কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতায় অস্থির সমাজ

সম্পাদকীয় …
অপরাধের জন্যে সংগঠিত হওয়া যে কোনো দলই দেশ ও সমাজের জন্যে ভয়াবহ! বড় ক্ষতিকর ভবিষ্যতের জন্যে অনাকাক্সিক্ষত সৃষ্টি। দিনের পর দিন এদের দ্বারা সমূহ ক্ষতি হয়ে থাকে। আর এদের প্রতিরোধ করাটাও বড় কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই অঙ্করেই যদি থামিয়ে দেয়া না যায় তাহলে ওদের দ্বারা বড় ক্ষতির শিকার হতে হয় দেশ ও সমাজকে।

প্রিয় সময়ে ‘চাঁদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ৪০ সদস্য আটক’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি বড় একটি দুর্ধর্ষ সংগঠনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। আশার কথা যে, এই আটকের মাধ্যমে তাদের এখনই থামিয়ে দেয়া যেতে পারে। আমরা অতীতে শুনেছি, চাঁদপুর শহর ও শহরতলীতে কিশোরদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়েই চলছিলো। তাদের অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিলো ঊর্ধ্বগতিতে। শহর ও শহরতলীর মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিলো। আর তাই চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৪০ সদস্যকে আটক করায় অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে মানুষের মধ্যে। আমরা সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি, বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশ বিশেষ সাড়াশি অভিযান চালানোর মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে।

এই কিশোর গ্যাং বিভিন্ন সময়ে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলো। তাদের কর্মকাণ্ডের জন্যে থানায় মামলাও হয়েছে। আমরা জেনেছি, বখাটে প্রেমিকের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়াতে এক মেয়ের উপর চড়াও হয়েছে ও তার সাথে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে মারধর, টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করাসহ তাকে অপহরণেরও চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে অবশ্য চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ঐ শিক্ষার্থীর একটি মামলা দায়ের করেছে।

এসব কিশোররা শহরের গাছতলা ব্রীজ এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এলাকাতেও তাদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। আর মুখার্জি ঘাটে তারা দীর্ঘসময় আড্ডা জমায়। এসব জায়গায় কিশোররা বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে। পুলিশের নজরে এসব অনিয়ম ধরা পড়ায় এই অভিযান চালানো হয়। ফলে কিশোর গ্যাং সন্দেহে বিভিন্ন বয়সের ৪০ জনকে কিশো- যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে কিছু যুবককে তাদের অভিভাবকদের ডেকে মুসলেকা দিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। বাকীদের বিরুদ্ধে থানায় পূর্ব থেকে বিভিন্ন অপরাধে মামলা ও অভিযোগ থাকায় আটক রাখা হয়েছে।

আমরা জেনেছি যে, চাঁদপুর সদর মডেল থানা এ ধরনের কিশোর গ্যাং দমনের অভিযান অব্যাহত রাখবে। অবশ্য এর মাধ্যমে শহর ও শহরতলীতে শান্তি ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি।

আমাদের মতে, এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বয়স ১৫ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। উঠতি বয়সী এসব কিশোররা মা বাবার অবাধ্য হয়ে থাকে। অনেকটা স্বাধীনচেতা। গুরুজনদের তারা কোনোভাবেই মানতে চায় না। কোনো সুশিক্ষায় তারা কর্ণপাত করে না। অথবা মা বাবারও কোনো চিন্তা নেই এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে। ফলে তারা মানসিকভাবে স্বাধীন হয়ে যায় ও ইচ্ছামতো তারা চলে। পারিবারিক সচেতনতা ও সুশিক্ষার অভাবে তারা সুন্দর জীবনের আনন্দ হারিয়ে ফেলে। আর তারা অপরাধ জগতের বাসিন্দা হয়ে যায় ও নিজেদের জীবনকে নষ্ট করে ফেলে। আমাদের বিশ^াস, এই ৪০ জনকে আটকের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে তাদের মা বাবাদের মধ্যে। সেই সাথে এসব কিশোররাও সঠিক পথে ফিরবে বলে মনে করি। আমাদের বিশ^াস, আমাদের এই নতুন প্রজন্ম সুন্দর জীবনে ফিরে আসবে।