মনতলা উবি’র প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার প্রশ্ন বাবদ ৩শ টাকা করে উত্তোলনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফরিদগঞ্জের সীমান্তবর্তী মনতলা হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে করোনা কালীন সময়ে প্রায় ৭শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন বাবদ ৩শ টাকা করে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠে। এ টাকা থেকে পরীক্ষার্থীদের মোবাইলে কথা বলার খরচ, ১৫ই আগস্ট পালনের খরচ ও শিক্ষকদের নানা খরচ দাবি করছেন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের চাপে টাকা ম্যানেজ করতে হিমসীমে পড়তে দেখা যায়।

এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জের সাংসদ সাংবাদিক শফিকুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলী রেজা আশ্রাফী ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি তীব্রভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট থেকে ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশীদের রুমে ভিড় জমায়। একের পর এক শিক্ষার্থীরা হাতে পরীক্ষার প্রশ্ন ও কাগজ নিয়ে বাড়ীতে ফিরে যায়।

এ সময় নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার, ১০ম শ্রেনীর ফাতেমা ও জান্নাত এবং ৮ম, ৭ম শ্রেনীর হাবিব, ফয়শালসহ প্রায় ১৫/২০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রশ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে রেখে সব বিষয়ের প্রশ্ন হাতে দিয়ে বলেছেন বাড়ীতে পরীক্ষা দিতে।

এ ধরনের কোন নির্দশনা রয়েছে কিনা জানতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ আলী রেজা আশ্রাফীকে ফোন দিলে তিনি বলেন, বর্তমান করোনা মহামারিতে সরকার বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছে। এসময় পরীক্ষার ফি বাবদ কোন অর্থ উত্তোলন করা অবৈধ ও বেআইনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, করোনার এ সময়ে আমরা প্রায় শিক্ষার্থীদের ফোনে পড়ালেখার খোঁজখবর নেই তার একটা খরচ, প্রশ্ন ও কাগজের খরচ, আসছে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের খরচ, শিক্ষকদের খরচ সব মিলিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাথে সিদ্ধান্তক্রমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ টাকা উত্তলন করেছি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ প্রধান শিক্ষকের এমন হীন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানেন না।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আল আমিন পাটোয়ারি, সদস্য ফয়েজ আহমেদসহ সবাই এমন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি দাবি করে প্রধান শিক্ষকের অর্থ বাণিজের তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান।

প্রধান শিক্ষকের এমন অনিয়মের বিষয়ে ফরিদগঞ্জের সাংসদ সাংবাদিক শফিকুর রহমান বলেন, মনতলা হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে ৪তলা ভবনের কাজ চলমান। আমি যেখানে অনিয়মের কথা শুনবো তার সাথে কোন আপোষ নেই। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলবো।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পদে বসেন হারুন অর রশীদ। সেই সময় তার এ নিয়োগ নিয়ে তুমুল পর্যায় পৌঁছে। তার পর থেকেই তিনি নিজ অবস্থানে টিকে থাকতে পছন্দের লোক নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, শিক্ষক ও দপ্তরী নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ে কোচিং বাণিজ্য, গাইড বই বাণিজ্য, ফরম ফি বাণিজ্য, একক ক্ষমতা বলে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার নামে অর্থ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে পূর্বে থেকে আলোচিত ও সমালোচিত। তার এসব অনিয়মে শিক্ষা অধিদপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।