প্রখ্যাত লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন আজ

মিজানুর রহমান রানা :

মাসুদ রানা খ্যাত লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯ জুলাই, ১৯৩৬ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি একাধারে  একজন লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক এবং জনপ্রিয় মাসুদ রানা সিরিজের স্রষ্টা।

সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসাবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গোয়েন্দা চরিত্রকে সৃষ্টি করেন। এর কিছু আগে কুয়াশা নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নিয়েছিলো।

কুয়াশা চরিত্রটি নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন প্রায় ৭৬ টির মতো কাহিনী রচনা করেছেন।কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করে থাকেন।

তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তারা ছিলেন ৪ ভাই, ৭ বোন । ঢাকা মেডিকেল কলেজের পূর্ব সীমানায় উত্তর ও দক্ষিণ কোণে যে দুটি দোতালা গেস্ট হাউজ আজও দেখা যায়, সেখানেই উত্তরের দালানটিতে আনোয়ার হোসেনের ছেলেবেলা কেটেছে। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় বাড়ি বদল করে তারা দক্ষিণ দিকের গেস্ট হাউসে চলে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের কিছু অংশ দক্ষিণ দিকে ছিল। ড. কাজী মোতাহার হোসেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পরে অবশ্য তারা বাসা বদল করে সেগুনবাগিচায় নিজেদের বাসায় চলে আসেন।

শিক্ষাজীবন
তিনি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন।

ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবন
পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর রেডিওতে তিনি নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। নিয়মমাফিক কোনো প্রশিক্ষণ না নিলেও বাড়িতে গানের চর্চা সবসময় ছিলো। তার তিন বোন সানজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন এখনও রবীন্দ্র সঙ্গীতের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা বেতারের সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। কিন্তু রেডিও কিংবা টিভিতে গান গাওয়া এবং সিনেমার প্লে-ব্যাক কাজী আনোয়ার হোসেন ছেড়ে দেন ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে বাবার দেয়া দশ হাজার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। আট হাজার টাকা দিয়ে কেনেন একটি ট্রেডল মেশিন আর বাকিটাকা দিয়ে টাইপপত্র।

দুজন কর্মচারী নিয়ে সেগুনবাগান প্রেসের শুরু, যা পরবর্তীকালে নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। পরবর্তীতে তার প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশে পেপারব্যাক গ্রন্থ প্রকাশ, বিশ্ব সাহিত্যের প্রখ্যাত উপন্যাসের অনুবাদ এবং কিশোর সাহিত্যের ধারাকে অগ্রসর করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে প্রকাশিত হল কুয়াশা-১, যার মাধ্যমে সেগুনবাগান প্রকাশনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।

কাজী আনোয়ার হোসেনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। তার মেয়ে শাহরীন সোনিয়া একজন কন্ঠশিল্পী। বড় ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন এবং ছোট ছেলে মায়মুর হোসেন লেখালেখির এবং সেবা প্রকাশনীর সাথে জড়িত।