চাঁদপুর দুর্গম চরাঞ্চলে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকারী আটক হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার :

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার দুর্গম চরাঞ্চল লক্ষ্মীরচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকারীরা ৩দিনেও আটক হয়নি। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষার নমুনায় চিকিৎসক ধর্ষণের আলামত পেয়েছে না ।

গত রোববার(২১ জুন) ভোররাতে একদল দুর্বৃত্ত জেলে পরিবারের এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। পরে গৃহবধূর স্বামীর গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে একেক করে ছয়জন ধর্ষণ করে। ধর্ষকরা যাবার সময় স্বামীসহ গৃহবধূকে হুমকি দিয়ে যায়। এই ঘটনা কাউকে জানালে গোটা পরিবারকে গুম করবে কোথাও গিয়ে যেন চিকিৎসা না নিতে পারে তার জন্যও অবরুদ্ধ করে রাখা হয় নির্যাতিতা গৃহবধূর পরিবারকে।

জেলার মূল ভূখন্ড থেকে প্রমত্তা মেঘনায় বিচ্ছিন্ন এই চরে টানা কয়েকটি অঘটনের পর সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকলেও এখনো কেউ ধরা পড়েনি। এদিকে অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে নেমেছে র‌্যাব।

চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুজাউদৌলা রুবেল জানান, ধর্ষিতা গৃহবধূর পরীক্ষার নমুনায় আলামত পাওয়া গেছে। তাকে হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁদপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হারুনুর রশিদ জানান, অভিযুক্ত আসামি ফোরকান গাজীর ছেলে ফিরোজ (২২), মো. জাহাঙ্গীরের ছেলে মোস্তফা (২১), সফিক প্রধানিয়ার ছেলে সবুজ (২৪) এবং বুদাই গাজীর ছেলে বাবু (২৩) কে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরো দুজনকেও খোঁজা হচ্ছে।

চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী জানান, চরের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে অস্থায়ী একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় জনবল পাঠাতে পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান নির্দেশ দিয়েছেন। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, র‌্যাবের পক্ষ থেকেও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে।

পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী চাঁদপুর শহরে আশ্রয় নিয়েও তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছে, তারা এবং তাদের লোকজন এখনও হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। যেন এই নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি না করা হয়।

রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীরচর গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামের মেম্বার, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ গাজী রনি দাবি করেন, গৃহবধূর ধর্ষণের ঘটনায় যাদের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তারা কেউ এই মামলার আসামি নয়। এদের একজন সেলিম গাজী তার ছোট ভাই। অন্য দুজন হচ্ছেন রুহুল আমিন ও দেলোয়ার হোসেন। রনি মেম্বারের দাবি,কোনো একটি মহল ভুল ছবি গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছে। এতে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

গত রোববার(২১ জুন) ভোররাতে একদল দুর্বৃত্ত জেলে পরিবারের এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর অবরুদ্ধ করে রাখে। শেষপর্যন্ত সোমবার রাতে কৌশলে চর থেকে পালিয়ে চাঁদপুর শহরে পৌঁছে পরিবারটি। এ সময় সদর মডেল থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলেন তারা। পরে পুলিশের সহযোগিতায় চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিসসেন্টারে নির্যাতিতাকে ভর্তি করা হয়। পরে এই ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো দুজনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা করেন ঘটনার শিকার গৃহবধূ।

স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীরচরে গত কিছু দিন ধরে গাজী ও বকাউল গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং লুটপাট চলছে। এর মধ্যে এই দুই পক্ষের মারামারিতে গাজী বংশের লোকমান হোসেন মারা যান। আর সেই দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিতে গাজী গোষ্ঠীর বখে যাওয়া যুবকরা নিরীহ এই পরিবারের গৃহবধূর ওপর এমন নির্যাতন করেছে।