শিশুসন্তান জানাল ‘মাকে হত্যা করেছে বাবা’

নীলফামারীর সংগলশী ইউনিয়নের শিমুলতলীতে মারা যাওয়া রোজিনা আকতারকে (২৫) হত্যা করেছে স্বামী ইউনুস আলী (৩৮)। হত্যাকাণ্ডের চার মাস পর এ রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ওই নারীকে গলা টিপে হত্যা করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছিলেন স্বামী ইউনুস। পুলিশ এবং আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ঘটনার সময় ঘরে থাকা পাঁচ বছর বয়সী শিশু মারিয়া।

রোজিনা সৈয়দপুর উপজেলা উপজেলা শহরের ঢেলাপীড় উত্তরা আবাসন এলাকার দুলাল হোসেনের মেয়ে।

২০১৬ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে রোজিনাকে বিয়ে করেন ইউনুস। তারা শিমুলতলী এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ইউনুস আলী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাদিখোল এলাকার মৃত নাজির উদ্দিনের ছেলে।

নীলফামারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদ-উন-নবী জানান, ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর শিমুলতলীর ভাড়া বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘরে দশ মাস বয়সী আয়েশা সিদ্দিকা ও পাঁচ বছর বয়সী মারিয়া অবস্থান করছিল। একই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ইউনুসের শ্যালক রাকিবুল ও তার স্ত্রী সিমরান।

ঘটনার দিন শ্যালক ও তার স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় পারিবারিক কলহের জের ধরে গলাটিপে হত্যা করে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন ইউনুস।

এ সময় পাঁচ বছর বয়সী মারিয়াকে ভয় ভীতি দেখিয়ে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় হত্যাকারী।

এ ঘটনায় সৈয়দপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা হলেও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট আসায় রোজিনার বাবা নীলফামারী থানায় মামলা করেন গত ২৩ মার্চ।

মামলার করা পর জেলা পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় নীলফামারী থানার চৌকস একটি টিম রহস্য উদঘাটন শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘটনার সময় ঘরে থাকা পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে মারিয়া পুলিশের কাছে সে দিনের ঘটনার খুলে বলে।

নীলফামারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রউপ বলেন, ইউনুসের প্রথম স্ত্রী রয়েছেন। এরইমধ্যে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন রোজিনাকে। পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো তাদের। ঘটনার দিন স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল।

তিনি বলেন, স্ত্রীকে হত্যা করে ঘরে শিশুকে রেখে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বাহিরে যায় সে। পথিমধ্যে শ্যালক ও তার স্ত্রীকে জানায় রোজিনা ঘুমিয়েছে পরে বাড়িতে ফিরে ডাকাডাকি শুরু করে এবং সিলিং ফ্যানে লাশ ঝুলছে বলে শ্যালককে জানায়।

এমন পরিস্থিতিতে ঘরে ঢুকে লাশ নামায় রোজিনার ভাই রাকিবুল। পরে সৈয়দপুর হাসপাতালে নেয় তাকে। সেখান থেকে সৈয়দপুর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে।

ওসি আরো বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে ঘটনার সময় ঘরে থাকা পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে মারিয়া পুলিশের কাছে মাকে হত্যার চিত্র তুলে ধরে এবং আদালতে জবানবন্দি দেয়। এ ঘটনায় ইউনুসকে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয় এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।

আদালতের নির্দেশে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।