চাঁদপুর-ঢাকা রুটে লঞ্চ যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

কবির হোসেন মিজি :

চাঁদপুর-ঢাকা নৌ-পথে লঞ্চে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কাছে নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। আগে যেখানে চাঁদপুর থেকে ঢাকা যেতে তৃতীয় শ্রেণীর টিকেট কাটা হতো ১,শ টাকা করে এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকেট কাটা হত ১,শ ৫০ টাকা করে।

কিন্তু লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ পূর্বের সে ভারা বাড়িয়ে দিয়ে এখন যাত্রীদের কাছ থেকে তৃতীয় শ্রেণীর টিকেট কাটা হচ্ছে ১,শ ১৫ টাকা এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকেট বাবদ কাটা হচ্ছে ১,শ ৮০ টাকা করে ।

আর লঞ্চে যাতায়াত করতে গিয়ে টিকিট কাটার সময় যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। লঞ্চের স্টাফরা যখন নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া কাটছেন তখন তা নিয়ে যাত্রী এবং তাদের মাঝে অনেক বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয় এবং হয়ে আসছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত চাঁদপুর লঞ্চ মালিক সমিতি কতৃপক্ষ ঢাকা টু চাঁদপুর রুটে যারা প্রতিদিন যাতায়াত করছেন তাদের কাছ থেকে পূর্বের নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এ নিয়ে প্রতিদিনই লঞ্চের স্টাফ এবং যাত্রীদের সাথে অনেক ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে চলেছে।

গত কয়েকদিন ধরে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে গিয়ে ঢাকা এবং চাঁদপুরে যাতায়াতকারী বিভিন্ন লঞ্চে আগত এবং ঢাকা পথের যাত্রী মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ হাসান বেপারী, মানিক মিয়া, তানিয়া বেগম, নয়ন, জহিরুল, তাপস ঘোষ, মানিক চন্দ্র, রোকিয়া বেগম সহ একাধিক যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন আমরা এই নদীপথে প্রতিনিয়তই ঢাকা থেকে চাঁদপুর যাতায়াত করে থাকি কিংবা চাঁদপুর থেকে ঢাকা যাই। কিন্তু আমরা গত বছরগুলোতে ১০০ টাকা এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাড়া দেড়শ টাকা করে দিয়ে আসছি। কিন্তু চাঁদপুর লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ এবার পবিত্র ঈদ-উল-আযহা থেকে কোন নির্দেশনা ছাড়াই আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তারা যেখানে আগে ১০০ টাকা ভাড়া নিতেন তা বাড়িয়ে দিয়ে এখন ১১৫ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর যেখানে দেড়শ টাকা ভাড়া আদায় করা হতো, এখন তারা তা বাড়িয়ে দিয়ে ১৮০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। এতে করে আমরা লঞ্চে যাতায়াত করতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছি।

আমরা টিকেট কাটতে গিয়ে এ নিয়ে লঞ্চের স্টাফদের সাথে অনেক ঝগড়াঝাটি সৃষ্টি হয়। সরকারের নির্দেশনা ছাড়া কিংবা পূর্ব কোন ম ঘোষণা ছাড়াই এভাবে আমাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা তা একেবারেই অনিয়ম। এ ছাড়া কোন কোন লঞ্চের স্টাফরা আমাদের সাথে অনেক খারাপ আচরণ করে থাকেন।

কিন্তু লঞ্চযাত্রীদের এমন অভিযোগ থাকলেও লঞ্চ সুপার ভাইজাররা বলছেন, লঞ্চের যাত্রীদের কাছে কোন প্রকার বাড়তি আদায় করা হয়নি। সরকারি তালিকা অনুযায়ী ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ।

চাঁদপুর লঞ্চ মালিক সমিতির সুপারভাইজার মোঃ রুহুল আমিন, ইউসুফ বেপারী ও আলী আজগর সহ বেশ কয়েকজন লঞ্চ প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ বি আই ডব্লিউ টি অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী পূর্বের তালিকা অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সরকারি তালিকায় তৃতীয় শ্রেণীর ভাড়া হচ্ছে ১১৬ টাকা আমরা সেখানে ভাড়া কাটছি ১১৫ টাকা। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাড়া যেখানে তালিকায় আছে ১৮৬ টাকা সেখানে ভাড়া কাটা হচ্ছে ১৮০ টাকা। তারা জানান দেশের করোনা পরিস্থিতিতে যখন বিভিন্ন যানবাহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সেই হিসাবে লঞ্চে যাত্রী কম হওয়ার কারণে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ তে লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন।

কিন্তু বিআইডব্লিউটি ভাড়া না বাড়িয়ে সরকারি তালিকা অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করার জন্য নির্দেশ দেন। আমরা সে অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছি। তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর ছাড়া কেবিন সহ অন্যান্য শ্রেণীগুলো ভাড়া সেই পূর্বের রেডেই কাটা হচ্ছে।

এই বিষয়ে চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক কায়সারুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনিও একই কথা জানান। তিনি বলেন করুণা কালীন সময়ে লঞ্চের যাত্রী কম হওয়ার কারণে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু বিআইডব্লিউটি ভাড়া না বাড়ানোর নির্দেশনা না দিয়ে সরকারি তালিকা অনুযায়ী পার কিলোমিটার হিসেবে যে ভাড়া আসে সে তালিকা অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করার নির্দেশনা দেন। আগে যেহেতু তালিকার চেয়েও কম ভাড়া কাটা হত এজন্য এক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রীরা মনে করছেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন আসলে বিষয়টি এমন নয়।