ঠাকুরগাঁয়ে পরকীয়ার জেরে মায়ের হাতে শিশু সন্তান খুন

এ.এস.এম.শিশির, করেসপন্ডেন্ট :

ঠাকুরগাঁও সদর থানার দেওগাঁও চেড়াডাঙ্গী গ্রামে পরকীয়ার জেরে আমির হামজা আরাফ (০৬) নামে এক শিশুকে হত্যা করেছে তার মা। এ ঘটনায় সোমবার মোছা. জান্নাতা আক্তার নামের ওই নারী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় শিশু আরাফকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশ।পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পরে আরাফের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য সুরতহাল প্রস্তুতকারী অফিসার এসআই পিযুস চন্দ্র সরকারসহ একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তদন্ত টিম আরাফের বাবা খলিলুর রহমানকে তার ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে তার স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পরামর্শ প্রদান করেন।পরামর্শ মোতাবেক খলিলুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ধারণা করেন যে, তার স্ত্রী আরাফকে সুকৌশলে হত্যা করেছে। উক্ত হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য তার স্ত্রী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।

পরে অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদন্ত টিম জান্নাতা আক্তারকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জান্নাতা তার ছেলে আরাফকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।

জান্নাতা জানান, তার স্বামী খলিলুর রহমানের সাথে ঢাকায় বসবাস করার সময় একই ফ্ল্যাটের ইমরান নামে এক অবিবাহিত ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে উভয়ের মধ্যে ভালবাসা এবং শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এর মধ্যে গত ২ মাস আগে লকডাউনের কারণে স্ত্রী ও সন্তানদের ঠাকুরগাঁওয়ের দেওগাঁও চেড়াডাঙ্গী গ্রামে শশুরবাড়িতে রেখে যান খলিলুর রহমান।

এদিকে, ইমরান জান্নাতা আক্তারকে বিয়ে করার জন্য মোবাইল ফোনে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। দুই সন্তান ও স্বামীকে ছেড়ে ইমরানকে বিয়ে করা নিয়ে জান্নাতা মানসিক সমস্যা ভুগছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আরাফ তার নানার ঘরে দুষ্টামি করছিল, যা জান্নাতা আক্তার সহ্য করতে পারেনি। একপর্যায়ে তার ছেলে আরাফকে বিছানার উপর থেকে ফেলে দিয়ে মাথা চেপে ধরে গলার দুই পাশ থেকে গামছা পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় আসামি মোছা. জান্নাতা আক্তার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সদর থানার একটি চৌকস টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার কারণে এমন একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উম্মোচন হলো। আসামিকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।