প্রসঙ্গ পদ্মা সেতু

সম্পাদকীয়
স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবরূপ ধারণ করেছে। আর এদিকে বাঙালির প্রতিটি প্রাণে আনন্দের বন্যা বইছে। সেই আনন্দে চারিদিকে শুধু আলোচনা চলছে পদ্মা সেতুকে নিয়েই। যেহেতু নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে এই সেতু, সেহেতু গর্বের পরিমাণটা ষোলকলায় পূর্ণ হয়েছে। পূর্ণ হয়েছে স্বপ্নের বাস্তবায়ন।

আমরা বাঙালি। আমাদের কষ্টার্জিত বাস্তবায়নের জন্যে আনন্দ করতে পারি। হাসতে পারি এখন পদ্মা সেতুকে নিয়ে। এ নিয়ে গানও লেখা হয়েছে, আবার সিনেমাও তৈরি হয়েছে। তবে সেতুর যত্নে যেন কোনো কমতি না থাকে, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই গাড়ি থামিয়ে সেতুর মধ্যে প্রস্রাব করার মতো ঘটনা আমরা লক্ষ্য করেছি, যা কোনো মতেই কাম্য নয়।

অবশ্য এখনই পদ্মা সেতুর যত্নের দিকে নজর না দিলে ভবিষ্যৎ ফলাফল ভালো হবে না। অর্থাৎ সোনার বাংলার স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে খুবই দ্রæত। আমরা জানি, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তরূপে প্রতীয়মান হয়েছে। সত্যিই পূর্বে যেমন পদ্মা পাড়ি দিতে প্রয়োজন হতো প্রচুর সময়, কিন্তু এখন সহজেই ৬-৭ মিনিটে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলে যাওয়া যাবে নদীর এপার থেকে ওপার।এতে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার ভোগান্তি নিরসনের পাশাপাশি বেঁচে গেলো সময়। আমরা দেখেছি, লঞ্চ-ফেরিতে আগে যেখানে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন বহুল প্রতীক্ষিত সেতু উদ্বোধনে তাই দক্ষিণবঙ্গবাসীর উচ্ছ¡াস সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া এতদিন শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরূটে লঞ্চ, স্পিডবোট আর ফেরিতে করে নদী পারাপার হলেও এখন সেতু হয়ে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকা আর ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গ যাতায়াত করা যাবে। এ নৌরূটে লঞ্চে পারাপারে ৫০ মিনিট থেকে একঘণ্টা সময় লাগতো।

আর ফেরিতে যানবাহন পারাপারে সময় লাগতো দেড়ঘণ্টার কিছুটা বেশি। নদীর স্রোতের ওপর নির্ভর করে সময় কমবেশি হয়। কখনো কখনো কপাল খারাপ হলে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। নদী পার হতে এক থেকে দেড়ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেতো। ফলে ঢাকায় পৌঁছাতে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হতো। আর সময়মতো ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে না পেরে অনেকের নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এমন উদাহরণের কমতি নেই। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন আর সেই দুর্ভোগ থাকবে না। কাউকে আর মরতেও হবে না। এখন হাসি সবার মুখে মুখে। অপরদিকে ঈদের সময়ের মানুষের কষ্টের তো বর্ণনাতীত! অবশ্য বর্তমান ঈদে তেমনটা হবে না বলে মানুষের খুশির শেষ নেই। অনেক ছাত্রদের ভোগান্তির বর্ণনা তো দেয়া আরো ভয়াবহ। তারা পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেনি।

বাঙালি সাধারণ কোনো অনুষ্ঠানেই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে, সে দেশে পদ্মা সেতুর মতো বড় অর্জনের ক্ষেত্রে উচ্ছ¡াস একটু বেশিই হবে। এটাই বাঙালির রীতি। তবু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সেতুর চেয়ে পদ্মা নদীই বড়। নদীটা শুকাতে বসেছে। ভরা বর্ষায়ও চর জেগে আছে। সে দিকটাও কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যেন পদ্মা সেতু শুকিয়ে যাওয়া একটি মরা নদীর উপর দৃশ্যমান না হয়।