গর্ভবান পুরুষ: ৩৬ বছর পেটের ভিতরে ছিল নিজের যমজ ভাইয়ের ভ্রূণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাসিন্দা সঞ্জু ভগৎ। বয়স এখন ৬০ বছর। প্রায় ৩৬ ধরে বিশাল পেট নিয়ে চলাফেরা করেছেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের মতো ফোলা পেটের কারণেই আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশীদের কাছে তার পরিচয় ছিল ‘গর্ভবতী লোক’ হিসেবে। সবাই মজা করে এই নাম দিলেও পরে জানা যায়, তাদের মজা করে বলা কথাটি সত্য| দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে তার গর্ভে ছিল তারই জমজ ভাইয়ের ভ্রূণ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯৯৯ সালে। তখন হঠাৎ করেই ভগতের পেট ফুলতে শুরু করে। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালানো ভগৎ শারীরিক সমস্যাকে প্রাথমিকভাবে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু একটা সময় পেটের আকার বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছাল যে শ্বাস নিতেও সমস্যা হতে শুরু করল তার। তাই আর দেরি না করে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। সেখানকার চিকিৎসকরা অনুমান করেন, ভগতের পাকস্থলীতে একটি টিউমার রয়েছে যা ক্রমশই বাড়ছে।


সেই মতোই চিকিৎসা শুরু হয়েছিল তার। কিন্তু অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকরা এটাও ভেবেছিলেন, হয়তো ক্যানসার বাসা বেঁধেছে তার দেহে। অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে হতবাক হয়ে যান চিকিৎসকরা। দেখা যায়, যেটাকে তারা টিউমার বলে ভেবেছিলেন, সেটা আসলে আস্ত মানব ভ্রুণ। তার হাত-পা তৈরি হলেও বাকি গঠন সম্পূর্ণ হয়নি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের সময় প্রাথমিকভাবে ভ্রূণটির একটি হাত বেরিয়ে আসে। পরে আরও একটি হাত বেরিয়ে আসে। এরপর আস্তে আস্তে যৌনাঙ্গের কিছু অংশ, চুল, পা ও চোয়ালের হাড়গোড় বেরিয়ে আসতে থাকে। তারা বলেন, আমরা এই ঘটনায় ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এবং বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।

তারা জানিয়েছেন, এই ধরণের ঘটনা খুবই বিরল যেখানে মায়ের গর্ভে একটি ভ্রূণের ভিতরে আরও একটি ভ্রূণ জন্ম নেয়।। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরণের পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘ফিটাস ইন ফিটু’। মাতৃগর্ভে যখন যমজ সন্তান বড় হয়, তখন কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক জটিলতার কারণে একটি ভ্রূণ ঢুকে যায় অন্যটির শরীরে। সেই ভ্রূণটি পূর্ণতা না পেলেও তাকে শরীরে নিয়েই বেড়ে ওঠে অন্য ভ্রূণটি।

এভাবেই যমজ ভাইকে শরীরে নিয়েই জন্ম নিছিলেন ভগৎ। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ৩৬ বছর সেই ভ্রূণ রয়ে গিয়েছিল তার শরীরের ভিতর। তবে অস্ত্রোপচারের পর থেকে সুস্থ আছেন ভগৎ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভগৎ তার শরীর থেকে বের হওয়া যমজ ভাইয়ের দেহ দেখতে চাননি। এমনকি হাড়গোড়, মাংসপিণ্ড, চুলের দিকেও ফিরে তাকাননি।