মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন মফস্বল সাংবাদিকের খোলা চিঠি

দিপু আহমেদ, নবীগঞ্জ :

কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমনের বর্তমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় ডাক্তার ও নার্স সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিডিআর, আনছার, পাশাপাশি প্রথম সারির যোদ্ধা হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন যে পেশাজীবী গোষ্ঠী তারা হলেন সংবাদকর্মী।

এই সংবাদকর্মীরা সর্বদা ঝুঁকির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জরুরী তথ্য সংগ্রহ করে দেশ ও জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার খবর বিভিন্ন অঞ্চলে তুলে ধরছেন।

যারা ঢাকায় কাজ করেন তারা বেতন ভাতা পেলেও ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলায় অবস্থানকারী মফস্বল সাংবাদিক হিসাবে পরিচিত এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকার রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। এদের মধ্যে হাতেগোণা ক’জন যে সন্মানী পান তা নিতান্তই নগণ্য। মফস্বলের এই সংবাদকর্মীদের অবস্থা অনেকটাই শোচনীয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আমার জানা মতে দেশের প্রথম সারির হাতে গোনা ১০/১৫ টি দৈনিক পত্রিকা অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকদেরকে বেতন প্রদান করেন। বাকি মফস্বল সাংবাদিকদের সুনিদিষ্ট কোন বিট নেই, বেতন ভাতাও নেই।

তারা নিজেরাই ক্যামেরাম্যান আবার নিজেরাই সংবাদ লেখক এমনকি নিজেরাই যানবাহন চালিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন মাঠে।এখন ভেবে দেখুন মফস্বল সাংবাদিকরা কিভাবে এই সংকটময় মুহূর্তে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করছেন।

সেনাবাহিনী,পুলিশ,র‌্যাব,বিডিআর, আনসার ও ডাক্তারসহ সরকারি চাকুরিজীবী- এরা সকলেই রাষ্ট্রীয় বেতন-ভাতার সুবিধা পাচ্ছে প্রতিমাসে। প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা দেশে করোনাভাইরাসের এই সংকটাপন্ন পরিস্থিতির বিষয় চিন্তা করে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার জনগণের জন্য নানা ধরনের আর্থিক প্রনোদনার ঘোষণা দিয়েছেন এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার ও ইতিহাস হয়ে থাকবে বাংলাদেশে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলায় কর্মরত যে সকল মফস্বল সাংবাদিকরা বিনা পারিশ্রমিকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝুঁকি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তা জনগনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের জন্য আজো কোন আর্থিক প্রনোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। ঢাকার বাহিরের মফস্বল সাংবাদিকদের জীবন যন্ত্রণা কতটুকু তা একবার খোঁজ নিয়ে দেখার অনুরোধ রইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

মফস্বলের সাংবাদিকরা জীবন বাজি রেখে গ্রামগঞ্জের সংবাদ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে জাতীয় টিভি ও পত্রিকাগুলোকে।

দেশে পত্রিকার হিসেব করলে দেখা যায় হাজার হাজার পত্রিকা রয়েছে কিন্তু ক‘টি পত্রিকা ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের মফস্বলের সাংবাদিকদের বেতন ভাতা দিচ্ছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে এই বিষয়টির প্রতি একটু খবর নিন। আশা রাখি আপনি সেগুলোর তথ্য পেয়ে যাবেন।

মানণীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অবশ্যই জানেন, মফস্বলে কারা সাংবাদিকতা করেন। তারপরও আজকে বলতে হচ্ছে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যে সকল সংবাদকর্মী তথ্যসেবার কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন পত্র পত্রিকার প্রতিনিধি হয়ে দৃঢ়তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, তারা কেউই বিত্তশালী পরিবারের সন্তান নয়। সকলেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। বর্তমান করোনা সংকটের কারণে বর্তমানে মফস্বল সাংবাদিকের অবস্থা এমনটাই দাড়িয়েছে যে, নুন আনতে পানতা ফুরানোর মত। নিম্নবিত্ত পরিবারের চেয়েও এখন তাদের খারাপ অবস্থা, তবুও তারা থেমে নেই, ধার দেনা করে ওয়াইফাই বা মোবাইলের মাধ্যমে ডাটা কিনে সরকারের সফলতা, অন্যায়, অপরাধসহ বিভিন্ন তথ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দেশবাসীকে।

সাংবাদিকরা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনবাঁজী রেখে সংবাদ সংগ্রহ করেছেন , তেমনি দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে মফস্বল সাংবাদিকরা জীবনবাঁজী রেখে তথ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সংকটকালীন মুহুর্তে আপনি চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর জন্য বীমা ও প্রণোদনা প্রদানের ঘোষনা দিলেও ঝুঁকির মধ্যে তথ্যসেবা দিয়ে যাওয়া আমরা গণমাধ্যমকর্মীদেরকে ভাগ্যে কেবল ধন্যবাদ ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। শুধু ধন্যবাদ দিয়ে কি সাংবাদিকদের পেট চলবে? আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের দায়িত্ব পালনে এই সাংবাদিকরা।

বর্তমানে পত্রিকার  অনলাইন ভার্সন বন্ধ নেই। প্রতিটা গণমাধ্যমের ই-পেপার চালু রয়েছে সেখানে প্রতিনিয়ত দেশের সার্বিক সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সব থেকে বেশি বৈষম্যের শিকার এই মফস্বল সাংবাদিকরা। প্রতিনিয়ত সকল সুযোগ সুবিধার বেলায় মফস্বলের সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তাদের নামে মামলা-হামলা হচ্ছে তবুও তারা সঠিক বিচার পাচ্ছে না।

খেয়ে না খেয়ে মানুষকে তথ্যসেবা দিয়ে আসলেও তাদের তথ্য নেয়ার মত সময় কারো থাকে না বরং মফস্বলের সাংবাদিক তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করার পর হামলা মামলা হলেই দামী দামী পত্রিকার মালিকরা সহযোগিতা না করে বরং চাকুরীচ্যুত করেন। যাহা কলংকজনক ও মফস্বলের সাংবাদিকরা হচ্ছেন বৈষম্যের শিকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দেশের গরীব মানুষদের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার কাছে অনুরোধ, আপনিও তাই করে যাচ্ছেন। আপনি হয়তো জানেন না এই সাংবাদিকতা পেশায় কত মানুষ আজ অসহায়। মাসের পর মাস বেতন বকেয়া, কথায় কথায় চাকরি হারিয়ে বহু সাংবাদিক এখন দিশেহারা।

তাই আশা করছি আপনি মফস্বলের সাংবাদিকদের প্রতি সু-দৃষ্টি দিবেন। মা যেমন সন্তান বিপদে আগলে রাখে তেমনি করে করোনা ভাইরাসের এই মাহামারিতে অন্যন্য পেশাজিবীদের মতো সাংবাদিকদেরও পাশে দাঁড়াবেন আপনি।

মুক্তিযুদ্ধে যেমন বহু সাংবাদিকের অবদান ও ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার পরেও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুখে-দুঃখে এই পেশার মানুষগুলোর অনেক অবদান রেখে চলেছে। সর্বোপরি বিনয়ের সহিত জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারিগর, মাদার অফ হিউমিনিটি জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি, মফস্বলের এই পেশাজিবী বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকিয়ে রাখতে মফস্বলের সাংবাদিকদের একটু খবর নিয়ে সহযোগীতার হাত প্রসারিত করার মাধ্যমে নিশ্চিন্তে জীবন যাপনের নুন্যতম সু-ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় মফস্বল সাংবাদিক বলে পরিচিত দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠী একদিন কালের অতল গহব্বরে হারিয়ে যাবে। দেশের এই দুর্যোগ কালে তারা গ্রাম থেকে গ্রামান্তর তথ্য সৈনিক হিসাবে কাজ করছে।