বিষয়টি হাস্যকর হলেও লজ্জাজনক!

সম্পাদকীয়

আমাদের সমাজে পরিবারগুলোতে এমন জঘন্য ঘটনা ঘটে যা অনেক সময় আমরা হেসে উড়িয়ে দিলেও লজ্জাজনক বলতেই হবে। যেমন সমাজের জন্যে লজ্জার তেমনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও লজ্জার। কিন্তু সবাই লজ্জায় পড়লেও যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তার কাছে লজ্জার হয় না বললেও চলে। কেননা লোভ তার লজ্জা কেড়ে নেয়। ফলে সেখানে লজ্জার উপস্থিতি থাকে না। এ কারণে নির্লজ্জভাবে নিজের স্ত্রী সন্তানকে লজ্জায় ও অপমানের মধ্যে ফেলে দিয়ে হীন কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

প্রিয় সময়ে ‘ঢাকার ধামরাইয়ে বিদেশফেরত যুবকের সঙ্গে পরকীয়ার টানে পালালেন নারী ইউপি সদস্য’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা লজ্জাজনক ঘটনাটি জানতে পেরেছি। কথিত মহিলা নিজের তিন তিনটি সন্তান থাকতেও তাদেরকে ছেড়ে স্বামীকে ছেড়ে বিদেশ ফেরত যুবকের প্রেমের টানে তার হাত ধরে চলে যায়। চারিদিকে ছি! ছি! হায় হায় ও আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। সেই সাথে আত্মীয়দের মধ্যেও যে মাথা নীচু হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মাকে ছাড়া তিন সন্তানের ভবিষ্যও অনিশ্চিত বলা যায়।

তিন সন্তান মাকে হারিয়েছে। সুতরাং এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে? ওদের জীবনের আরো অনেকগুলো দিন বাকী পড়ে রয়েছে। সময় বয়সী বন্ধুদের সাথে মিশবে, খেলবে, পড়াশোনা করবে ও খেলাধুলা করবে। এসব করতে গিয়ে তাদেরকে অনেক দুঃখের মধ্য দিয়ে তাদের দিনগুলো কাটাতে হবে। সমবয়সীরা তাদের মাকে মা বলে ডাকতে পারবে। কিন্তু ঐ তিন সন্তান তাদের মাকে আর মা বলে ডাকতে পারবে না। কেননা তাদের মা তাদেরও ত্যাগ করে চলে গেছে। অপরদিকে ঐ তিন সন্তানের বাবা তার স্ত্রীকে হারিয়ে বাকী জীবনটা লজ্জায় কাটাবে। যদিও এতে তার লজ্জার কোনো কারণ নেই।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, কথিত মহিলা ২০১১ সালে প্রথম ও ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। অথচ, গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থেকেও এমন অসামাজিক কাজ করায় এলাকায় খারাপ প্রভাব পরাটা একেবারেই স্বাভাবিক! এর ফলে একদিকে যেমন হাস্যরসের সূচনা হয়েছে, অন্যদিকে ঘটনাটি দুঃখজনক ও অসামাজিক।

সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, ঐ মহিলার সঙ্গে অন্য জনপ্রতিনিধির পরকীয়া প্রেমের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চাকুরিচ্যুত হন তার স্বামী আনোয়ার। পরে তিনি সুয়াপুর বাজারের ব্রিজ পয়েন্টে চায়ের দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। আর এ সুযোগটি আনোয়ারের স্ত্রী সোমা আক্তার সুমি কাজে লাগায়। কথিত মহিলা সাটুরিয়া থানার নয়াডিঙ্গি এলাকার বিদেশফেরত রাশেদ নামে এক যুবকের সঙ্গে নতুন করে পরকীয়া প্রেমে জড়ান। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্ত্রীকে শাসন করেন তার স্বামী। এরই জের ধরে ওই নারী ইউপি সদস্য সোমবার রাতে ওই পরকীয়া প্রেমিক রাশেদের হাত ধরে তিন সন্তান ফেলে রেখে স্বামীর ঘর ছাড়েন। যেহেতু পূর্ব থেকে বিদেশ ফেরত যুবকের সঙ্গে মন দেয়া নেয়া ছিলো, সেহেতু সুযোগ বুঝে ঘর ছেড়ে চলে যায়।

আমাদের মনে হয়, ঐ মহিলাকে অতিরিক্ত ক্ষমতায়িত করা হয়ে গেছে। একজন পোশাক শ্রমিককে বিয়ে করে সংরক্ষিত নারী আসনে মেম্বার পদে নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে বাইরের জগতে নিয়ে আসা ও মেম্বার হিসেবে দুইবার জয়ী হওয়া। কেননা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, ‘এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি রাস্তা থেকে নিয়ে একজন পোশাক শ্রমিককে বিয়ে করি। এরপর তাকে সংরক্ষিত নারী আসনে ২ মেম্বার বানাই।

অথচ বারবার সে বিভিন্নজনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। শাসন বারণ করায় অবশেষে তিন সন্তান ফেলে রেখেই সে পরকীয়া প্রেমিক রাশেদের সঙ্গে ঘর ছাড়ল। আবার আমাকে তালাক প্রদানের নোটিশ পৌঁছে দিয়েছে। এর চেয়ে দুঃখ ও লজ্জার আর কি হতে পারে!’

অপরদিকে সোমা আক্তার সুমি তালাক প্রদানের মাধ্যমে স্বাধীন হতে চেয়েছে বলে তার কথায় জানা যায়; যাকে বলে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হওয়া। কিন্তু বার বার স্বামী ত্যাগ করে স্বামী বদল করে বিয়ে করে কতটা স্বাধীন হওয়া যায়! এখন দেখার অপেক্ষা যে ঐ বিদেশ ফেরত যুবকের সাথে কতদিন টিকে থাকতে পারবে!

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আরো জানা গেছে যে, ‘এর আগে ওই একই ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী আসনের সদস্য হামিদা আক্তার গুদি ও প্রিয়শী আক্তার পরকীয়া প্রেমের টানে ঘর ছাড়েন। এ নিয়ে এ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের তিনজন সদস্য পরকীয়া প্রেমের টানে স্বামী-সন্তান ও সাজানো সংসার ছেড়ে অন্যের সঙ্গে নতুন করে ঘর বাঁধেন।’ এসব বিষয়গুলো হাস্যকর হলেও লজ্জাজনক!