‘ত্রাণ নয় ব্যতিক্রমী উপহার’ নিয়ে রাতের আঁধারে চাঁদপুরে এক গৃহণীর মহৎকাজে তোলপাড়

গোলাম মোস্তফা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট :

চলমান পরিস্থিতিতে সহযোগিতার নামে “ত্রাণ বিতরণ” নামক ছবির সুট্যিং বা নাটক চলছে সারা দেশব্যাপী। যেখানে নিজে কে ফোকাসে সবাই, তখন চাঁদপুর পৌরসভার ৬নং ওয়াডে বসবাসরত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার ও শ্রমজীবী মানুষগুলোর দরজায় “ত্রাণ নয়” উপহার নিয়ে রাতের আঁধারে হাজির হচ্ছেন এক গৃহিণী। যিনি ওই ওয়ার্ডেরৃৃৃৃৃ বাসিন্দা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর এ বিষয়টি ফুটে ওঠে।

জানা যায়, নাম পরিচয় গোপন রেখে নীরবে নিভৃতে তিনি একাজটি চলমান রেখেছে। কিন্তু শেষ পযন্ত তাঁর পরিচয় জানা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে।

তিনি উক্ত ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উক্ত ওয়াড আওয়ামীলীগের সন্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রাথী মোঃ ছিডু মিজির স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সাথী। চলমান পরিস্থিতিতে নিজের বিবেকের তাড়নায় নিজের সঞ্চিত অর্থ ও স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে গত কদিন যাবত উক্ত ওয়াডে বিশেষ করে বতমানে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পতিত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে নীরবে নিভৃতে একা একা রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে গিয়ে তিনি এ উপহার দিয়ে আসছেন। নগদ অর্থ,বা খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।এ ভাবেই ইতিমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের হাতে এ উপহার তুলে দিয়েছেন।

gif maker

একজন গৃহিণীর এমন চমকপ্রদ মহৎকাজ বিরল দৃষ্টান্ত বলে উপকারভোগী পরিবারগুলো মন্তব্য করেন।

তারা আরো বলেন, উপকার ভোগী পরিবারগুলোর সম্মান বা ইজ্জত নষ্ট যেনো না হয় এবং তারা হাসি মুখে তাঁর এ উপহার যেনো গ্রহণ করেন, এমন গোপনীয়তার মধ্যে পৌছাচ্ছেন, যা সত্যি বিরল ।

তিনি নিজে সরাসরি এলাকায় ঘুরে বিভিন্ন উপায়ে খোঁজ নিয়ে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাতের আঁধারে ও একা একা নিজের হাতে নিয়ে ছুটে যান। নিদিষ্ট পরিবারের ঘরের দরজায় গিয়ে দরজা নক করে অত্যান্ত বিনয়ের সাথে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে পরিবার গুলোর হাতে তা পৌছান। প্লীজ ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সামান্য এ উপহার এনেছি। আপনারা সাময়িক সমস্যায় আছেন তাই “ত্রাণ নয়” বিবেকের তাড়নায় এবং দায়বদ্ধতার থেকে চেষ্টা করেছি।

 আমার অনুরোধ রইলো কারো কাছে বলবেন না, আমিও বলবো না। দোয়া করবেন। ব্যাস এটুকু বলে তিনি চলে আসেন। ইসলামের নিয়মকে অনুসরণ করে গোপনীয়তার মধ্যে এ মহৎ কাজটি করছেন।

উক্ত ওয়াডে ইতিমধ্যে বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও খেটেখাওয়া শ্রমজীবী দেড় শতাধিক পরিবারের মাঝে তাঁর বিতরণকৃত উপহারগুলো ৩টি আইটেমের। অর্থ্যাৎ ১টি হলো খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট আর ২টি খাম ১টি তে ১০০০ টাকা অন্যটিতে ৫০০ টাকা।

খাদ্য সামগ্রী নিয়ে করা প্যাকেটটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। এতে রয়েছে, ৫ কেজি চাল, সয়াবিন তৈল,মশারী ডাল, খেসারী ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, ইফতারী বুট ও লবণ ১কেজি করে, রসুন ও আদা হাফ কেজি করে, দুধের প্যাকেট ২৫০ গ্রাম, চা পাতা ২০০ গ্রাম, বেশন ২৫০ গ্রাম, বনফুল সেমাই ১ পেকেট, সাবান রয়েছে ১ পিচ। এ উপহারগুলো কোন্ পরিবারকে কী দিবেন, খোঁজ নিয়ে তা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েই দেন।

এ প্রশংসীয় কাজটির জন্য প্রশংসা, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ বা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কেউ কেউ ফাতেমা আক্তার সাথীকে নিয়ে নীরবে নিভৃতে মানুষের দুঃসময়ে সত্যিকারের মানব সেবার প্রকৃত উদাহরণ বা বিরল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ফেইসবুক পেইজে স্টাটাস দিয়েছেন।

স্টাটাসগুলোতে লেখার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো : মানবতার কল্যাণে সাথী ভাবি বা আপার এ গোপন মানব সেবাই হলো মানবতার প্রকৃত উদাহরণ।আপনার দেখানো এ মহৎ কাজ অনককে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগাবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার মতো আপনার এ সেবা।

কয়েকজন জেলার ব্যবসা সমৃদ্ধ, কোটিপতি এবং শিল্পপতি, ভিআইপিদের বসবাস এবং জেলার শীর্ষ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সহ গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়াডে গৃহিণী হয়ে ও একাজের কারণে বুজিয়ে দিয়েছেন মন থাকতে সব কিছু সম্ভব। শুধু তাই নয়, এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এতো নীরবে আপনার এ সেবা সত্যি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আপনার একাজ ও আপনাকে স্যালুট ফাতেমা সাথী, আপনি এ সমাজের মানবতার সাথী হয়ে থাকবেন।

এবিষয়ে ফাতেমা সাথীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি, বাহবা, সমাজ সেবক হিসেবে নিজেকে জাহির বা নেতা নেএী হওয়ার জন্য আমি এ কাজ করছি না। তাই প্রচারের দরকার নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিপদের সময়ে পাশে দাড়ানো মানে এ নয় যে আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য। যাদের দিচ্ছি এবং আরো দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে তারা প্রতিবেশী, পাড়া মহল্লাবাসী। সামনে পবিত্র রমজান, এ রমজানে নিজের আত্মীয় স্বজন একে অপরকে ইফতার সামগ্রী দিচ্ছি না? আমার খাদ্যের উপহার পেকেটে ইফতার সামগ্রী রয়েছে। তাই এটি উপহার, “” এান নয়”। ব্যক্তিগত ভাবে আমার এ চেষ্টা, যা অব্যাহত থাকবে। এটা অন্য কারো বা সরকারের অনুদান নয়, যে ত্রাণ বলবো।