তরুণীকে হত্যার পর ড্রামে ভরে ডোবায় ফেলেন কনস্টেবল

রাজশাহীতে ডোবায় পড়ে থাকা একটি ড্রামের ভেতর থেকে মানুষের পায়ের কয়েকটি আঙুল বের হয়ে ছিল। এটি দেখে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন এক পথচারী। ঘটনার তিন দিন পর ওই তরুণীর পরিচয় পাওয়া গেছে।

রাজশাহীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তরুণীর পরিচয়সহ এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। একইসঙ্গে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নিহত ওই তরুণীর নাম ননিকা রাণী রায় (২৪)। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুরে। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে সদ্য অধ্যয়ন সমাপ্ত করে একটি ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নগরের পাঠানপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন ননিকা। রোববার (১৮ এপ্রিল) ভোরে ওই তরুণীর মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, রোববার ভোরে পিবিআই সদস্যরা ওই তরুণীকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করে। তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। নারী কেলেঙ্কারির কারণে তিনি বরখাস্ত হয়েছিলেন। তার বাড়ি পাবনার আতইকুল্লা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামে। তিনি বর্তমানে রেল পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত।

পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িত আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

গ্রেফতার নিমাইয়ের সহযোগীরা হলেন- নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়ার কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাস চালক নগরীর বিলশিমলা এলাকার আব্দুর রহমান (২৫)।

পিবিআই জানায়, নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ওই তরুণীকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়িটি জিআরপির কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র গত ৬ এপ্রিল ভাড়া নেয়। তার স্ত্রীও পুলিশ কনস্টেবল। তিনি বগুড়ায় কর্মরত। রোববার বিকেলে পিবিআই সদস্যরা ওই বাড়িতে তদন্তে যায়।

পিবিআই আরও জানায়, কনস্টেবল নিমাই হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন ৬/৭ বছর ধরে ননিকা রাণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়। সম্প্রতি ননিকা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এ কারণে তাকে হত্যার পর ড্রামে লাশ ভরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, নিমাই চন্দ্র গত সাত বছর ধরে রাজশাহী জিআরপি থানায় কর্মরত। এর আগে তিনি মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় চাকরি করার সময় কাজিরহাটা অফিসের পাশের বাড়ির এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ভিডিও করে। ভিডিওটি কম্পিউটারের দোকান থেকে মানুষের হাতে হাতে চলে যায়। তখন তাকে বরখাস্ত হয়। পরবর্তীতে নানা কৌশলে চাকরি ফিরে পেয়ে রেল পুলিশে যোগ দেন তিনি।

গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) নগরীর বাইপাস সড়কের সিটি হাটের পাশে একটি ডোবায় ড্রামের মধ্যে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে শাহমখদুম থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। মরদেহ উদ্ধারের সময় ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় শাহমখদুম থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। পরে তারা পৃথকভাবে তদন্ত শুরু করে।