ডাক্তাররা কেনো ডাকাত হতে যাবেন!

সম্পাদকীয়

দু’চোখ মেলে ধরলেই স্পষ্ট হয় যে, মানবতা ভুলুণ্ঠিত হতে চলেছে। মানবতা ভুলুণ্ঠিত হলে লজ্জা তখন থাকে। আর লজ্জা না থাকলে মানুষের মনুষ্যত্বে ভাটা পরে। প্রিয় সময়ে প্রকাশিত ‘চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যে কোণঠাসা রোগীরা’ শিরোনামে সংবাদটি সেই প্রমাণই দিচ্ছে আমাদের সম্মুখে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। খেটে খাওয়া মানুষদের করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন এহেন ডাক্তারদের কবলে পড়ে যায়। ওদের হাত থেকে ধনী গরীব কেউ রক্ষা পায় না। বাঙালিরা বাঁশের কেল্লা দিয়ে পিটিয়ে ইংরেজদের তাড়িয়ে ছিলো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ওদের জন্যেও সে রকম দরকার আছে।

আমরা জানি, ডাক্তারি যারা করে তারা অনেক ধনী হয়। তাদের বেতনও বেশি। তবুও তারা আরো বেশি আয় করতে চায়। আরো লোভ তাদের ঝেঁকে বসে মনের মধ্যে। সে কারণে তাদের লোভাতুর আচরণের প্রতিফলন এভাবেই প্রকাশিত হয়ে যায়। তবুও তাদের লজ্জা বলতে কিছু আছে বলে মনে হয় না।

বর্তমানে মধ্যবিত্ত ও গরীবদের অবস্থা খুবই খারাপ। তারা সংসারের আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসাব করতে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের জীবনে কোনো রকমে চলছে। হয়তো সংসারের পেটের ক্ষিধে মেটাতে পরিবারের আয়ক্ষম সকলকেই কাজ করতে হয়। ঐ অবস্থায় কেউ অসুস্থ হলে সে আয় করতে পারে না। সুতরাং আয় কমে যায়। উপরন্তু অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা করাতে যেতে হয় আরো ২ জনকে অথবা তারও বেশি মানুষকে। সেক্ষেত্রে তাদের আয় করার সুযোগ থাকে না। বরং অর্থনৈতিকভাবে তারা আরো ডুবে যায়।

আমরা মনে করি, এ জাতীয় অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্যে ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টদের সহানুভূতি অবশ্যই থাকা উচিত। কিন্তু কোনোভাবেই প্রেসার দেয়া অমানবিক। আমরা প্রকাশিত সংবাদে দেখেছি, ‘চিকিৎসকদের ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা না করালে রির্পোট দেখতে নারাজ: রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার : বাধ্য হয়ে পুনরায় পছন্দের ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা রোগীদের’-এটা অবশ্যই অমানবিক আচরণ বৈকি। এই আচরণের পিছনে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। ডাক্তাররা মানুষের সেবায় নিয়োজিত, এটি একটি সেবামূলক কর্মকাণ্ড। এটা করতে গিয়ে ‘–হাসপাতালের চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যে কোণঠাসা হচ্ছেন রোগীরা’-এমন শব্দ ভালো লাগার কথা নয়। রোগীদের জিম্মি করা কতটা অমানবিকতার মধ্যে পড়ে!

ডাক্তার নামক ডাকাতদের কৌশল দেখলে অবাকই হতে হয়; তারা প্রত্যেক রোগীদের পরীক্ষা লিখে দেয়া প্রেসক্রিপশনে (টিকিটে) কমিশনের জন্য চিকিৎসকদের নিজস্ব সিল সাক্ষর দেয়া থাকে। আর সেই সাক্ষর এবং নিজস্ব সিল দেয়ার অর্থই হচ্ছে বাহিরের যেসব প্রাইভেট ডায়াগনস্টিগকে পরীক্ষা করাবে সেই ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ ওই চিকিৎসকের জন্য আলাদা ভাবে কমিশন রেখে দিবে। এভাবেই নিরবে চলে আসছে কিছু ভদ্রবেশি চিকিৎসকদের টিকিট কমিশন বানিজ্য। এই কমিশন বাণিজ্যের কারণে রোগীরা অসহায় হয়ে পড়েন। আর অসহায় রোগীরা একজন চিকিৎসককে দেবতা ভেবে এমন নিরব প্রতারণার কিছুই বুঝতে পারেন না। তাছাড়া প্রকাশিত সংবাদে আমরা দেখেছি কিভাবে রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে!

এটা বড়ই আশ্চর্যজনক বিষয়। ‘একজন রোগী যেখানে ৫,শ টাকায় যে পরীক্ষাটি করানোর কথা। সেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোও চিকিৎসকদের কমিশন রাখতে নিরূপায় হয়েই রোগীদের কাছ থেকে নিদ্দিষ্ট মূল্যের চেয়ে কিছুটা মুল্য বাড়িয়ে রাখছেন। এতে করে আর্থিক সংকট এবং চিকিৎসকদের কাছে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।’ এখানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা। তাদের এই চালাকি চতুর রোগীদের কাছে ধরা পড়ে। তাই চতুর রোগীদের সাথে তারা খারাপ আচরণ করে থাকেন।

সত্যিই অসহায় রোগীরা অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছেন দিনের পর দিন। সেই সাথে তাদের পকেট থেকে পরিশ্রমের টাকাও চলে যাচ্ছে অন্যায়ভাবে। এমন সুবিধাভোগী, মুনাফা লোভী, অসাধু চিকিৎসকদের হাত থেকে রেহাই পেতে চাঁদপুর স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। আর আমরাও মনে করি, দ্রæত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।