অন্যের গাছ কেটে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়

সম্পাদকীয় ….

সমাজের কিছু লোকের কার্যক্রমের ফল এতোটা ক্ষতি হয় যে, তখন প্রশ্ন জাগে এটাকে বোকামী বলা যায় কিনা! নাকি ঐ কার্যক্রমের জন্যে কোনো লাভ হয়েছে। আবার এমনও মনে হয় যে, এসব কার্যক্রমের জন্যে মুর্খতা বলা ছাড়া আর কিছুই বলবার থাকে না।

গাছ আমাদের উপকার করে-এই কথাটি আমরা ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি। আর এর উপকারিতার কথা আমরা সকলেই জানি ও বুঝি। গাছের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। গাছটি যে লোকেরই হোক না কেন-ঐ গাছের জন্যে সকলেই উপকৃত হয়। এই উপকার গাছের মালিকই শুধু ভোগ করে না, সকলেই ভোগ করে। গাছ হলো অক্সিজেন ফ্যাক্টরী। তার অক্সিজেন সকলেই গ্রহণ করে। যদি কোনো গাছ কেটে ফেলা হয় তাহলে সেই ঐ অক্সিজেন ফ্যাক্টরীই ধ্বংস করা হয়। এজন্যে বলা হয়-একটি গাছ কাটলেই আরো কয়েকটি গাছ রোপন করা উচিত। সচেতন মহল গাছ লাগানোর জন্যে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি গাছের যতœ নেয়ার প্রতিও আহবান জানান।

প্রিয় সময়ে ‘মাদারীপুরে মুক্তিযোদ্ধার ৩ শতাধিক ফলন্ত গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি পাঠকমাত্র জানতে পেরেছেন। এটা সম্পূর্ণ উপলব্ধির বিষয় যে, নিরীহ গাছগুলোর সাথে কতটা নির্মম ব্যবহার করা হয়েছে। গাছের তো কোনো দোষ নেই, তাহলে তাদেরকে কেন হত্যা করা হলো। গাছ তো কারো ক্ষতি করেনি বা যারা গাছগুলোকে হত্যা করেছে তাদেরকে তো কোনো দিক দিয়েই ক্ষতি করেনি। তাহলে গাছকে হত্যা করে কীসের প্রতিশোধ নেয়া হলো? যে বা যারা গাছগুলো কেটেছে, গাছ তো তাদেরও উপকার করেছে বা করতো। এটা গাছের ধর্ম। এখন যদি অন্যান্য গাছগুলো প্রতিশোধ হিসেবে তাদেরকে অক্সিজেন দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং তাদের প্রশ^াসের সাথে বেরিয়ে আসা কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়; তাহলে তাদের কী হবে? নির্ঘাত তাদের মৃত্যু হবে! কিন্তু সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। গাছ তা কোনোভাবে করবে না। যদি করতো; তাহলে হয়তো গাছের সাথে তারা কোনোভাবেই এমন আচরণ করতে পারতো না।

শত্রæতা করা মানুষের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু গাছের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং গাছগুলোকে হত্যা করে মোটেও ভালো কাজ হয়নি। আমরা প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ‘মাদারীপুর জেলার কালকিনিতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মোঃ আলমগীর কাজী নামে এক প্রতিবন্ধি বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রায় তিন শতাধিক ফলন্ত লেবু গাছ রাতের আঁধারে কেটে ফেলেছে।’ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটাকে বিশাল ক্ষতিই বলবো আমরা! যার গাছ কেটে ফেলেছে তার অফুরন্ত ক্ষতি হয়েছে। শুধু তারই ক্ষতি হয়নি, অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। এই গাছের ফলা মানুষ ক্ষেতে পারতো। মানুষ কিনতে পারতো। তাতে ফলের চাহিদা পূরণ হতো এবং পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হতো। তিন শতাধিক গাছ কেটে ফেলায় ফলের উপর অনেক চাপ পড়বে। এটাও আমাদের বুঝতে হবে। যে বা যারা শত্রæতা করেছে তাদের হয়তো এটা বোঝার ক্ষমতা নেই। তাই এমন ঘৃণিত কাজ করতে পেরেছে। লেবু গাছ কেটে ফেলায় গাছের মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারের দাবিতে সাংবাদ সম্মেলন করা যথার্থই বলে মনে করি।

প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা আরো জানতে পেরেছি, ‘উপজেলার শিকারমঙ্গল এলাকার ভবানীপুর গ্রামের প্রতিবন্ধি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর কাজী নিজ উদ্যোগে তার বাড়ির পাশের জমিতে একটি লেবুর বাগান করেন। ওই বাগানে তিনি প্রায় তিনবছর আগে ৪শতাধিক লেবুর চারা রোপন করেন। স¤প্রতি পূর্ব শত্রুতার জেরে ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কাজীর বাগান থেকে একই এলাকার প্রতিপক্ষ আফছের কাজীর নেতৃত্বে মাসুম কাজী, রানা কাজী ও মফছের খানসহ বেশ কয়েকজন মিলে রাতের আধারে তিন শতাধিক ফলন্ত লেবু গাছ কেটে ফেলে দেয়। এতে করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কাজীর প্রায় ৫লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।’ এটাকে অপূরণীয় ক্ষতিই বলা চলা চলে।

এই গাছ কেটে ফেলায় যে ক্ষতি হয়েছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কাজী কেঁদেছেন। তিনি কেঁদে কেঁদে মনের ভাব প্রকাশে জানিয়েছেন, ‘আমি একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, আমি শারীরিকভাবে খুবেই অসুস্থ্য। আমার একটি হাত নেই, আমি প্রতিবন্ধি মানুষ। আমি নিজে অনেক কষ্ট করে আমার বাড়ির পাশের জমিতে ছোট ছেলের সহযোগীতা নিয়ে লেবুর বাগান করে ছিলাম। লেবু বিক্রি করে পরিবার নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল আমার। কিন্তু আফছের কাজীসহ ২০/২৫ জন মিলে আমার লাগানো গাছগুলো রাতের আঁধারে কেটে ফেলেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।’

এ ধরনের ঘটনার বিচার হওয়া উচিত দৃষ্টান্তমূলক। যারা এমন বোকামী করে তাদের তো শাস্তি হওয়া উচিত। নিশ্চয় যারা এই দুঃখজনক ঘটনাটি জেনেছেন, তাদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন যে, এটাকে বোকামী বলা যায় কিনা! সত্যি এভাবে গাছ কেটে সর্বজনের ক্ষতি করাকে অবশ্যই বোকামী বলা চলে!