নারায়ণগঞ্জে আইনজীবীর কক্ষে তরুণী ধর্ষণ, পরে বিয়ের সিদ্ধান্ত

 নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জে এক আইনজীবীর কামরায় ১৮ বছরের একজন তরুণীকে ডেকে এনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ১টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পিছনে এস এম করিম ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইনজীবী কেফায়েত উল্লাহর কামরায় ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আইনজীবীর সহযোগীর (মুহুরি) সহায়তায় তার প্রেমিক ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিক দিদার (২২) ও আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) মুন্নাকে (২৩) পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করেছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন শুক্রবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রিয় সময়কে ধর্ষণ ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃত প্রেমিক দিদার চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার চর ভৈরবী গ্রামের কালু সৈয়ালের পুত্র। মামলার অপর আসামী আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) মুন্না ফতুল্লা থানার কায়েমপুর এলাকার মৃত শরীফ সরদারের পুত্র বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মামলার বরাত দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শফিক জানান, সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন তল্লা বড় মসজিদ এলাকায় বসবাসকারী তরুণীর সাথে অভিযুক্ত দিদারের ফেইসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব হয়। সেই বন্ধুত্বের সূত্র ধরে তারা ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ আদান প্রদানসহ মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা হতো । এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং প্রেমিক দিদার ওই তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ আগস্ট দিদার পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই তরুণীকে বিয়ে করবে বলে আইনজীবী কেফায়েত উল্লাহর কামরায় ডেকে আনে। পরে আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) মুন্নার সহযোগিতায় তাকে ধর্ষণ করে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী বাদি হয়ে ধর্ষণের ঘটনায় সহযোগিতা করার অভিযোগ এনে আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) মুন্না ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে প্রেমিক দিদারকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে লম্পট প্রেমিক দিদার এবং আইনজীবীর সহকারী মুন্নাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা থানা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন সময় নিউজকে জানান, আইনজীবীর সহকারীর সহায়তায় আইনজীবীর কামরায় তরুণীকে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ মামলা হিসেবে আমরা গ্রহণ করি। পরবর্তীতে ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলার দুই আসামী অভিযুক্ত ধর্ষণকারী ও আইনজীবীর সহকারীকে গ্রেফতার করেছি।

এ বিষয়ে আইনজীবী কেফায়েত উল্লাহ’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সময় নিউজকে তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির পিতার শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আদালতের বার ভবনে শোক সভাসহ আনুষ্ঠানিকতায় আমি সেখানে সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। এ কারণে সেদিন ব্যক্তিগত চেম্বারে আমার যাওয়া হয়নি। এই সুযোগে হয়তো আমার সহকারী এই ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় আমি খুবই দুঃখিত।

তিনি বলেন, আজ তরুণী ধর্ষণের মামলার বিষয়টি জানতে পেরে এই অপরাধে সহযোগিতার শাস্তিস্বরূপ আমার সহকারী মুন্নাকে বহিস্কার করেছি। আজ ওই প্রেমিক প্রেমিকা উভয়ের অভিভাবকরা আমার কাছে এসেছিল। তাদের সাথে কথা বলেছি। উভয়পক্ষ বিয়ের ব্যাপারে সম্মত হয়ে আপোষ মীমাংসা করতে রাজি হয়েছেন। পরে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি অবগত করে পরামর্শ করেছি। ভুক্তভোগী মেয়েটির যাতে একটা সুরাহা হয় সে ব্যাপারে আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। রোববার (২২ আগস্ট) কোর্ট খুললে দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে আদালতের মাধ্যমে ধর্মীয়, আইনগত ও সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী দুইজনের বিবাহ সম্পন্ন করার ব্যাপারে এই আইনজীবী আশা প্রকাশ করেন।

প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ, ০৬ ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ০১ মুহররম ১৪৪২ হিজরি, শুক্রবার