অনেকের সঞ্চয় ভেঙে ফেলতে হচ্ছে, ঋণ করে চলতে হচ্ছে। তাছাড়া ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি তেল, সাবান, শ্যাম্পুর মতো নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া বাসাভাড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াতসহ প্রতিটি খাতেই জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমরা মনে করি, দ্রæত গতিতে এই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে মানুষের জীবনযাত্রায় স্থবিরতা বিরাজ করবে ও মানুষ দিশেহারা হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িত হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া ঋণগ্রস্ত পরিবারগুলো মোটেও ভালো থাকতে পারে না, পারে না শাস্তিতে সামাজিক মর্যাদায় চলতে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও ঋণের হাত থেকে বাঁচতে সঠিক পথে বেছে নিতে হবে বলে আমরা মনে করছি।