দিনারপুর কলেজের ভবন ও ভূমিদাতা পরিবার চরম অবমূল্যায়ন ও অবহেলার শিকার

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :
নবীগঞ্জের দিনারপুর কলেজে ভবন ও ভুমিদাতা পরিবার অবমূল্যায়নের শিকারের খবর পাওয়া গেছে। এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে বইছে ক্ষোভ ও নানান সমালোচনার ঝড়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর পূর্বে দিনারপুর কলেজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হয়। কিন্তু তহবিল না থাকাসহ নানা জটিলতার কারণে কলেজটি যখন বন্ধ ছিল এ অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর কলেজের ভুমিটি পরিত্যক্ত ছিল। একপর্যায়ে গাবদেব গ্রামের দানশীল ব্যক্তি আব্দুর রউফ চৌধুরী সুরুজ মিয়াসহ অরো কয়েকজন ভুমিদাতারা তাদের ভূমি ফেরত চাইলে ৩ মাসের মধ্যে কলেজ বাস্তবায়ন কমিটি ভবন নির্মানের প্রতিশ্রতি দেয়।

gif maker

এমতাবস্থায় ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কলেজের মূল ভবনটি নির্মান করে দেন লন্ডন প্রবাসী সমাজসেবক আবুল কাশেম চৌধুরী। এরপর থেকেই বিভিন্ন ভাবে অবমূল্যায়নের শিকার হতে থাকেন ‘ভবন ও ভুমিদাতা’ পরিবার গুলো। গত রবিবার কলেজের সম্প্রসারিত ভবনের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি। ওই অনুষ্ঠানেও ‘ভবন ও ভুমিদাতা’ পরিবারের সদস্যদের দাওয়াত করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে বইছে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অন্যতম ভুমিদাতা মৃত হাজী আব্দুস সামাদের পুত্র লন্ডন প্রবাসী জামাল আহমেদ হবিগঞ্জের খবর কে জানান, চরম অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছেন তারা। কলেজের ভাল-মন্দ কোন বিষয়েই তাদেরকে জানানো হয় না। এমনকি শিক্ষামন্ত্রীর অনুষ্ঠানেও তাদের পরিবারের কাউকে দাওয়াত করা হয়নি। বিষয়টি তাদের চরমভাবে ব্যথিত করেছে।
অপর ভুমিদাতা আব্দুর রউফ চৌধুরী সুরুজ মিয়ার পুত্র জালাল চৌধুরী ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে জানান, কলেজের ভবন দাতাদের নামফলক থাকলেও ভুমিদাতা হিসেবে তার পিতার কোন নামফলক নেই। শুধুমাত্র প্রিন্সিপালের কক্ষে দায়সারা ভাবে একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো আছে। তাও পড়ে আছে অবহেলায়। শুধু তাই নয়, নামটিও অশুদ্ধভাবে লিখে রাখা হয়েছে। এতেই বুঝা যায় ভুমিদাতাদের প্রতি কতটা উদাসীন তারা।
gif maker
কলেজের মূল ভবনদাতা লন্ডন প্রবাসী সমাজসেবক আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কলেজের কঠিন দুঃসময়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল এলাকায় উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘঠুক। কিন্তু আমাদের চরমভাবে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। অন্য দুটি ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও আজও পর্যন্ত আমার দেয়া মূল ভবনটির কোন আনুষ্ঠানিকতাই হয়নি। এমনকি শিক্ষামন্ত্রীর অনুষ্ঠানে নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করতেও নির্লজ্জ কৃপণতা দেখানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যদিও নাম আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু তারপরও অবমূল্যায়ন আর উদাসীনতার সংস্কৃতি চর্চা হলে ভবিষ্যতে মানুষ সামাজিক কর্মকান্ডে চরমভাবে নিরুৎসাহিত হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও সমাজ।’
তিনি আরো বলেন, ‘দিন আনে দিন খায় এমন মানুষও সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করে কলেজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অথচ সেইসব সাধারণ মানুষকেও আজ অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতন মানুষসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সর্বস্থরের এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।’
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘ভবন ও ভুমিদাতা পরিবারের প্রতি অসম্মান ও অবমূল্যায়নের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। ভবন ও ভুমি দিয়ে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। কলেজের একজন অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি বিষয়টির প্রতিকার দাবি করেছেন।
http://picasion.com/
এই বিষয়ে বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন, ‘অবমূল্যায়ন করার কোন প্রশ্নই আসে না। এমন মানষিকতা আমরা লালন করি না। তবে হয়তো মনের অজান্তে কোথাও খানিকটা দূরত্ব তৈরি হয়ে থাকতে পারে। এমনটি হয়ে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক। আমরা নিশ্চয়ই এ দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করব।