লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলজুড়ে ভাঙন আতঙ্ক

মোঃ হৃদয় হোসেন রায়পুর প্রতিনিধি :

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এর প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা নদী। ঝুঁকিতে রয়েছেন লক্ষ্মীপুরের উপকূলের বাসিন্দারা।

বুধবার (২০ মে) সকাল থেকে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে তীব্র স্রোত ও প্রবল ঢেউ উঠছে। বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একই সঙ্গে রয়েছে ভাঙন আতঙ্ক।

সূত্র জানায়, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে লক্ষ্মীপুরকে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আম্পানের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা নদী। গত দুই-তিন দিনের চেয়ে বুধবার নদীতে পানির উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট বেড়েছে। উপকূলে প্রবল বাতাস বইছে। একইসঙ্গে মেঘনা উত্তাল হয়ে পড়ায় উপকূলে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু খাবার না দেওয়ার অভিযোগে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষগুলো আবার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।

মেঘনা উপকূলীয় এলাকা কমলনগরের মতিরহাট, বাত্তিরখাল ও রামগতি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার মেঘনার পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ফুট বেড়েছিল। এছাড়া রাতভর বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার সকালে মেঘনা আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। পানির উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ৩ ফুট। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলজুড়ে।

দুপুর ১২টার দিকে প্রবল বাতাস ও নদীর পানির ঢেউয়ের আঘাতে রামগতিঘাটে একটি মাছ ধরার নৌকা ভেঙে গেছে।

অন্যদিকে সারাবছরই কমলনগর উপজেলায় মেঘনার তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন অব্যাহত থাকে। এই উপজেলার লুধুয়া, ফলকন, চরকালকিনিসহ মেঘনার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিলীন হয়ে গেছে অনেক বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। প্রতিদিনই ভাঙন আতঙ্কে দিনকাটে এই উপকূলের বাসিন্দাদের।

আম্পানের প্রভাবে মেঘনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এতে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলজুড়ে। এ কারণে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে রাজি হচ্ছেন না উপকূলের বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪০ বছরেও লক্ষ্মীপুরের মেঘনা উপকূলে ভাঙন আতঙ্ক কাটেনি। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা নদী শাসনের কাজ করবেন বলে বরাবর ভোটারদের আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু ভোট শেষ হয়ে গেলে তারা ভুলে যান নদী শাসনের কথা। উপকূলের অসহায় মানুষগুলোর পাশেও দাঁড়ান না প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জনপ্রতিনিধিরা।

কমলনগর উপজেলার লুধুয়া এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেন জানান, মেঘনায় প্রবল স্রোত বইছে। এতে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে প্রবল বেগে বাতাস বইছে।

কিছুক্ষণ সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে, আবার কিছুক্ষণ পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে চাপা আতঙ্ক কাজ করছে উপকূলের মানুষের মাঝে।