ব্যবসায়ীদের আরো বিশ্বস্ত হওয়া উচিত

সম্পাদকীয়

ব্যবসায় সততা রাখতে হয়, বিশেষ করে ক্রেতার সাথে। অন্যথায় ক্রেতার বিশ্বাস একবার নষ্ট হয়ে গেলে ব্যবসা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে। এটা ব্যবসায়ীরা বেশ ভালো করেই জানেন। কেননা একবার কোনো ক্রেতা যে কোনোভাবে দোকানদারের কাছে ঠকে যান, সেই ক্রেতা আর কোনো সময় তার কাছে আসতে চায় না। সেই সাথে তার অনুসারীরাও একই দোকানে অন্যদের পাঠান না। সুতরাং বিক্রেতার এই অবিশ্বস্ততার কারণে একসময় তার ব্যবসার করুণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবুও কিছু কিছু ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাদের নীতিজ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাদের চিন্তা হলো, ক্রেতাকে ঠকিয়ে রাতারাতি কিভাবে ধনী হওয়া যায়-সেই চিন্তা তাদের থাকে। এজন্যে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিস বিক্রি করে হলেও ক্রেতার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে দ্বিধা করে না। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ সেটা তারা অবশ বিবেক দ্বারা মোটেও উপলব্ধি করতে পারেন না। অন্তত ক্রেতার দিক চিন্তা করে ভ্রাম্যমান আদালতে আমরা স্বাগতম জানাই, তাদের এই প্রশংসনীয় অভিযানের জন্যে। এতে করে ক্রেতার দিক থেকে অনেক উপকার হচ্ছে আমরা বলবো।

প্রিয় সময়ে ‘ রাজৈরে মেয়াদোত্তীর্ণ কেক বিক্রির দায়ে ২ বেকারীর মালিককে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, কোন দোকানী মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করছে। থলের বিড়াল যেহেতু বের হয়ে এসেছে, সুতরাং ক্রেতার নিশ্চয় জানা হয়ে গেছে বিড়াল এতোদিন কোথায় ছিলো। একজন অসদুপায় অবলম্বনকারীকে ভ্রাম্যমান আদালত ক্রেতার কাছে পরিচয় করিয়ে দিলেন জরিমানা করার মাধ্যমে। এভাবে অন্তত যদি ক্রেতারা সাবধান হয় তাহলে ক্রেতারাই উপকৃত হবে। সেই দোকানের জিনিসপত্র কেনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

আমাদের মতে, এ ধরনের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ করেই দেয়া বরং ভালো। তাহলে অন্য দুষ্টু ব্যবসায়ীরা সতর্ক হয়ে নিশ্চিত। এভাবে হঠাৎ জরিমানা করে ছেড়ে দিলে পেয়ে বসতে পারে। অর্থাৎ তারা সেই আগের মতোই অসৎ উপায় অবলম্বন করতে পারে। শুধুমাত্র জরিমানা করাটাই ক্ষেত্রবিশেষে যথেষ্ট নয়, দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্যে তাদেরকে আইনের আওতায় এতে জেল খাটারও ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে ঐসব খারাপ ব্যবসায়ীরা সরল ক্রেতাদের কাছে খারাপ জিনিস বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে রাতারাতি অনেক টাকার মালিক হতে পারবে না। এদিকটা চিন্তা করে আমরা বলবো যে, এভাবে হঠাৎ হঠাৎ এক দুই মাস পর পর অভিযান পরিচালনা করলে এসব ব্যবসায়ীদের মনে ভয় ঢুকে যাবে।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার টেকেরহাটে দুই বেকারী অনেকদিন থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ কেক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কের বিক্রি ক্রেতাদের ঠকিয়ে আসছে। ভ্রাম্যমান আদালত তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেছে, এতে সাধারণ ক্রেতারা খুশি হয়েছে।

আমরা বলবো, কিছু ক্রেতা সত্যিই অসচেতন। দোকানী প্যাকেট করে যা’ দেয় বিশ^াসে ভর করে তা ব্যাগে ভরে নিয়ে এসে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের খেতে দেয়। আর এই বিশ^াসের সুযোগ নেয় ওইসব চালাক বিক্রেতারা। আর ক্রেতারা কোনোভাবেই তাদের চালাকি ও অবিশ^স্ততার বিষয়টি জানতেই পারে না। অন্তত এই জরিমানা করবার মাধ্যমে ক্রেতারা পরিস্কারভাবে জানতে পেরেছে। সচেতন ক্রেতারা সেই দোকানগুলোতে আর যাবে বলে মনে হয় না এবং ক্রেতারাও কোনো খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করার সময় সতর্ক থাকবে।

প্রত্যেক ক্রেতারাই উচিত, বাজার থেকে কোনো জিনিস ক্রয় করার সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকা উচিত। যে কেনো প্যাকেটজাত খাবারেরই নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। আর সেই মেয়াদ তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেই তারিখ পেরিয়ে গেলে সেই খাদ্যসামগ্রী আর খাবারের উপযোগী থাকে না। কোনো কোনো ক্রেতার সেই দিকে মোটেও খেয়াল করে না। অথচ প্রত্যেক ক্রেতারই ভালো করে তাকিয়ে দেখা উচিত, উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ রয়েছে কিনা। সেটা দেখেই জিনিসপত্র ক্রয় করা উচিত।

পরিশেষে আমরা বলতে চাই যে, ব্যবসায়ীদের আরো বিশ^স্ত হওয়া উচিত। কোনোভাবেই ক্রেতাকে ঠকানোর চিন্তা করা মানেই অনৈতিক কাজ। আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ও ভোক্তাদের স্বার্থে এ রকম অভিযান চালিয়ে যাওয়া প্রশংসনীয় বিষয় হবে। প্রত্যেক দোকান মালিকদের তাদের পন্য সামগ্রীর মেয়াদ সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্যে কঠোর নির্দেশনা দিলে ক্রেতা সাধারণ উপকৃত হবে। কোনোভাবে যেন মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার মানুষের কাছে বিক্রি না হয় সেদিকে ব্যবসায়ীদের কড়া নজর দেয়া উচিত।

আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী, প্রিয় সময় গুজব প্রচার করে না

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ০১ আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ২৭ মুহররম ১৪৪২ হিজরি, বুধবার