মধ্যবিত্তদের বোবা কান্না দেখার যেন কেউ নেই

মো. মজিবুর রহমান রনি:

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন নানা পেশার মানুষ। ৫ম বারের কঠোর লকডাউনে সব চাইতে বেশী অসহায়ত্ব বোধ করছে মধ্যবিত্তের মানুষেরা । অভাব অনটন দেখা দিয়েছে মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে। তবে সংসারে অভাব দেখা দিলেও কাউকে বলতে পারছেন না আবার সইতেও পারছেনা মধ্যবিত্তের মানুষেরা। এতে অসহায় হয়ে চার দেয়ালে বন্দি হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্তদের বোবাকান্না।

চলমান লকডাউনে করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা-ঘাটও জনশূন্য। থমকে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রা ও আয় রোজগার। একদিকে বাড়ছে জীবনযাত্রার খরচ। অন্যদিকে কারো চাকরি যাচ্ছে, কারো কমছে বেতন। অনেকের সংসার অচল হয়ে পড়লেও তারা কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারছেন না। তাদের নিয়ে কারও নেই কোন ভাবণাও।

এই ছুটির মধ্যে গরিব, অসহায়-দুস্থদের মাঝে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয় কিন্তু মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের লোকদের কোনো সহায়তা করা হচ্ছে না। তাছাড়া এই শ্রেণির লোকজন কারো কাছে অভাব-অনটনের কথাও মুখ ফুটে বলতে পারছে না। অন্যদিকে অভাব-অনটনের তাড়নায় ঋণের বোঝা বাড়ছে,বাড়ছে ব্যাংক লোনের হিসোবের খাতা,এনজিউর কিস্তির চাপও বাড়ছে হুরহুর করে ।প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে উচ্ছবিত্তরা মধ্যবিত্তরা হচ্ছে আরো ধরাশায়ী।সাময়ীক লকডাউন প্রত্যাহার কালীন সময়ে ব্যাংকারদের চাপে অনেকে পড়েছে অসুস্থ হয়ে অনেকে চেক ডিজওনারের একাদিক মামলা খেয়ে দৌড়াতে হচ্ছে কোর্টের বারান্দায়। একপর্যায়ে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এতে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের লোকজন না পারছে অভাব-অনটনের কথা বলতে, না পারছে কোনো সহায়তা নিতে। যার ফলে ছুটির দিন যত গড়াচ্ছে মধ্যবিত্তদের বোবাকান্না তত বাড়ছে।

তবে হাঁটা-চলা কিংবা বেশভূষায়, বুকের ভেতরে থাকা চাপা কষ্ট-যন্ত্রণার ছাপ নেই। চেহারায় ভেসে উঠা কষ্টের চাপ যেন ডাকা পড়ছে মাস্কের আড়ালে। মধ্যবিত্তের এখন একটাই চিন্তা। কী করবেন? কোথায় যাবেন? কিভাবে চলবে সংসার খরচ? উত্তর না পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

কয়েকটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকের ঘরে এখন খাবার নেই, লজ্জায় বলতে পারছে না কাউকে। ইউএনও এর কাছ থেকে সহযোগিতার অশ্বাস থাকলেও আইডি কার্ড প্রদর্শন, ছবিতোলার হিড়িকে আত্নসম্মান বিসর্জনের ভয়ে মুখ খুলছেনা কেউ । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার কৃষক ও স্বল্প পুঁজির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।

উপজেলার হাজীগঞ্জ বাজারের এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন – কাপড়ের দোকানটি একেবারে বন্ধ রয়েছে, হাতে যা নগদ অর্থ ছিল তা সবই শেষ। দোকনের মাল রয়েছে কিন্তু টাকা নেই, কীভাবে সংসার চলবে?

বাজারের আরেক ব্যাবসায়ী বলেন-বউয়ের অফারেশন হয়েছে, বাবা স্ট্রোক করেছে, ছোট মেয়েটাও অসুস্থ টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছিনা,রোগীদের ঔষধ কিনতে পারছিনা অন্যদিকে দোকানের স্বল্প পুঁজি তাও ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাচ্ছি ।ব্যাংকের সুদের টাকা আসলের চেয়ে বেড়ে হয়েছে তিন গুন ।জানিনা ভাগ্যে কি আছে ।

আরেক মধ্যবিত্ত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন- নিম্মবিত্তদের নিয়ে সবাই ভাবছেন তারউপরে চালাতে পারছে রিক্সা,ব্যান, পাচ্ছে সরকারী সহয়োগিতা কিন্তু আমরা কোথায় যাই কেউ কি ভাবছে আমাদের নিয়ে নাকি সময় আছে কারো আমাদের নিয়ে ভাবার ।