সিদ্ধিরগঞ্জে দু’গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : আহত ১১

মো শিপন, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে।

সিদ্ধিরগঞ্জ ৬নং ওয়ার্ডের গোদনাইল এসও রোড মেঘনা ডিপো এলাকায় তেল ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন ও সাবেক কাউন্সিলরের ভায়রা তেল ব্যবসায়ী মিলন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনায় আশরাফ গ্রুপের ৩ জন এবং মিলন গ্রুপের ৬ জন গুলিবিদ্ধ ও ২ জন জখম সহ ১১ জন আহত হয়েছেন।


আহতরা হলেন, আশরাফ গ্রুপের মুন্না, নাঈম এবং অজ্ঞাত একজনের নাম জানা যায়নি। এদিকে মিলন গ্রুপের আহতরা হলেন ফারুক হোসেন বাক্কু, আলাউদ্দিন, নুর হোসেন, মুন্না, নোমান, তারেক, সালাম, সুমন। এদের মধ্যে আশরাফ গ্রুপের দুইজন এবং মিলন গ্রুপের ৬ জন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টরিয়া) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলের লোকজন এসও রোড মেঘনা ডিপো সংলগ্ন এলাকায় অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছিল। এসময় আশরাফ গ্রুপের সদস্য মুন্নাসহ কয়েকজন তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং সিরাজ মন্ডলের নাম ধরে গালমন্দ করে। এতে নোমান ও সালামরা বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয়ে মধ্যে কথাকাটি হয়।

একপর্যায়ে সিরাজ মন্ডলের লোকজনকে মারধর করে আশরাফ গ্রুপের লোকজন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সিরাজ মন্ডলের লোকজন এগিয়ে আসলে আশরাফ গ্রুপ চলে যায় কিন্তু পরক্ষণে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সিরাজ মন্ডলের লোকজনের উপর দ্বিতীয় দফায় হামলা করে। এ সময় সিরাজ মন্ডলের লোকজন প্রতিরোধ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে তাদের মধ্যে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ও র‌্যাব-১১ এর একটি টিম ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগানের দুই রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে এবং উভয় পক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশের এ্যাকশনে সিরাজ মন্ডলের ৬ জন গুলি বিদ্ধ হয়।

আশরাফ উদ্দিন জানান, আমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে অফিসে এবং বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এসময় দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমার অফিসের দরজায় হামলা করে ভিতরে প্রবেশ করে তারা আমাকে না পেয়ে আমার ড্রয়ারে থাকা তেল বিক্রির ২৭ লাখ ৩’শ ৩৬ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। কিছুদিন আগেও তারা আমার একজন স্টাফের উপর হামলা চালিয়ে নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল। ঐ ঘটনায় সিরাজ মন্ডলসহ তার কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

সেই ঘটনার পর থেকেই সিরাজ মন্ডল আমাকে মারার জন্য নানান পরিকল্পনা শুরু করে। সেই ঘটনার সূত্র ধরে ওই মামলার বাদীকে আজ বেধড়ক পিটিয়েছে এবং আরো দুইজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে থানায় ফোন দিলে তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডল জানান, আমার ভায়রা মিলনসহ কয়েকজন লোক ত্রাণ দিচ্ছিলো। সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ দেয়া হয়। বিকালে এসও রোড মেঘনা ডিপো এলাকায় ত্রাণ দেয়ার সময় বিনা কারণে আমার ছেলেদের উপর আশরাফ উদ্দিনের লোকজন হামলা করে। পরে বাধা দিলে তারা দ্বিতীয় দফায় হামলা করে। আমি মনে করি এটা তাদের পরিকল্পিত হামলা।

পরে পুলিশ এসে কিছু না বুঝার আগেই আমার লোকজনের উপর শর্টগান দিয়ে দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে আমার ৬জন লোক গুলিবিদ্ধ হয়। বর্তমানে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, ত্রাণ দেয়ার সময় একটি পক্ষ দুর্ব্যবহার করে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দুই রাউন্ড শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করা হয়। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।